একই সাথে কোভিড-১৯ এবং ফ্লু আক্রান্ত হওয়া সম্ভব ?
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে আবারও করোনাভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘন্টায় রেকর্ড সংখ্যক ২ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন।
সেইসাথে এগিয়ে আসছে সংক্রামক ফ্লু এর সময়ও৷ তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এসময় ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক কম। কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থার কারণেই এমনটা হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে শুধু একারণেই দ্বৈত মহামারির আশঙ্কা নেই এমনও নয়। ফ্লু সংক্রমণ সাধারণত ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকট আকার ধারণ করে। এরফলে করোনাভাইরাস মহামারির সাথে ফ্লু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ারও সমূহ আশঙ্কা আছে এখনো। একই সাথে করোনাভাইরাস মহামারি ও ফ্লুয়ের প্রাদুর্ভাবের কারণে ভঙ্গুর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা আরও চাপে পড়তে পারে বলেও সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেক মানুষই এক সপ্তাহ বা মাসের ব্যবধানে কোভিড-১৯ এবং ফ্লু আক্রান্ত হতে পারে। অনেকে আবার একই সময়েই আক্রান্ত হতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও চীনে ইতোমধ্যেই বেশ কিছুসংখ্যক মানুষ একই সাথে কোভিড-১৯ এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত হয়েছেন। দুই ধরনের ভাইরাস একই সাথে দেহে সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষেত্রে কিরূপ ভূমিকা রাখে তা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে দুই ধরণের ভাইরাসের সরাসরি সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরাই তুলনামূলক অধিক ঝুঁকিতে থাকেন।
কীভাবে কেউ একই সাথে দুই ধরনের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন?
করোনাভাইরাস এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস মান দেহে আলাদা অংশে সংক্রমণ ঘটায়। একারণে দেহ কোষে সংক্রমণের ক্ষেত্রে একটি ভাইরাসের ফলে আরেকটি প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
স্টানফোর্ড হেলথ কেয়ারের সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ ডিন উইনস্লোর মতে, ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের ক্ষেত্রে একটি ভাইরাল সংক্রমণ দ্বিতীয় কোনো সংক্রমণকে রোধ করে এমন প্রমাণও মিলেছে। তবে এই সম্ভাবনাও খুবই ক্ষীণ বলেও জানান উইনস্লো। একারণে অনেকেই একাধিক সংক্রমণ এড়িয়ে যেতে পারলেও বাকিদের ঝুঁকি থেকেই যায়।
একই সময়ে সংক্রমণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
অ্যারিজোনার টাকসনে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ম্যাথিও হেইনজ জানান, তিনি ইতোপূর্বেও একই সাথে অন্যান্য করোনাভাইরাস এবং ফ্লু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করেছেন। 'এধরণের রোগীদের শারীরিক জটিলতাও বেশি হয়, সেরে উঠতেও বেশি সময় লাগে।' বলেন তিনি।
এটি কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রেও এভাবেই কাজ করে।যুক্তরাজ্যের এক গবেষণায় দেখা গেছে, একই সাথে দুইটি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত ব্যক্তিরা সাধারণত অধিক ঝুঁকিতে থাকেন। শুধু কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের তুলনায় এদের মৃত্যু ঝুঁকিও দ্বিগুণ বেশি থাকে। তাদের ভেন্টিলেটর এবং আইসিউ'র প্রয়োজন হবে এ আশঙ্কাও বেশি। চীন এবং ইরানের গবেষকরাও তাদের গবেষণায় একই ধরনের ফলাফল পেয়েছেন।
ইনফ্লুয়েঞ্জাও দেহে কোভিড-১৯ এর মতো জটিলতা সৃষ্টি করে। উভয় ক্ষেত্রেই ফুসফুসের জটিলতা দেখা যায়, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে আসে। দুই ধরনের সংক্রমণের ক্ষেত্রেই বয়স্ক এবং ক্যান্সার, ফুসফুস জটিলতা ও স্থুলতার মতো শারীরিক জটিলতা থাকা রোগীদের ঝুঁকি বেশি।
ইয়েল মেডিসিন ইনফেকশাস ডিজিজের চিকিৎসক অন্যেমা অগবুয়াগু জানান, অধিক ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী যদি একইসাথে দুইটি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন, তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এতে আরও বেড়ে যায়।
উভয় সংক্রমণের ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
অন্যেমা অগবুয়াগুর মতে, ভাইরাল সংক্রমণের ক্ষেত্রে দেহে সাধারণ এবং সুনির্দিষ্ট - দুই ধরণের প্রতিরোধ ব্যবস্থাই কাজ করে। সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিছুক্ষেত্রে অন্য ভাইরাল সংক্রমণের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতে পারে।
এব্যাপারে অগবুয়াগু জানান 'রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কাজ করা শুরু করলেই দ্বিতীয় সংক্রমণের গুরুতর প্রভাব রোধেও তা ভূমিকা রাখতে পারে।'
তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেকেরই সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কাজ নাও করতে পারে, সেক্ষেত্রে দুটি ভাইরাসের জন্য নির্দিষ্ট রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাও অন্য সংক্রমণ রোধে কার্যকর হবেনা।
এব্যাপারে ম্যাথিউ হেইনজ জানান, 'দেহে একটি সংক্রমণের জন্য উজ্জীবিত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অন্যটির প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারেনা। একারণে একইসাথে দুইটি ভাইরাস মোকাবেলায় সাধারণ প্রতিরোধ ব্যবস্থার দরকার হয়। একইসাথে দুটি গুরুতর ফুসফুসের রোগের বিরুদ্ধে কাজ করাও দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য বেশ কঠিন।'
এই দুইটি সংক্রমণের ক্ষেত্রেই উপসর্গ দেখে ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে, একইসাথে সংক্রমিত হলে এড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। কোভিড-১৯ এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসা পদ্ধতিও একেবারে আলাদা। একারণেই সুরক্ষিত থাকতে এসময় উভয় রোগের টেস্ট করানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা।
সূত্র : হাফপোস্ট