কমলায় রাঙা রাঙামাটি
রাঙামাটির নানিয়াচরে এ বছর কমলার ব্যাপক ফলন হয়েছে। এবারের কমলা আকারেও বড়, স্বাদেও দারুণ মিষ্টি। নানিয়াচরের বাগানগুলো এখন রঙিন কমলায় ভরপুর। আর বাজারে কমলার দামও ভালো। ফলে কমলা চাষীরা এ বছর কমলা থেকে ভালো আয় হবে বলে আশা করছেন।
রাঙামাটি জেলায় অন্যান্য অংশেও কমলার ফলন হয়, তবে সবচেয়ে বেশী কমলার চাষ ও ফলন হয় নানিয়াচর উপজেলার বুড়িঘাট, সাবেক্ষ্যং ইউনিয়নে।
গেল শনিবার নানিয়াচর উপজেলা ও লংগদু উপজেলা সীমান্ত এলাকা বুড়িঘাট ইউনিয়নে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কমলার বাগানগুলোতে এখন শোভা পাচ্ছে বড় বড় ঝলমলে রঙিন সব কমলা। কোনো কোনো বাগানে কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে কমলা গাছের ঢালপালাগুলো। বাঁশের খুঁটি দিয়ে খাড়া করে রাখা হয়েছে ডালগুলো, কিংবা আস্ত গাছ।
পাহাড়ের ঢালে চাষ করা এসব কমলার বাগানের এক একজন মালিক আশা করছেন, এ বছর তাদের প্রত্যকেই ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন।
শৈলাচ্ছড়ি গ্রামের কমলা চাষী রঞ্জন চাকমা (৪৫) বলেন, এ বছর তিনি শুধু কমলা বিক্রি করেই ৮ লাখ টাকা পাওয়ার আশা করছি। গত বছর থেকে এ বছর ফলন বেশী ও কমলাগুলো আকারে বড় হয়েছে।
একই গ্রামের নিপুন চাকমা (৩২) বলেন, এ বছর তার বাগানের কমলার ভাল ফলন হয়েছে। এ বছর ৪ লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকার টাকার কমলা বিক্রি হবে।
দয়াল কান্তি চাকমা (৩৮) বলেন, এ বছর তার বাগানে যে রকম ঝাপিয়ে ফল ধরেছে তাতে তিনি কমপক্ষে ৩ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন এ বছর শুধু তার নয় সবার কমলা বাগানে কমলার ভাল ফলন হয়েছে।
নব কর্বারী পাড়া গ্রামের নবজ্যোতি চাকমা (৩৫) জানান, ইতিমধ্যেই কমলা সংগ্রহ শুরু হয়ে গেছে। তিনি কিছু বাজারে বিক্রিও করেছেন। এ বছর ২ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা তার। তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের সহায়তা পেলে ফলন আরো বাড়াতে পারব।
তিনি বলেন, রাঙামাটির অন্যান্য উপজেলার কমলাগুলো শেষ হবার পর আমাদের এলাকার কমলাগুলো বাজারে আসে। আর এ সময়ে গাছে কমলাগুলো আর রং ধরে। স্বাদে মিষ্টতা বাড়ে। এজন্য রাঙামাটির কমলা এখন বাজারের সেরা কমলা। কমলাগুলো এতদিন গাছে রাখতে পশু, কীট পতঙ্গ ও পাখির সাথে আমাদের বেশ লড়াই করতে হয়। রাতদিন এখন বাগানগুলো পাহারা দিচিজ্ছ। না হলে বানর, পাখি, কাঠ বিড়ালী, প্রজাপতিসহ বিভিন্ন কীট কমলাগুলো ক্ষতি করে।
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, প্রতি বছর এ এলাকায় কমলার ভাল ফলন হয়। এ বছর পরিমিত বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় কমলার ফলন হওয়ার পাশাপাশি আকারেও বড় হয়েছে। করোনা কালীন সময়ে কমলার ব্যাপক চাহিদা আছে বাজারে, তাই কমলার দামও ভালো পাচ্ছে চাষীরা।
যেসব বাগানী কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী কমলা বাগানগুলো পরিচর্যা করেছে সেগুলোতে একটি কমলার ওজন হয়েছে ২শ থেকে ৩শ গ্রাম পর্যন্ত।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, রাঙামাটির জেলার মধ্যে নানিয়াচর উপজেলার বুড়িঘাট ও সাবেক্ষং ইউনিয়নে উৎপাদিত কমলাগুলো সবচেয়ে বড়। এ বছর জেলা কমলার ফলন বেশি হয়েছে যার বাজারমূল্য সাড়ে তিন কোটি টাকার উপরে।
এ বছর রাঙামাটিতে ৮০০ হেক্টর জমিতে কমলার বাগান করা হয়েছে। এ থেকে ৯ হাজার ৬শ মেট্রিক টন কমলার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। রাঙামাটির বাজারে বর্তমানে আকার অনুযায়ী বিক্রি হচ্চে প্রতিটি কমলা ৩০ টাকা ৬০ টাকা পর্যন্ত।