কৃষকদের আন্দোলনের অধিকার রয়েছে, কৃষি আইন সরকারকে স্থগিত করতে বললেন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
শান্তিপূর্ণভাবে কৃষকদের আন্দোলনের অধিকার বলে আজ বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) স্বীকৃতি দিয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। একইসঙ্গে, সমঝোতার লক্ষ্যে একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন কমিটি গঠনের আগপর্যন্ত নতুন কৃষি আইন বাস্তবায়ন না করতেও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি পরামর্শ দেওয়া হয়।
তবে কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, আইনটি স্থগিত রাখা হলে কৃষকেরা আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি ববে না।
বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ আদালতের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ দিল্লি রাজ্যের সীমানায় বিক্ষোভকারী কৃষকদের অপসারণে সরকার পক্ষের এক আর্জি শোনেন। এর প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি এস.এ. বোবদে বলেন, আদালত কৃষি ইউনিয়নগুলোর কাছে এব্যাপারে কার্যকর নোটিশ পাঠাবে, তবে এর বিরুদ্ধে তারা ভ্যাকেশন বেঞ্চে আপিল করার সুযোগ পাবেন।
এসময় ভারতের প্রধান বিচারপতি বলেন, 'সম্পত্তি ধ্বংস বা কারো জীবন বিপন্ন না করে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করা সাংবিধানিক অধিকার। কেন্দ্রীয় সরকার ও কৃষকদের আলোচনায় অংশ নিতে হবে। এজন্য আমরা একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিটি গঠনের কথা ভাবছি। এই কমিটির কাছে উভয় পক্ষ তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে পারবে।'
এর আগে তিন সপ্তাহ ধরে চলমান আন্দোলনটি বন্ধে গত বুধবার দেশটির সর্বোচ্চ আদালত এই মধ্যস্ততাকারী প্যানেল গঠনের প্রস্তাব দেন।
প্রস্তাবের বিষয়ে মতামত জানতে আদালত একটি নোটিশও পাঠিয়েছেন সরকার এবং দেশের নানা অঞ্চলের কৃষক সমাজের প্রতিনিধিদের কাছে।
গত তিন সপ্তাহ ধরে আন্দোলনকারী কৃষকেরা ভারতীয় রাজধানী নয়াদিল্লির উপকণ্ঠে কমপক্ষে আধা-ডজন হাইওয়েকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। সেপ্টেম্বরে পাস হওয়া কৃষি পণ্যের দর নির্ধারণের নতুন ব্যবস্থাটিকে তারা 'কালো আইন' বলে ধিক্কার জানিয়েছে এবং তা বাতিল না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ, অনশন এবং অবরোধের মতো কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
সরকার ও কৃষকদের মধ্যে ইতোপূর্বের পাঁচ দফা আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারক এস.এ. বোবদে, বিচারক এ.এস বোপানা এবং ভি. রামাশুভ্রামনিয়ামের বেঞ্চ অচলাবস্থা নিরসনের এই প্রস্তাব দেন।
এদিকে বিক্ষোভের মধ্যেই গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৬৮ বছরের এক শিখ পুরোহিত। আন্দোলনের এক নেতা দর্শন পাল সিং একথা জানান।
তবে পুলিশ জানিয়েছে, ওই পুরোহিতের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ তারা তদন্ত করবে। তবে সিং গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, পুলিশ নিহত পুরোহিতের দেহে একটি চিরকুট খুঁজে পেয়েছে। সেখানে লেখা ছিল, 'সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নিজের ক্ষোভ ও বেদনা তুলে ধরতেই আমি জীবন উৎসর্গ করছি।'
ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্র জানায়, ওই কৃষক নিজ গাড়িতে প্রবেশ করে সেখানে বসে থেকেই নিজেকে গুলি করেন।
নিহত পুরোহিতের নিজ রাজ্য হরিয়ানার কার্নাল শহরে ময়নাতদন্তটি করা হচ্ছে। তার আগে বিস্তারিত কিছু বলতে অস্বীকার করেছেন কেস অফিসার গঙ্গা রাম পুনিয়া।
এদিকে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী এক টুইট বার্তায় শিখ পুরোহিতের মৃত্যুর ঘটনায় সরকারের সহানুভূতিহীন আচরণের নিন্দা জানান। একইসঙ্গে, তিনি তাদের সকল দাবি মেনে নেওয়ার আহবানও জানিয়েছেন।
- সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, স্টার ট্রিবিঊন