ভারতের ভ্যাকসিন উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছে চীন বিরোধী কোয়াড জোট
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের মিলিত চীন বিরোধী জোট- কোয়াড। সম্প্রতি সংগঠনটি ভারতে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে।
গত শুক্রবার চার দেশের নেতাদের মিলিত এক ভার্চুয়াল বৈঠকে অঞ্চলটিতে ভ্যাকসিন উৎপাদন ও প্রচারণা বৃদ্ধির উদ্যোগ গৃহীত হয়। চীনের সাথে অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়তে থাকায় বাইডেন প্রশাসন ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রভাব বৃদ্ধি করতেই নতুন এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন নতুন এই উদ্যোগকে, "সমগ্র ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে উপকৃত করতে…ভ্যাকসিন উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এক নতুন যৌথ অংশীদারিত্ব" বলে উল্লেখ করেন।
যৌথ এক বিবৃতিতে কোয়াড নেতারা বলেন, "স্বাস্থ্যসেবা, বৈজ্ঞানিক, অর্থনৈতিক, উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা এবং উন্নয়ন সক্ষমতার সম্মিলনে একটি দক্ষ কার্যকরী ভ্যাকসিন সংঘ প্রতিষ্ঠা করব, যার মাধ্যমে নিরাপদ ও কার্যকরী ভ্যাকসিন বন্টনের মধ্য দিয়ে উদ্ভাবনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করব।"
ফ্রান্সসহ বেশকিছু দেশের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অ্যাডভোকেসি সংস্থা বাইডেন প্রশাসন ও অন্যান্য ধনী রাষ্ট্রকে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের কিছু অংশ দরিদ্র দেশগুলোতে অনুদানের আহ্বান জানিয়েছে। কানাডা ও মেক্সিকোসহ বেশ কয়েকটি জোট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যাকসিন ক্রয়ের অনুরোধও পেয়েছে বাইডেন প্রশাসন। এরই প্রেক্ষিতে দেশটি ভারতে ভ্যাকসিন উৎপাদন বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিচ্ছে।
রাশিয়া এবং চীন ভ্যাকসিন কূটনীতিতে জড়িয়ে অন্যান্য দেশে ভ্যাকসিন পাঠালেও, এখন পর্যন্ত কেবল মার্কিন নাগরিকদের মধ্যেই ভ্যাকসিন বিতরণের বিষয়ে অবিচল রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে, দরিদ্র দেশগুলোতে ভ্যাকসিন সরবরাহের লক্ষ্যে কোভ্যাক্সের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের চার বিলিয়ন ডলার অনুদান সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
শুক্রবার বাইডেন ছাড়াও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগা ভার্চুয়াল এই সভায় অংশ নেন।
হোয়াইট হাউজের বিবৃতি অনুযায়ী, ২০২২ সালের মধ্যে ভারতে এক বিলিয়ন বা শতকোটি ডোজ করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে নতুন এই উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে।
এদিকে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে (ডব্লিউটিও) সাময়িকভাবে ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বাইডেন প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করছে কয়েকটি অ্যাডভোকেসি সংস্থা। স্বত্ত্বাধিকারের বিষয়টি আরও সহজ হলে বিশ্বে ভ্যাকসিন উৎপাদন আরও সহজ হবে বলে মনে করছেন তারা। কিন্তু, কোয়াডের এই উদ্যোগ তাদের কাছে যথেষ্ট মনে হয়নি।
বুধবার বিশ্বের ৮০টির অধিক উন্নয়নশীল দেশ কর্তৃক ভ্যাকসিনের স্বত্ত্বাধিকার লোপের এই দাবি নাকচ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্র।
পাবলিক সিটিজেনস গ্লোবাল ট্রেড ওয়াচের পরিচালক লরি ওয়ালাচ এক বিবৃতিতে জানান, "সর্বত্র ভ্যাকসিন উৎপাদন, পরীক্ষা এবং ট্রিটিমেন্টের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না গেলে মহামারি থামানো সম্ভব নয়।"
বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন প্রশাসন উদ্দেশ্যমূলকভাবেই সবাইকে একত্রিত করেছে। সভায় অংশ নেওয়া প্রতিটি দেশের সাথেই চীনের বিরূপ নয়তো জটিল সম্পর্ক রয়েছে। বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর পরই দেশগুলোর রাষ্ট্রীয় প্রধানের সাথে ফোনকলে চীনের বিরুদ্ধে যৌথ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন।
টানা বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বের কারনে চীনের সাথে অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক এখন বেশ তিক্ত। পশ্চিম লাদাখে ভারতের সাথে চীনের সীমান্ত সংঘাতের জেরে হাজার হাজার সৈন্য সংঘর্ষপূর্ণ সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থান করছে।
হোয়াইট হাউজের সূত্র অনুসারে, জাপানি প্রধানমন্ত্রী সুগার সাথে ফোনকলে বাইডেন সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ রক্ষার বিষয়ে বিশেষ জোর দিয়েছেন। জনশূণ্য দ্বীপপুঞ্জগুলোর উপর বেইজিং-এর দাবি থাকলেও জাপানের প্রশাসন কর্তৃক দ্বীপগুলো পরিচালিত হয়।
বাইডেন প্রশাসনই কোয়াডের সভার বিষয়ে প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ২০০৪ সালে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শক্তিশালী দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত হয় এই জোট।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিন আগামী সপ্তাহে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া ভ্রমণ করবেন। জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া সফর শেষে অস্টিন ভারত সফরে আসবেন।
- সূত্র: আল জাজিরা