ইউরোপের কিছু দেশ কেন অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা স্থগিত করেছে, কী বলছে কোম্পানিটি
টিকা নেওয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধার কারণ দেখিয়ে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন স্থগিত করেছে ইউরোপের দেশ আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস।
সোমবার মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসি এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম বিবিসি'র প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রোববার নেদারল্যান্ডসের সরকার জানিয়েছে আগামী ২৯ মার্চ পর্যন্ত দেশটিতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হবে না। একই দিনে নেদারল্যান্ডস সরকার বলেছে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবেই এই ভ্যাকসিনের মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত রেখেছে তারা।
ইউরোপের দেশগুলোতে টিকাদানের ধীর গতির মধ্যেই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে: নরওয়ে, আইসল্যান্ড, বুলগেরিয়া, লুক্সেমবার্গ, এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং লাটভিয়া।
এছাড়াও অস্ট্রিয়া এবং ইতালি ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, সাবধানতা অবলম্বন হিসেবে এই ভ্যাকসিনের কয়েকটি ব্যাচ ব্যবহার বন্ধ রাখবে তারা।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত এই ভ্যাকসিনের বিষয়ে চলমান উদ্বেগ প্রশমিত করতে গত সপ্তাহেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিল, ভ্যাকসিনের ডোজ গ্রহণের সঙ্গে রক্তজমাট বাঁধার কোনো সম্পর্ক নেই। ভ্যাকসিনটির ব্যবহার চালিয়ে যেতে দেশগুলিকে অনুরোধ করেছে জাতিসংঘের এই স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুরোধ সত্ত্বেও, বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ ইতোমধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে।
এটি এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন জার্মানির জনস্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে যে ইতিমধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে।
এশিয়ার দেশও থাইল্যান্ডও অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দিয়ে টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত করে দিয়েছে।
নরওয়ের ওষুধ এজেন্সি জানিয়েছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন গ্রহণের পর দেশটির তিনজন স্বাস্থ্যকর্মীকে রক্তপাত, রক্ত জমাট এবং রক্তের প্লাটিলেট স্বল্প সংখ্যার জন্য হাসপাতালে চিকিত্সা করাতে হয়েছে বলে তারা লক্ষ্য করেছেন। এরপর তারা এই ভ্যাকসিনের মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত করে দেন। নরওয়ের সিদ্ধান্তের পরই এমন সিদ্ধান্ত নেয় ইউরোপের অন্য দুই দেশ আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস।
নরওয়েজিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক গির বুখোম বলেন, নরওয়ের ওষুধ সংস্থা 'এই সন্দেহজনক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলির ফলো আপ করবে এবং এই গুরুতর পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।'
ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি বলেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন রক্ত জমাট বাঁধা সৃষ্টি করছে এমন কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বাস কর, এই ভ্যাকসিনের সুবিধা 'তার ঝুঁকিকে ছাড়িয়ে যাবে।'
কিছু ইউরোপীয় দেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ডোজ ব্যবহার স্থগিত করার বিষয়টি স্বীকার করেছে ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি। তবে তারা বলছে, রক্ত জমাট বাধা সংক্রান্ত এই বিষয়টির তদন্ত চলমান থাকাকালীনও টিকাদান কর্মসূচি চালানো যেতে পারে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা কী বলছে?
রোববার অ্যাস্ট্রাজেনেকা এক বিবৃতিতে বলেছে, "অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড -১৯ ভ্যাকসিনের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্যে ১৭ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে টিকা দেওয়ার পর সমস্ত তথ্যের সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এই টিকা প্রদানের ফলে যে কোনো দেশের, যেকোনো গোষ্ঠীর বা যেকোনো লিঙ্গের কারও মধ্যে পালমোনারি এম্বোলিজম, ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস (ডিভিটি) বা রক্ত জমাট বাধা বা এর ঝুঁকির কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় নি।"
বিশেষজ্ঞরা কী বলছে?
লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের ফার্মাকোপিডিমাইওলজির অধ্যাপক স্টিফেন ইভান্স বলেন, "কোভিড স্পষ্টতই জমাট ব্যাধি সৃষ্টি করে এবং প্রতিটি ভ্যাকসিনই কোভিড রোগকে প্রতিরোধ করে।"
"অতএব, এটি খুবই বিশ্বাসযোগ্য যে ভ্যাকসিনের উপকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবেই জমাট ব্যাধিগুলির যেকোনো ঝুঁকিকে ছাড়িয়ে যায় এবং ভ্যাকসিনটি মৃত্যুসহ কোভিডের কারণে সৃষ্ট অন্যান্য অসুস্থতাকেও প্রতিরোধ করে।"
ইভান্স বলেন, ভ্যাকসিন এবং জমাট বাধার সমস্যা নিয়ে গবেষণা করা 'সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত' তবে তিনি এটাও বলেছেন, "এই ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা খুব দূরের একটি পদক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে যা রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ভ্যাকসিন গ্রহণ বন্ধ করে দেবে।"
- সূত্র: সিএনবিসি ও বিবিসি