পাটপণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করতে ভারতকে চিঠি মন্ত্রণালয়ের
বাংলাদেশের পাটপণ্যের ওপর আরোপিত এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার করতে ভারত সরকারকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত মার্চে বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারে বাংলাদেশের অনুরোধে ভারতীয় পক্ষ 'বিবেচনার আশ্বাস' দেয়ার প্রেক্ষাপটে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (ডাব্লিউটিও) মো. হাফিজুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বাংলাদেশের পাটপণ্যের ওপর আরোপিত এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গত ২৪ মার্চ চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখনও এ বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে আমাদের কোন কিছু জানানো হয়নি।
বাংলাদেশে উৎপাদিত পাটপণ্য- জুট ইয়ার্ন, হেসিয়ান এন্ড ব্যাগস রপ্তানির ওপর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রতিটনে ১৯ ডলার থেকে ৩৫২ ডলার পর্যন্ত এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে ভারত। গত চার বছর ধরে দুই দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক ছাড়াও যৌথ বাণিজ্য আলোচনায় বাংলাদেশ এ বিষয়ে আপত্তি করে আসলেও ভারত তা প্রত্যাহার করেনি।
পাটপণ্যের ওপর আরোপিত এই শুল্ক প্রত্যাহার বিষয়ে গত জানুয়ারিতে আলোচনা শুরু করে দুই দেশ। তখন এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশকে তিনটি শর্ত দেয় ভারত।
প্রথম শর্ত ছিল, বাংলাদেশ যে দরে ভারতে পাটপণ্য রপ্তানি করছে, তার চেয়ে দাম বাড়িয়ে বাংলাদেশকে 'মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস' নির্ধারণ করতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত হলো- পাটপণ্য রপ্তানির বিপরীতে বাংলাদেশ যে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে, ভারতে রপ্তানির ক্ষেত্রে তা বাতিল করতে হবে। শেষ শর্তটি ছিল, বাংলাদেশ ভারতে পাটপণ্য ডাম্পিং করছে কি-না, সে বিষয়ে মিডটার্ম রিভিউ করা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারতের দেওয়া এই তিন শর্ত নিয়ে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা। তবে রপ্তানিকারকরা তাতে রাজী হননি।
তাদের যুক্তি, ভারতের শর্ত মেনে নিলে বাংলাদেশ ডাম্পিং করছে বলে ভারতের অভিযোগ প্রতিষ্ঠা পাবে। এছাড়া, সরকার রপ্তানি মূল্য বাড়িয়ে মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস নির্ধারণ করলে এবং নগদ প্রণোদনা না দিলে প্রতিযোগিতার বাজার হারিয়ে এমনিতেই ভারতে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে।
পাটপণ্য রপ্তানি সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশ জুট ইয়ার্ন রপ্তানিতে ৭ শতাংশ এবং হেসিয়ান ও ব্যাগ রপ্তানিতে ১২ শতাংশ নগদ সহায়তা দিয়ে থাকে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম মেনে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ রপ্তানিতে এই ভর্তুকি দিতে পারে।
গত ৭-৮ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাণিজ্য সচিব পর্যায়ে বৈঠকে বাংলাদেশ ভারতের দেওয়া তিন শর্তের সমালোচনা করে বিনাশর্তে এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাটপণ্য ডাম্পিং না হওয়ার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে প্রয়োজনে এ বিষয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতামত নিতে বলে বাংলাদেশ।
এন্টি-ডাম্পিং ডিউটি প্রত্যাহারের অনুরোধ করে গত ২৪ মার্চ পাঠানো চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লিখেছে, "আমরা বিশ্বাস করি যে ভারত সরকার তদন্ত প্রক্রিয়ায় ডব্লিউটিওর অসঙ্গতিগুলো খতিয়ে দেখবে এবং বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা পাটের পণ্যগুলিতে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার করবে" ।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হওয়া পণ্যের মধ্যে পাটপণ্য অন্যতম। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারতে ১০৯৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, এর মধ্যে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৫৭ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের পাটপণ্যের প্রায় ১২ শতাংশ রপ্তানি হয় ভারতে।
বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এনামুল হক পাটোয়ারী টিবিএসকে বলেন, 'গত চার বছরে এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য ভারতের সঙ্গে অনেক আলোচনা হলেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি'।
`ভারতকে অনুরোধ করে কোন লাভ হবে বলে মনে হয় না। তারা নিজেদের স্বার্থে যেটা ভাবে, সেটাই করে। যখন তাদের নিজেদের প্রয়োজন হবে, তখনই এন্টি-ডাম্পিং ডিউটি প্রত্যাহার করবে, তার আগে নয়'- উপসংহার টেনে বলেন তিনি।