গণহত্যার অভিযোগ বিভ্রান্তিকর, দাবি সু চির
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে গাম্বিয়ার অভিযোগের একদিন পর শুনানিতে দাঁড়িয়ে মিয়ানমারের নেত্রী অং সাং সু চি বলেছেন, গাম্বিয়ার দাবিতে বিভ্রান্তিকর তথ্য রয়েছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কর্তৃক একসময় গৃহবন্দি থাকা গণতন্ত্রকামী নেত্রী ইন্টারন্যাশনাল নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে শহরের এই আদালতে দাঁড়িয়ে সেই সেনাবাহিনীর পক্ষেই সাফাই গাইলেন।
শুনানিতে রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করেই তিনি বলেন, রাখাইনে সেনা অভিযানে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ হয়ত উড়িয়ে দেওয়া যায় না, তবে তার পেছনে গণহত্যার উদ্দেশ্য ছিল- এমন ধরে নেওয়াটাও মিয়ানমারের জটিল বাস্তবতায় ‘ঠিক হবে না’।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের সেনাসদস্যরা যুদ্ধাপরাধ করে থাকলে তা মিয়ানমারের দেশীয় তদন্ত ও বিচারব্যবস্থায় নিষ্পত্তি করা হবে। এটিকে আন্তর্জাতিকীকরণের সুযোগ নেই।
দুই বছর আগে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে সেনাবাহিনীর অভিযানে যে বর্বরতা চালানো হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে ১৯৮৪ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন ভঙ্গ করার অভিযোগে মিয়ানমারকে জাতিসংঘের এই সর্বোচ্চ আদালতে এনেছে পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া।
মামলার শুনানিতে সু চি বলেন, ১৯৪৮-এর গণহত্যা সনদ এখানে প্রযোজ্য নয়।
তিনি বলেন, ক্লিয়ারেন্স অপারেশনকে ‘ভুলভাবে ব্যাখ্যা’ করা হচ্ছে। ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শুধু সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবিলার প্রশ্নে ব্যবহৃত হয়েছে।
“রাখাইনে কোনো ধরনের বৈষম্য করা হবে না। মুসলমান শিশু ও ছাত্রছাত্রীদের জন্য বৃত্তি চালু করা হচ্ছে। তিনটি আইডিপি (ইন্টারন্যালি ডিসপ্লেসড পিপল) শিবির বন্ধ করা হয়েছে। দেশান্তরিত লোকজনকে স্বেচ্ছামূলক ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেন, এ রকম অবস্থায় কীভাবে বলা হয় যে গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে সেখানে কার্যক্রম চলছে?”
মঙ্গলবার দ্য হেগের আইসিজেতে গাম্বিয়ার পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করে দেশটির আইনমন্ত্রী আবুবকর তামবাদু মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতার চিত্র তুলে ধরেন এবং গণহত্যা বন্ধের দাবি জানান।
এরপর বুধবার মিয়ানমারের পক্ষে বক্তব্য দিতে এসে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর সু চি দাবি করেন, রাখাইনের পরিস্থিতি সম্পর্কে গাম্বিয়া যে চিত্র এ আদালতে উপস্থাপন করেছে তা ‘অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’।
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যার বিষয়টি অস্বীকার করে, পুরো ঘটনার জন্য আরাকান আর্মির ওপর দোষ চাপিয়েছেন সু চি।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে ক্রমাগত আক্রমণ চালায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি-আরসা। ২০১৭ সালের আগস্টে আরসা একটি সামরিক চৌকি ধ্বংস ও ৩০ জন পুলিশকে হত্যা করে। এভাবে তারা ১২টি হত্যাযজ্ঞ চালায়। এরপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী সশস্ত্র অভিযান চালায়। মিয়ানমারের ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’কে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছে গাম্বিয়া। ওই সেনা অভিযানের পেছনে গণহত্যা চালানোর অভিপ্রায়ের কোনো প্রমাণ নেই।