কানে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র: ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ বাঁধন যা বললেন...
গত বৃহস্পতিবারই খবরটা জানা হয়ে গেছে। ৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে আঁ সার্তেইন রিগার্দ বিভাগে অফিসিয়াল সিলেকশন হয়েছে বাংলাদেশের নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ছবি 'রেহানা মরিয়ম নূর'।
এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ফ্রান্সের মর্যাদাপূর্ণ কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের কোনো প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা পেল।
ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন আজমেরী হক বাঁধন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'ছবিটির শুটিং হয় ২০১৯ সালের শেষ দিকে। কিন্তু এটার আলোচনা ও যোগাযোগ শুরু হয় তারও দু-তিন বছর আগে থেকে। একটা টিম কাজ শুরু করে। যার নেতৃত্ব দেন আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। ওই সময় আমাদের পুরোদমে রিহাসার্ল করতে হয়।'
'এরপর ২০১৯ সালের দিকে পুরো শুটিংটাই কুমিল্লা ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজে করা হয়। ছবির শুটিং শেষ করে ২০২০ সালেই কানে জমা দেওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সেটা আর হয়নি। তাই এ বছর সাবমিট করা হয়।'
কান অফিসিয়াল সিলেক্টেড হওয়ার ঘোষণা আসার পরপরই গত বৃহস্পতিবার সিনেমার সঙ্গে যুক্ত সবাই মিলে আড্ডা দেন সাদের গুলশানের অফিসে। সেখান বসেই দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে আলাপ করেন বাঁধন।
শুটিংয়ের স্মৃতি নিয়ে তিনি বলেন, 'আমার চত্রিটা এতটা গভীর যে, অনেকবার আমি একদিনে মাত্র একটা দৃশ্য করতে পেরেছি। কারণ, এমনও দৃশ্য ছিল যেটা করার পর আমি মেন্টালি ও ফিজিক্যালি আর স্টেবল থাকতে পারিনি। বাধ্য হয়ে সেদিন প্যাক-আপ করতে হয়েছে। আবার হয়তো নিজেকে ঠিকঠাক করে পরেরদিন শুটিং করতে হয়েছে। এমনকি ওই দৃশ্যটা সেকেন্ডটাইম আর করতে পারিনি। নিজে দেখতে পারিনি।'
'আমি কিন্তু এখনো পুরো সিনেমা দেখিনি,' যোগ করেন তিনি।
ছবিটির রেহানা মরিয়ম নূর চরিত্রেই দেখা যাবে তাকে। চরিত্রটি নিয়ে বাঁধন বলেন, 'আমি হয়তো ব্যক্তিজীবনে রেহানার মতো দেখতে নই। ওর মতো করে কথা বলি না। সাজিওনি। ওর মতো করে তাকাই না। কিন্তু ফিজিক্যালি না হলেও মেন্টালি ওর সঙ্গে আমার একটা কানেকশন আছে। এতটুকু বলতে পারি, চরিত্রটার এই কানেকশনটা এই দেশের অনেক দর্শক খুঁজে পাবে।'
এই চরিত্রে শুটিং করে বাঁধন অন্য রকম একটা বিপদেও পড়েছেন বলে জানালেন। এখন আর সহজে কোনো গল্প বা চরিত্র পছন্দ হয় না। এত সুন্দর কাজের প্রসেসের মধ্যে দিয়ে গেছেন যে, আর কারও সঙ্গে সহজে খাপ খাইয়ে অভিনয় করতে পারেন না বলে দাবি তার।
তিনি জানান, তাকে এখন অপেক্ষা করতে হয় ভালো কোনো গল্পের ও চরিত্রের।
রেহানা মারিয়ম নূর চলচ্চিত্রের রেহানা চরিত্রটি এক প্রতিবাদী নারীর। বাঁধন বলেন, 'এ রকম চরিত্র করতে পারা আমার জন্য আনন্দের। সত্যি কথা হলো, এই রকম চরিত্রে অভিনয় করার পর আর কোনো চরিত্রই ভালো লাগে না। চরিত্রটার কোনো শুরু বা শেষ নাই। কিন্তু চরিত্রে ডুবে যেতে হবে। চরিত্রটার সঙ্গে সময়ের মিল খুঁজে পাবেন সবাই।'
'আসলে সাদের ফিল্ম মেকিং অ্যাপ্রোচটা আলাদা। এটা আমরা চাইলেও শুরু ও শেষ করতে পারব না,' বলেন তিনি।
সিনেমাটির গল্প প্রসঙ্গে কো প্রডিউসার রাজীব মহাজন জানান, প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের শিক্ষক রেহানা মরিয়ম নূরকে কেন্দ্র করেই এই সিনেমার গল্প। যেখানে রেহানা একজন মা, মেয়ে, বোন ও শিক্ষক হিসেবে জটিল জীবনযাপন করে। এরমধ্যে এক সন্ধ্যায় কলেজ থেকে বেরোনোর সময় সে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনার সাক্ষী হয়। এরপর থেকে সে এক ছাত্রীর পক্ষ হয়ে সহকর্মী এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে প্রতিবাদ করতে শুরু করেন এবং ক্রমশ একরোখা হয়ে ওঠে। কিন্তু একই সময়ে তার ৬ বছর বয়সী মেয়ের বিরুদ্ধে স্কুল থেকে রূঢ় আচরণের অভিযোগ করা হয়। এমন অবস্থায় অনড় রেহানা তথাকথিত নিয়মের বাইরে থেকে সেই ছাত্রী ও নিজ সন্তানের জন্য ন্যায় বিচারের খোঁজ করতে থাকে।
ছবিটি নিয়ে কথা বলার জন্য নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের সঙ্গে। তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে পরিচালক সম্পর্কে কথা বলেন অভিনেত্রী বাঁধন। তিনি বলেন, 'সাদ মেধাবী ও পরিশ্রমী। মেধার চর্চা করে। প্রতিটি কাজ গোছানো। ও খুবই দূরদর্শী। ও প্রচার-প্রচারণার চেয়ে কাজটা ঠিকমতো করতে পছন্দ করে। আমি ইতিহাসের একটা পার্ট হতে পেরেছি। আমার জন্য গর্বের। আসলে এটা সবার মেধা ও পরিশ্রমের ফল।'
২০১৬ সালের 'লাইভ ফ্রম ঢাকা' চলচ্চিত্রের পর এটি সাদের দ্বিতীয় ছবি। মুক্তির পর 'লাইভ ফ্রম ঢাকা' নিয়েও আলোচনা হয়েছিল।
পোটোকল ও মেট্রো ভিডিও'র ব্যানারে ছবিটি প্রযোজনা করেছেন সিঙ্গাপুরের প্রযোজক জেরেমী চুয়া, নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক বাবু এবং সহ-প্রযোজনা করেছেন রাজীব মহাজন, আদনান হাবিব, সাঈদুল হক খন্দকার। ছবিটির সিনেমাটোগ্রাফার তুহিন তমিজুল, প্রোডাকশন ডিজাইনার আলী আফজাল উজ্জল ও সাউন্ড ডিজাইনার শৈব তালুকদার। ছবিটি সহ-প্রযোজনা করেছে সেন্সমেকারস প্রোডাকশন।
ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন আফিয়া জাহিন জাইমা, কাজী সামি হাসান, আফিয়া তাবাসসুম বর্ন, ইয়াছির আল হক, সাবেরী আলম প্রমুখ। ইতোমধ্যে ছবিটির ইন্টারন্যাশনাল সেলসের জন্য জার্মান ভিত্তিক সেলস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ফিল্মস বুটিক চুক্তবদ্ধ হয়েছে।
আগামী ৬ জুলাই থেকে ফ্রান্সের কান শহরে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব- কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল।