সুজন, মুশফিক, সাকিবদের কারণে এখনও লড়াইয়ে লিখন
টুর্নামেন্ট আসে, টুর্নামেন্ট যায়; কোথাও ডাক পড়ে না জুবায়ের হোসেন লিখনের। ২৫ বয়সী এই লেগ স্পিনার হতাশ হন, কিন্তু পরক্ষণেই আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কিন্তু লেগ স্পিনার বলেই যেন স্বপ্ন ছুয়ে দেখা হয় না তার। কথাটা অবহেলার হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটে বাস্তবতা এমনই। ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালে ২ নভেম্বর পর্যন্ত সব ফরম্যাট মিলিয়ে লিখনের খেলা ম্যাচসংখ্যা মাত্র ১০টি। এরপর কোথাও ম্যাচ পাননি তিনি।
তিন ফরম্যাট মিলিয়ে সাত বছরে জাতীয় দলে মাত্র ১০ ম্যাচ খেলা লিখন তবু খেই হারান না। জিম, অনুশীলন করে নিজেকে প্রস্তুত রাখেন এই ডাক আসবে বলে। ম্যাচ খেলার নিশ্চিত সুযোগ হিসেবে জাতীয় ক্রিকেট লিগকে প্রতিবারই হিসাবে রাখেন বাংলাদেশের এই লেগ স্পিনার। তার খেলা সর্বশেষ ম্যাচ জাতীয় লিগেরই, ২০১৯ সালের নভেম্বরে। কিন্তু এই টুর্নামেন্টের সর্বশেষ আসরেও দল পাননি তিনি।
অবশেষে ম্যাচ খেলার অপেক্ষা ফুরিয়েছে লিখনের। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব তাকে দলে নিয়েছে। দীর্ঘ ১৮ মাস পর শনিবার প্রতিযোগিতামূলক কোনো ম্যাচ খেলেছেন ২০১৪ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া লিখন। ফেরার পর্বটা দাপুটে না হলেও ছন্দময় বোলিং করেছেন। ৩ ওভারে ১৫ রান খরচায় উইকেটশূন্য থেকেছেন তিনি। যদিও ওল্ডডিএইসএসের বিপক্ষে একটি চার মিস ও একটি ক্যাচ না পড়লে রাজকীয় প্রত্যাবর্তনই হতে পারতো তার।
এতোদিন পর ম্যাচ খেলার স্বাদ, ভালো লাগার সঙ্গে কিছুটা স্বস্তিও কাজ করছে লিখনের মধ্যে। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, 'অনেক বেশি ভালো লাগছে। কারণ অনেকদিন পর ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছে। মাঝে বাংলা ট্র্যাকে অনুশীলন করেছি। ওখানে সুজন স্যার ছিলেন, আমার দেখভাল করেছেন উনি। লিগ খেলা হয়েছে টুকটাক। আত্মবিশ্বাসী ছিলাম সুযোগ পেলে ভালো কিছু করব। সুযোগ পেয়ে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।'
গা ছাড়া ভাবে ক্যারিয়ার থেকে যতোটা সময় হারিয়ে গেছে, এবার যেন একই ভুল না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখছেন লিখন, 'ম্যাচ খেলার স্বস্তি তো থাকবেই। এতোদিন পরে খেলছি। মাত্র শুরু করলাম, আরও অনেকগুলো ম্যাচ বাকি। রিল্যাক্স হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সামনের ম্যাচগুলোয় ভালো করার চেষ্টা রাখতে হবে। এভাবেই নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করেছি।'
১৮ মাস বিসিবির কোনো কার্যক্রম, ম্যাচে ছিলেন না লিখন। মনোযোগ ধরে রেখে কীভাবে লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে কৃতজ্ঞ থাকা মানুষগুলোর নাম জানালেন তিনি, 'আমি দীর্ঘদিনের জন্য কোথাও ছিলাম না। এই সময়ে আমি ম্যাচ খেলিনি কিন্তু সব সময় অনুশীলন করেছি। ফিটনেস, বোলিং নিয়ে কাজ করেছি। বাংলা ট্র্যাকে সুজন স্যারের (খালেদ মাহমুদ) সাথে অনেকদিন কাজ করেছি। আমার কোচ হুমায়ুন কবীর শাহিন, উনার সঙ্গে কাজ করেছি।'
'অনেককেই পাশে পেয়েছি। মুশফিক ভাই সব সময় সাহায্য করেছেন। কাল ম্যাচের পর আমাকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছেন উনি। সুজন স্যার, মুশফিক ভাই (মুশফিকুর রহিম), শাহিন ভাই, আমাদের দলের যে কোচ রাজন ভাই, উনিও সাহায্য করেছেন। সবাই খুব সাহায্য করছেন। অনেক খেলোয়াড়ই সাহস জোগাচ্ছেন, সাহায্য করছেন। সবাই আমাকে নিয়ে পজিটিভ ছিলেন, এখনও পজিটিভ আছেন।' যোগ করেন লিখন।
সাকিব আল হাসানের একটি মন্তব্যে স্বপ্নের পথে আরও জোরে দৌড়ানোর রসদ পেয়ে গেছেন লিখন, 'সবাই আমাকে খুব সমর্থন দেন, এটা আমার খুব ভালো লাগে। এদিক থেকে আমি খুব ভাগ্যবান। এরআগে মোহামেডানের সঙ্গে আমাদের ম্যাচ, আমি খেলিনি ওই ম্যাচে। সাকিব ভাই বলছিলেন, "ওকে তো খেলানো দরকার। ওকে তো দরকার আমাদের"। সাকিব ভাইয়ের মতো এতো বড় ক্রিকেটারের মুখ থেকে এমন কথা শোনা অনেক অনুপ্রেরণার। খুবই ভালো লেগেছে আমার।'
ফেরার লড়াইয়ে সবাইকে পাশে পাচ্ছেন লিখন, অবহেলার পাত্রে পরিণত হয়ে এবার আর হারাতে চান না বাংলাদেশের এই লেগ স্পিনার। তার ভাষায়, 'আমাদের কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা এমন বললে নিজের আত্মবিশ্বাস তখন বাড়ে। আমি চেষ্টা করব তাদের বিশ্বাস যেন রাখতে পারি। আর হারিয়ে যেতে চাই না। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে এতোদিন ম্যাচের বাইরে থাকা কতোটা কঠিন, এটা অন্য কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।'
২০১৪ সালে হাড়াহুড়ো করেই জাতীয় দলে অভিষেক করানো হয় ২২টি আন্তর্জাতিক উইকেটের মালিক লিখনকে। যার সিদ্ধান্তে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয় লিখনের, সেই চান্দিকা হাতুরুসিংহেই আবার তাকে দূরে ঠেলে দেন। একটা সময়ে এসে বাংলাদেশের সাবেক এই কোচ বলে ফেলেন, 'লিখনকে দিয়ে হচ্ছে না' সে হারিয়ে গেছে।'
হাতুরুসিংহের অমন বলার পেছনে লিখনের অলসতা ছিল বড় কারণ। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যথেষ্ট সুযোগ পাননি তিনি, তবে পাওয়া সুযোগগুলোও হেলায় নষ্ট করেছেন লিখন। তবে একইভাবে সুযোগ নষ্ট করে আর অন্ধকারে পতিত হতে চান না জাতীয় দলের হয়ে ৬ টেস্ট, ৩ ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টি খেলা বাংলাদেশের এই ক্রিকেটার।