মোবাইল ব্যাংকিং: এপ্রিলে সর্বোচ্চ লেনদেন সাড়ে ৬৩ হাজার কোটি টাকা
মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিলে। ওই মাস জুড়ে মোট ৬৩,৪৭৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২,১১৬ কোটি টাকা।
এর আগে গেল বছরের জুলাই মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা এবং দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২,০৩২ কোটি টাকা।
মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এতে দেখা যায়, গেল মার্চের তুলনায় এপ্রিলে মোট লেনদেন বেড়েছে ৬.৪ শতাংশ এবং দৈনিক লেনদেন বেড়েছে ১০ শতাংশ। অন্যদিকে ৬ শতাংশ বেড়ে সক্রিয় গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩.৬৭ কোটি।
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ায় এপ্রিল থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। এতে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে লেনদেন যেমন বেড়েছে, তেমনি সরকারি লেনদেনও বেড়েছে। অন্যদিকে রমজান শুরু হওয়া এবং সার্বিকভাবে ডিজিটাল লেনদেন বাড়ায় এপ্রিলে লেনদেন বেড়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, দেশের অন্যতম মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস 'নগদ'-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, 'আমরা দেখতে পারছি যে, মানুষ আগের চেয়ে ক্যাশলেস (নগদহীন) লেনদেনে আগ্রহী এবং আমাদের নেটওয়ার্কেও এর প্রতিচ্ছবি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত অর্থ প্রদানের এই ধরন জনপ্রিয় হচ্ছে এবং আমরা অভূতপূর্ব ট্রানজেকশান পাচ্ছি। নিশ্চিতভাবে এটি ডিজিটাল প্রক্রিয়া, বিশেষত আর্থিক খাতের প্রবৃদ্ধির হার আরও ত্বরান্বিত করবে'।
আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) সৈয়দ মাসুদুল বারী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এপ্রিলে লেনদেন বাড়ার ক্ষেত্রে অনলাইন কেনাকাটা বৃদ্ধি ভূমিকা রেখেছে এবং এই কেনাকাটায় দাম পরিশোধে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, মার্চের তুলনায় এপ্রিলে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে কেনাকাটায় লেনদেন বেড়েছে ৪১ শতাংশ। অথচ ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে এই বৃদ্ধি ছিল মাত্র ৪.৪ শতাংশ। এদিকে মার্চের তুলনায় এপ্রিলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে সরকারি লেনদেন বেড়েছে ৫২০ শতাংশ এবং পরিমাণ ৭৩৪ কোটি টাকা।
এপ্রিলে মোবাইল ব্যাংকিং এর লেনদেন বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারি এই লেনদেনও ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন 'বিকাশ' এর প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম। এর বাইরে নতুন নতুন পণ্য বাজারে আনা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের ব্যাপ্তি বাড়ছে, যার প্রভাবে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ।
তবে এই বৃদ্ধিতে ছেদ কাটতে পারে নতুন বাজেটে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের করহার বাড়ানোর প্রস্তাব, এমন আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে সৈয়দ মাসুদুল বারী বলেন, 'করপোরেট কর বাড়ানো হলে বিকাশমান এই শিল্প থমকে যেতে পারে। বিশেষ করে ছোট ছোট কোম্পানি, যেগুলো বাজারে প্রতিযোগিতা করার চিন্তা করছিল সেগুলো এগোতে পারবে না। খরচ বাড়তে পারে গ্রাহকদেরও'।
গেল ৩ জুন আসছে অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেটে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যমান করপোরেট করহার ৩২.৫ শতাংশ থেকে দুটি ক্যাটাগরি করে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য এই হার বাড়িয়ে ৩৭.৫ শতাংশ এবং তালিকাভুক্ত নয় এমন প্রতিষ্ঠানের জন্য ৪০ শতাংশ। বর্তমানে কোন মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না হওয়ায় প্রকৃত অর্থে ৪০ শতাংশ হারেই কর দিতে হবে।