ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন ছাড়ালো ১০ হাজার কোটি টাকা
করোনায় আর্থিক লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে বাড়ছে ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবহার। এই লেনদেনের অন্যতম মাধ্যম ইন্টারনেট ব্যাংকিং। এর মাধ্যমে লেনদেন বাড়ার পাশাপাশি গ্রাহক সংখ্যাও বাড়ছে।
প্রথমবারের মত ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের লেনদেন ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চে লেনদেন হয়েছে ১০ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা, যা গত বছর মার্চে হওয়া লেনদেনের চেয়ে ৫৭.৪২ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চে ইন্টারনেট ব্যাংকিয়ে লেনদেন বেড়েছে ২২.৩৪ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল আট হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, করোনায় গ্রাহকরা যে ভাবে ডিজিটাল লেনদেনের দিকে ঝুঁকেছেন, লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি সেই চিত্রই ফুটিয়ে তুলছে।
ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অনেক গুলো সেবা ঘরে বসেই পেয়ে থাকেন গ্রাহকরা। অ্যাকাউন্ট খোলা, টাকা তোলা, টাকা জমা দেয়া, বিল পেমেন্ট, টাকা ট্রান্সফারের মত সেবা পাচ্ছেন তারা। এতে গ্রাহকদের আগ্রহ বাড়ছে।
তিনি মনে করেন, আগামী ৫ বছরের মাথায় ব্যাংক লেনদেনের বড় অংশই ডিজিটাল মাধ্যমে সম্পাদিত হবে। গ্রাহকদের ব্যাংকে আসার প্রয়োজন পড়বে না। আলী রেজা আরও জানান, মহামারির সময় তার ব্যাংকেই ডিজিটাল লেনদেন বেড়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ গুণ।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মত ইন্টারনেট ব্যাংকিং জনপ্রিয় না হওয়ার প্রসঙ্গে এই ব্যাংকার বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের যে বিস্তৃতি তা ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে নেই। অন্যদিকে, মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফারই বেশি হয়, অন্য লেনদেন অতটা হয় না। কিন্তু ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রায় সব ধরনের সেবাই পাওয়া যায়।
এছাড়া, ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে গ্রাহককে কিছু বিষয় মেনে চলতে হয়, যা এমএফএস (মোবাইল ব্যাংকিং) এর ক্ষেত্রে হয় না। তবে ব্যাংকগুলো বর্তমানে এই খাতে জোর দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর গ্রাহক সংখ্যা দ্রুত সময়েই এক কোটিতে পৌঁছাবে।
বর্তমানে, লেনদেন বাড়ার পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যাও বাড়ছে। ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৯০ হাজার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ লাখ ৭২ হাজার ৭২ জন।
অন্যদিকে, মার্চে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৬১ লাখ। সেই হিসেবে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মাত্র ৩ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যাংকিং গ্রাহক।
এই সংখ্যা বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের ডিজিটাল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট প্রধান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যাংকার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময় ডিজিটাল লেনদেনের যে আগ্রহ মানুষের মাঝে তৈরি হয়েছে, দ্বিতীয় ঢেউয়ে এসে তা পরিপূর্ণতা লাভের দিকে যাচ্ছে। এরই প্রভাবে মার্চে লেনদেন ও গ্রাহক সংখ্যা উভয়ই বেড়েছে।
যেহেতু ব্যাংকগুলোর জন্য এখন ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম চালু করার অনুকূল পরিবেশ আছে সেক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যাংকিং গ্রাহক সংখ্যা এবং লেনদেন দুটোই আরো দ্রুত বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী।