মজুদে আছে মাত্র ৮৪ লাখ ডোজ টিকা
দেশে নিবন্ধন করে করোনাভাইরাসের টিকা পাওয়ার অপেক্ষায় আছে দেড় কোটির বেশি মানুষ। বিপরীতে সরকারের হাতে এখন টিকা রয়েছে মাত্র ৮৪ লাখ ৬ হাজার ডোজ। এর মধ্যেই মজুদ আছে সেকেন্ড ডোজের টিকাও। টিকা সংকটের কারণে দেশে এই মুহূর্তে গণটিকা কার্যক্রম হবে না। যখন যে পরিমাণ টিকা পাওয়া যাবে তা রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে সবাইকে দেয়া হবে বলে ইতিমধ্যে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টিকা আসলে দেশে টিকা সংকট হবেনা বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভারত থেকে কেনা টিকা আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকার এখন চীন থেকে কেনা টিকায় কার্যক্রম চালাচ্ছে। এছাড়া কোভ্যাক্সের আওতায়ও দেশে টিকা আসছে।
রোববার সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, টিকার জন্য কেন্দ্রে আর রেজিস্ট্রেশন করা যাবে না। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ টিকা পাবে না। সাড়ে তিন কোটিরও বেশি মানুষ নিবন্ধন করেছেন এবং দুই কোটিরও বেশি মানুষ টিকা পেয়েছেন। যে পরিমাণ টিকা পাওয়া যাবে তার ওপর ভিত্তি করে নিবন্ধন করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে এখন পর্যন্ত টিকা এসেছে ৩ কোটি ১৬ লাখ ডোজ। এর মধ্যে অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছে ১ কোটি ৬৬ লাখ আর উভয় ডোজ সম্পন্ন করেছে ৬৫ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ। এখন পর্যন্ত করোনার টিকা পেতে রেজিস্ট্রেশন করেছে সাড়ে তিন কোটির বেশি মানুষ।
আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফাইজারের আরও ৬০ লাখ টিকা পাওয়া যাবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, "এ মাসে কিছু (টিকা) আসবে, বাকিগুলো সেপ্টেম্বরে। এ মাসের শেষে আরো দশ লাখ সিনোফার্ম টিকা আসবে"।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, চীনের সাড়ে সাত কোটি টিকার পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডব্লিউএইচও থেকে কম দামে তিন কোটি সিনোফার্ম ও সাড়ে সাত কোটি সিনোভ্যাক টিকা কেনার অর্ডার দিয়েছে বাংলাদেশ। আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৭ থেকে ৮ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
গত এক সপ্তাহ ধরে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু কমতে শুরু করেছে। এই সময় দ্রুত অধিক মানুষকে টিকার আওতায় আনা গেলে মৃত্যু আরো কমবে ও আগামীতে পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে।
বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট ও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এখন বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকা দেয়ায় লোকজন সুরক্ষিত থাকবে। বড়রা সুরক্ষিত থাকলে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া যাবে, বাচ্চাদের ঝুঁকি কমবে। আরও বেশিসংখ্যক মানুষকে টিকা দেয়া গেলে আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর আমাদের জন্য স্বস্তির হবে"।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, "বেশি মানুষকে টিকা দিলে সংক্রমণ কমবে। তবে টিকা নেয়ার পর মাস্ক না পরলে নতুন নতুন ভেরিয়েন্ট আসবে, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। এখন সংক্রমণ কমেছে, দ্রুত ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে দেড় কোটি মানুষকে ভ্যাকসিনেটেড করতে হবে। তাহলে মৃত্যু কমবে"।
তিনি বলেন, "অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দ্রুত অধিক মানুষকে টিকা দেয়ার সামর্থ রয়েছে। তাই আমরা খুব সহজেই দুই মাসে চার কোটি মানুষকে টিকা দিতে পারবো। তাই চীনের সিনোফার্মের সাত কোটি ডোজের পাশাপাশি কোভ্যাক্সের ছয় কোটি ডোজ টিকাও যেন দেশে আসে সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে"।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে আরও ১১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে; যা গত ৫৩ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন।
ভাইরাসটির সংক্রমণ ও এর ফলে মৃত্যু ঠেকাতে টানা লকডাউন শিথিলের পর গত ১৩ আগস্ট ১৯ দিন পর প্রথমবার মৃত্যু ২০০ এর নিচে নেমে আসে। এরপর থেকে প্রতিদিনই ২০০'র কম রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।
গত এক বছরেরও বেশি সময়জুড়ে প্রাণঘাতি এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে ২৫ হাজার ৩৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিডজনিত কারণে।