পাহাড় কাটার দায়ে চউককে ১০ কোটি টাকা জরিমানা
জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ ১৮টি পাহাড় কেটে পরিবেশ ও প্রতিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করার দায়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) একটি প্রকল্পকে ১০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদফতর। বুধবার পরিবেশ অধিদফতরের সদর দপ্তরে শুনানি শেষে এ জরিমানা করেন মনিটরিং এন্ড এনফোর্সমেন্ট শাখার পরিচালক রুবিনা ফেরদৌসী।
চউকের পক্ষে প্রকল্প পরিচালক ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেন। অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের ২৩ মে দু’টি শর্তে রাস্তার মাঝ বরাবর অবস্থিত পাহাড় কাটার শর্তে অনুমোদন দেয়।
শর্ত দু’টি হলো পাহাড় লেভেল ড্রেসিং ও কাটার কারণে ঢালের স্থায়িত্বের জন্য ঢালকে ১:২ রাখা, পাহাড়ের ঢালে জিওজুট ও ঘাস লাগানোসহ রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা, পাহাড় ড্রেসিংসহ সড়কটির নির্মাণ কাজ করা হলে পরিবেশের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা।
১৮টি পাহাড়ের অবস্থান সুরক্ষা ও পাহাড় ধ্বংস প্রতিরোধের জন্য যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ঢাল প্রতিরক্ষার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সরকারের অনুমতি লাভের পর উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান পর্যালোচনা ও অনুমোদনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে পাহাড় কাটা ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা দাখিল করবে।
গত ১২ মে পরিবেশের সদর দপ্তর প্রকল্পটির ইআইএ অনুমোদনসহ প্রকল্পের অনুকূলে পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদান করে। দাখিলকৃত পাহাড় কাটা ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কর্তনের প্রয়োজন হবে এবং কর্তনকৃত মাটি উক্ত প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণে ব্যবহৃত হবে।
গত বছরের ৩০ জানুয়ারি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন কর্তৃপক্ষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তর ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করে। তাদের পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যে পাহাড়ের ঢাল ১:২ বজায় রাখার জন্য আরও যে অংশে পাহাড় কাটা হবে, তাতে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এর ছাত্রী হোস্টেলের জন্য নির্ধারিত স্থানে তা নির্মাণ করা অসম্ভব ।
গত ২৫ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর প্রকল্পটি এলাকা আবারও সরেজমিন পরিদর্শন করে। এ সময় অনুমোদিত ২ লাখ ৫০ হাজার ঘনফুটের পরিবর্তে ১০ লাখ ২৮ হাজার ৭০০ ঘনফুট পাহাড় কর্তনের প্রমাণ পাওয়া যায়। দাখিলকৃত পাহাড় কাটা ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা অনুযায়ী পাহাড়ের ঢাল ১:২ অর্থাৎ ২৬.৬ ডিগ্রি কোণে পাহাড় কাটার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অধিকাংশ পাহাড় ৯০ ডিগ্রি কোণে খাড়াখাড়িভাবে কাটা হয়। কাটা পাহাড়গুলো মূলতঃ বালুমাটির প্রধান হওয়ায় কাটা পাহাড়ের বাকি অংশগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে আছে। বেশকিছু পাহাড়ে ইতোমধ্যে ফাটল দেখা গিয়েছে। রাস্তার নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পাহাড় কাটা ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা অনুযায়ী পাহাড়ের ঢাল সুরক্ষার্থে কোনোরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বর্তমান অবস্থায় রাস্তা চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হলে পাহাড় ধ্বসে ব্যাপক জানমালের ক্ষতিসাধনের আশঙ্খা রয়েছে। এছাড়া ছাড়পত্রের শর্তানুসারে প্রতি তিন মাস অন্তর পরিবেশগত তদারকি পরিকল্পনা দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হয়নি।
পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ছাড়পত্রের শর্তের বেশি পাহাড় কাটায় এবং শর্ত অনুযায়ী পাহাড় সংরক্ষণের জন্য কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে এ জরিমানা করা হয়।