বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা জাতির উচ্চতা কমে যাচ্ছে
ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সংঘাতের কাল থেকে শান্তির যুগ, মহামারি থেকে সাম্যের বিজয়—মানবসভ্যতার ইতিহাস নানা চড়াই-উৎরাইয়ে ভরপুর। তবে মানুষের শরীরও কিন্তু কালের সাক্ষী হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের উচ্চতা শুধু জেনেটিকসের ব্যাপার নয়। আমরা যে পরিবেশে বাস করি, আমাদের পুষ্টি, রোগবালাই (যেমন ডায়রিয়া)—এসবের ওপরও আমাদের উচ্চতা নির্ভরশীল।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের বিশ্লেষণে বেরিয়ে এসেছে, নরম্যান বিজয়ের পর ইংল্যান্ডের পুরুষদের গড় উচ্চতা বেড়ে যায়। এর কারণ সম্ভবত বেশি তাপমাত্রার পরিবেশে থাকা। কিন্তু দুর্ভিক্ষ, কাজের ধরন, কাজের পরিবেশ—এসব কারণে তাদের উচ্চতা ফের কমতে থাকে।
গত কয়েক দশক ধরে অনেক দেশেই ফের মানুষের উচ্চতা বাড়ছে। ২০১৬ সালে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকরা জানান, ১৯১৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এক দশকে দক্ষিণ কোরিয়ার নারীদের উচ্চতা গড়ে ২০ সেন্টিমিটারের বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে এই সময়ে যুক্তরাজ্যের নারী ও পুরুষদের গড় উচ্চতা বেড়েছে ১১ সেন্টিমিটার। তবে ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষণায় এ-ও দেখা গেছে যে আমেরিকাসহ কিছু দেশে সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চতাবৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেছে।
এবার ডাচ সরকারের প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টিকস নেদারল্যান্ডস-এর (সিবিএস) গবেষকরা জানিয়েছেন, নেদারল্যান্ডস এখনও বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা জাতি। তবে ২০০১ সালে জন্ম নেওয়া ডাচ নারীরা ১৯৮০ সালে জন্মানো নারীদের চেয়ে গড়ে ১.৪ সেন্টিমিটার খাটো।
ইম্পেরিয়াল কলেজের গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট হেলথের প্রধান অধ্যাপক মাজিদ এজাতি বলেছেন, ডাচদের উচ্চতা সত্যিই কমছে কি না, তা নিশ্চিত হতে আরও কয়েক বছর লেগে যাবে। তিনি বলেন, সত্যই যদি ডাচরা খাটো হতে থাকে, তাহলে এর প্রধান কারণ পুষ্টি।
এজাতি বলেন, ধারণা করা হয়, ডাচ স্কুলগুলোতে দুধ খাওয়ানোর কর্মসূচির কারণেই দেশটির জনসংখ্যা এত লম্বা হয়েছিল। নেদারল্যান্ডসের মানুষের দুধ খাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। এই অভ্যাস তাদের উচ্চতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে, একাধিক গবেষণায় এমন ইঙ্গিত মিলেছে। কারণ দুধে থাকে বিপুল পরিমাণ ক্যালসিয়াম। আর ক্যালসিয়াম হাড় তৈরি করে এবং উচ্চতা ক্যালসিয়ামের সুলভ সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল।
সর্বশেষ গবেষণায় সিবিএস ধারণা করছে, ডাচদের উচ্চতা কমে যাওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে অভিবাসন। গত কয়েক দশকে বিপুল সংখ্যক খাটো জাতির মানুষ নেদারল্যান্ডসে অভিবাসী হয়েছে। তাদের সন্তানরা ডাচদের তুলনায় খাটো।
তবে বংশপরম্পরায় নেদারল্যান্ডস বসবাসরত বাবা-মায়েদের সন্তানরাও এখন কম উচ্চতা নিয়ে জন্মাচ্ছে। কিছু বিজ্ঞানীর ধারণা, ২০০৭ সালের অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবও ডাচদের উচ্চতা কমানোতে ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের মতে, আর্থিক সংকটের সময় জন্ম নেওয়া শিশুরা ঠিকমতো পুষ্টি পায়নি। এছাড়া আমেরিকায়ও মানুষের উচ্চতা কমতে থাকায় ধারণা করা হচ্ছে, অস্বাস্থ্যকর ফাস্ট ফুডও উচ্চতা কমায় অন্যতম প্রভাবক হতে পারে।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান