দেশে এশিয়ান হাতির 'মৃত্যুঘণ্টা', ছয় দিনে প্রাণ হারিয়েছে চারটি
এশিয়ান হাতির বিচরণ আছে বিশ্বে এমন দেশের সংখ্যা মাত্র তেরোটি। বাংলাদেশে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, সিলেট বিভাগ ও শেরপুরে এই বিরল প্রজাতির হাতিটিকে দেখা যায়।
কিন্তু গত ছয় দিনে এ নিয়ে সারাদেশে চারটি এশিয়ান হাতির মৃতদেহ পাওয়া গেছে। সবকটি হাতিই মারা গেছে মানুষের পাতা ফাঁদে অথবা গুলিতে।
সর্বশেষ শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে আরও একটি এশিয়ান হাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী।
তিনি বলেন, "সকালে স্থানীয়রা ধানক্ষেতের পাশে একটি হাতিকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে প্রশাসনকে খবর দিয়েছে।"
সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের হাতে হাতির মৃত্যুর ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। খাবারের খোঁজে পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতি মারা পড়ছে মানুষের পাতা ফাঁদে অথবা গুলিতে। এরকম ঘন ঘন হাতি মারা যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চলতি মাসের ৬ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত মাত্র ছয় দিনে চারটি হাতি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলে তিনটি ও শেরপুরে একটি হাতি মারা গেছে।
বন্যপ্রাণী বিষয়ক সাংবাদিক ও সংরক্ষণকর্মী আমিনুল ইসলাম মিঠু টিবিএসকে বলেন, "দেশে হাতি বিলুপ্তির সময় এসে গেছে৷ একদিন আগে কক্সবাজারের ইদগায় এক নিরীহ হাতির প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আজ (হাতি) মারা গেলো বাঁশখালীতে। হাতিকে ভয়ঙ্কর ও আতঙ্কের প্রাণী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী।"
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সাল থেকে গত ১৭ বছরে মানুষের হাতে হত্যার শিকার হয়েছে ১১৮টি হাতি। এর মধ্যে গত ছয় বছরে হত্যা করা হয়েছে ১৯টি প্রাণীকে, যাদের মধ্যে ১১টি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট ও ৬টি সরাসরি গুলি খেয়ে মারা গেছে।
সেইভ দ্য নেচারের সভাপতি মোয়াজ্জেম রিয়াদ বলেন, "আমরা শেরপুরে হাতি হত্যার প্রতিবাদ করছিলাম। তখনই খবর এলো বাঁশখালীর। হাজার হাজার মাইল জুড়ে বনের জমি দখল করে চাষাবাদ হচ্ছে।
"আর সেই জমিতে যাতে হাতি আসতে না পারে সে জন্য পেতে রাখা হয় বৈদ্যুতিক ফাঁদ। হাতির পাল নিজেদের পথ দিয়ে যাবার সময় বৈদ্যুতিক ফাঁদে পরে মারা যাচ্ছে বেঘোরে।"
হাতির এরকম হত্যাযজ্ঞে কর্তৃপক্ষের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখতে না পেয়ে বন বিভাগকেও দুষলেন মোয়াজ্জেম রিয়াদ। তিনি বলেন, "পরিকল্পিতভাবে এমন নির্মম বন্যপ্রাণী হত্যাকাণ্ডে বন বিভাগ মৌন সম্মতি দিয়ে যাচ্ছে। বনের মাঝে যদি হাতি থাকতে না পারে তবে হাতি কোথায় যাবে?"