পাবনায় মেডিকেল কলেজ আছে, নেই হাসপাতাল
পাবনায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রায় এক যুগ পেরিয়ে গেলেও স্থাপিত হয়নি কলেজ সংলগ্ন কোনো মেডিকেল হাসপাতাল।
হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিতে পারবে, মেডিকেল কলেজের কাছে এমন কোনো হাসপাতাল না থাকায় পাবনা মেডিকেল কলেজের শত শত শিক্ষার্থী তাদের একাডেমিক পাঠকে ব্যবহারিক স্বাস্থ্যসেবার সাথে যুক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
এ কলেজের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নি করতে ছুটতে হয় প্রায় ছয় কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. এ. বি. মির্জ্জা মোঃ আজিজুল ইসলাম ২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর পাবনা মেডিকেল কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এ জন্য পাবনা মানসিক হাসপাতালের জমি থেকে ৩০ একর জমি মেডিকেল কলেজের নামে বরাদ্দ নেওয়া হয়।
২০১৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলেজটি উদ্বোধন করেন। সেই থেকে এ কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়। বর্তমানে এ কলেজে ২১০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছেন।
পাবনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, প্রফেসর ডা. বুলবুল হাসান জানান, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপনের জন্য কলেজ থেকে বার বার মন্ত্রণালয়কে পত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাজটি এগিয়েও শেষ হচ্ছে না।
কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শফিকুল হাসান বলেন, "এখানে হাসপাতাল হলে মানুষকে সেবা দেওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে আমাদের। কিন্তু গত এক দশকে হাসপাতাল স্থাপনের জন্য এখানকার একটি ঘাসও তোলা হয়নি। মনে হয় না, অবসরে যাবার আগে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল দেখে যেতে পারবো!
মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. আরমান আলী বলেন, "সব ধরনের সুযোগ সুবিধা এ কলেজে রয়েছে। প্র্যাকটিক্যাল করার জন্য ল্যাব রয়েছে। প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসও হচ্ছে। কিন্তু বড় অন্তরায় হলো প্রশিক্ষণ গ্রহণের ক্ষেত্রে। ইন্টার্নি করতে প্রায় ছয় কিলোমিটার ভাঙ্গাচোরা রাস্তা পাড়ি দিয়ে যেতে হয় সদর হাসপাতালে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত বিড়ম্বনার।"
আরেকজন ইন্টার্ন শিক্ষার্থী মাসুম হোসেন বলেন, "পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল না থাকায় প্রকৃতভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। কলেজে আমরা যে শিক্ষকদের কাছে হাতে-কলমে শিক্ষা গ্রহণ করি, সদর হাসপাতালে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে তাদের পাই না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের প্রশিক্ষণ নিতে হয় জুনিয়র কনসালট্যান্টদের কাছ থেকে।"
পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক কার্যকরী সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, "বহু ত্যাগ ও তিতিক্ষার পর পাবনাতে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত হাসপাতাল নির্মাণ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া ছাড়াও জেলার মানুষ উন্নত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সামান্য রোগের জন্যও ঢাকা বা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দৌড়াতে হচ্ছে।"
পাবনার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি দ্রুত স্থাপনের জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তবে এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রফেশনাল পরীক্ষায় মেডিকেল কলেজটির শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করছে। গত বছর, এই মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষার্থী ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে।