এক টাকার ভাসমান বাজার
রাঙামাটির সুবলং বাজারে সদাই কিনতে গিয়েছিলেন জোনাকি ত্রিপুরা। বললেন, "মেম্বারের মাধ্যমে জানতে পারলাম এক টাকায় প্রায় হাজার টাকার পণ্য পাবে। তাই না এসে পারলাম না। আমি অনেককিছু কিনেছি এই এক টাকার বাজার থেকে।"
গেল শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখি বাজারে অনেক মানুষের ভিড়। কাল সকালই সারি সারি অনেক নৌকা ভিড়েছিল বাজারের গায়ে। নৌকায় ছিল কম্বল, লুঙ্গি, থামি, আটা, সুজি ইত্যাদি অন্তত ২০ রকমের পণ্য। বাজারে আসা খেটে খাওয়া মানুষেরা মাত্র এক টাকা দিয়ে তাদের পছন্দের পণ্যটি কিনতে পারছিল। কম্বল বা চপ্পলও পাওয়া যাচ্ছিল ওই একই দামে। লোকের নিশ্চয়ই মনে পড়ছিল, শায়েস্তা খাঁর আমলের কথা; তখন যে টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত!
শুধু সুবলং বাজারই নয়, রাঙামাটির আরো কয়েকটি বাজারের ধারে বসেছিল এক টাকার ভাসমান বাজার। উদ্যোগটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দের। এ ভাসমান বাজার পালা করে চলবে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, পাহাড়ের খেটে খাওয়া কম আয়ের মানুষের কথা ভেবেই এ উদ্যোগ। শনিবারের পরদিন মানে রোববার এ বাজার বসেছিল জুরাছড়ির যক্ষাবাজারেও। সোমবার বসে বিলাইছড়িতে। ১৪ ডিসেম্বর বাদ দিয়ে ১৫ ডিসেম্বর বসছে বরকলে আর ১৮ ডিসেম্বর হরিণা বাজারে। মাত্র এক টাকায় প্রয়োজনের পণ্যটি কিনতে পেরে দারুণ খুশি ক্রেতারা।
বিদ্যানন্দের বোর্ড মেম্বার মোঃ জামালউদ্দিন বলেন, "আমরা সমতলে এই 'এক টাকায় বাজার' নিয়মিত করে থাকি। পার্বত্য চট্টগ্রামে খাগড়াছড়ির পর এবার এটি হচ্ছে রাঙামাটিতে। চারটি সেনা জোনের সাবির্ক সহযোগিতায় এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। মূলত, শীতের কথা মাথায় রেখেই এ সময় এই আয়োজন। আমাদের উদ্দেশ্য শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তাছাড়া এ সময় হ্রদের পানি কমতে শুরু করায় আয় রোজগারও কমে গেছে মানুষের। ফলে খাদ্যপণ্যও থাকছে বাজারে।"
এক টাকার বাজারে আসা ক্রেতা খলিল উদ্দিন বলেন, "বিদ্যানন্দ ও সেনাবাহিনীর এমন উদ্যোগে সাধারণ মানুষের অনেক উপকার হচ্ছে। এ ধরনের উদ্যোগ আরও বেশি নেওয়া প্রয়োজন।"
সুবলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তরুণ জ্যোতি চাকমা বলেন, "আমার এলাকায় এই ধরনের একটি উদ্যোগের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। প্রান্তিক মানুষ যেন এমন সুযোগ আরো পায়, এটাই চাওয়া।"
জামালউদ্দিন আরো বললেন, "প্রত্যেক বাজারে ২০০ পরিবারকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়ের সুযোগ দেয়া হয়। সে হিসেবে পাঁচটি বাজারের মাধ্যমে এক হাজার পরিবারকে এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তবে আমাদের কাছে বেশি পণ্য থাকায় কোথাও কোথাও অধিক সংখ্যক লোকও সুবিধাটি পাচ্ছে। গত বছর প্রবারণা পূর্ণিমার সময় আমরা এক টাকার বাজার আয়োজন করেছিলাম। তখন দারুণ সাড়া পাই। তবে রাঙামাটির ভিন্নতা হলো, এখানে আমরা কাপ্তাই হ্রদে বাজার বেছে নিয়েছি। তাই বাজারগুলো ভাসমান।"
গত শনিবার ভাসমান বাজার উদ্বোধনকালে রাঙামাটির রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেকুর রহমান বলেন, "দুর্গম এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সহজলভ্য করতেই এ আয়োজন। ভবিষ্যতেও প্রান্তিক মানুষের পাশে থেকে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করবে সেনাবাহিনী।"