গত এক বছরে দেশে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে’ নিহত হয়েছে ৮২ জন: এইচআরএসএস
দেশে ২০২১ সালে গত এক বছরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক 'বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে' ৮২ জন নিহত হয়েছে। একই সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে/ সন্দেহে ৭ জনকে উঠিয়ে নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।
বছরের শেষদিন শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ১৭৩টি হামলায় এ বছর 'সাংবাদিক' আহত হয়েছে অন্ততপক্ষে ১২৭ জন, গ্রেপ্তার হয়েছে ২০ জন। এছাড়াও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে ৩৪ জন এবং হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন ৫২ জন সাংবাদিক। একই সময়ে আশঙ্কাজনকভাবে, ডিজিটাল সুরক্ষা আইন ২০১৮ এর অধীনে দায়ের করা ২২১ টি মামলায় ১৮৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি বলছে, স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক অনেক সাফল্য অর্জন করলেও আইনের শাসন, গনতন্ত্র ও জনগনের ভোটাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সামাজিক নিরাপত্তা, নারীর অধিকারসহ সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আশাব্যঞ্চক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। ২০২১ সালের প্রায় অর্ধেক সময় লকডাউন থাকলেও বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল উদ্বেগজনক ও হতাশাব্যঞ্চক। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
সেখানে আরও বলা হয়েছে, "বিগত বছরগুলোর মতো ২০২১ সালের বার্ষিক মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ বছরেও আইন শৃংখলা বাহিনী কর্তৃক বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, প্রশাসনের হেফাজতে নির্যাতন, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আইনবহির্ভূত আচরণ, ধরে নিয়ে যাওয়ার পর গুম করার অভিযোগ, গণপিটুনীতে মানুষ হত্যা অব্যাহত। বিশেষ করে এ বছরের মার্চ মাসে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং ব্রাম্মনবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় ১৪ জন (হফোজতরে দাবি ১৭ জন) মানুষ আইন শৃংখলা বাহিনী কর্তৃক বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়।"
প্রতিবেদনে মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত তুলে ধরা হয়।
সেখানে বলা হয়, "ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)" কর্তৃক ৩৮ টি হামলার ঘটনায় শারীরিক নির্যাতন ও গুলি করে ১৯ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয়েছে, আহত করা হয়েছে ১০ জনকে এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩০ জন।
"এ বছরে ৪৬০ টি 'রাজনৈতিক সহিংসতার' ঘটনায় নিহত হয়েছে ৮২ জন, আহত হয়েছে ৪৩৫২ জন এবং গুলিবিদ্ধ হয়েছে ১৯৪ জন, যার অধিকাংশ ঘটনায় সরকার দলীয়কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটেছে। এদিকে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির (এলইএ) দ্বারা অমানবিক নির্যাতন ও গুলি চালানোর মোট ১৭৪ টি ঘটনায় ২৪৮৮ জন আহত হয়েছে, ৩২৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে এবং ৮৯ জন নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে।"
২০২১ সালে ৬৪৪টি নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৪৩ জন এবং আহত হয়েছে ৫৪০১ জন । এ বছরে ৪৭ টি শ্রমিক র্নিযাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৭ জন, আহত হয়েছে ২০১ জন এবং গুলিবিদ্ধ ৮৪ জন। এছাড়াও 'গণপিটুনির' ৮৩ টি ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪৮ জন এবং আহত হয়েছে ৮৫।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে জনগনের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে যাবে।