ইক্যুইটির ২৫ শতাংশ বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে রপ্তানিকারি প্রতিষ্ঠান
রপ্তানিকারি প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান তাদের এক্সপোর্ট রিটেনশন কোটায় (ইআরকিউ) স্থিতি থাকা সাপেক্ষে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের জন্য বিনিয়োগ করতে পারবে।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের পাঁচ বছরের বার্ষিক গড় রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশ বা সর্বশেষ নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনের প্রকাশিত নিট সম্পদের ২৫ শতাংশের মধ্যে যেটি কম, সে পরিমাণ অর্থ বিদেশে ইক্যুইটি হিসেবে বিনিয়োগ করতে পারবে।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ ইনভেস্টমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে। 'মূলধনি হিসাব লেনদেন (বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগ) বিধিমালা, ২০২২' শীর্ষক প্রজ্ঞাপন প্রসঙ্গে একটি নির্দেশনা জারি করে দেশের সব অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে পাঠিয়েছে তারা।
নির্দেশনায় বলা হয়, ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৪৭ এর ২৭ নম্বর ধারার অধীনে মূলধনী হিসাবের লেনদেন (বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগ) বিধিমালা, ২০২২ জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
বিধিমালা অনুযায়ী আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদিসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ১৫ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি রাখা হয়েছে। কমিটির সভাপতি হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে অবহিত করাসহ পত্রের কপি আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হবে।
এই উদ্যোগ বিদেশি বিনিয়োগ সহজতর করবে। তবে, বিদেশে অতিরিক্ত বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, বলেছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এমন জায়গায় বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না যা দেশের রপ্তানির জন্য চ্যালেঞ্জ বা প্রতিযোগিতা বাড়াতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা যদি ইথিওপিয়ায় একটি তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপন করে, তাহলে এটি আমাদের জন্য আরও প্রতিযোগিতা তৈরি করতে পারে, কারণ তারা মার্কিন বাজারে শুল্কমুক্ত রপ্তানি করতে পারে।"
"কেউ যদি আফ্রিকার কোনো দেশে তুলা উৎপাদনের জন্য বিনিয়োগ করে, বা অন্য কোনো দেশের রাসায়নিক শিল্পে বিনিয়োগ করে, তাহলে তাতে আমরা উপকৃত হবো," যোগ করেন তিনি।
তবে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইক্যুইটি বিনীয়োগের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশের বেশিও করতে পারবে।
বর্তমানে দেশের রপ্তানিকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬টি প্রতিষ্ঠানের বিদেশে বিনিয়োগ রয়েছে। আগামী দুই ফেব্রুয়ারি আরও ছয়টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন কমিটির সভায় উপস্থাপিত হবে।
এছাড়া, বিদেশে কোম্পানি গঠনের বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা বিধিমালাতে উল্লেখ রয়েছে। বিদেশে গঠিত কোম্পানির সব পাওনা, যেমন- মুনাফা বা লভ্যাংশ, সুদ, শেয়ার বিক্রয়লদ্ধ অর্থ, বিনিয়োগ বিলুপ্তির ফলে অবশিষ্ট অর্থ, বেতন, রয়্যালটি, কারিগরি প্রজ্ঞান ফি, পরামর্শ ফি, কমিশন, ইত্যাদি অর্জিত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে পাঠাতে হবে।
বিনিয়োগের অপব্যবহারকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় মানি লন্ডারিং হিসেবে গণ্য হবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।