বীর মুক্তিযোদ্ধা শফি হত্যা: ১৯ বছর পর দুই খুনির ফাঁসি কার্যকর
ঊনিশ বছর আগে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার উত্তর আমবাগান রেলওয়ে কোয়ার্টারে নিজ ঘরেই নির্মমভাবে খুন হন বীর মুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন। গত মঙ্গলবার (৮ মার্চ) রাতে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের এই ঘটনার জন্য দায়ী দুই খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
সেদিন রাত সাড়ে ১১টায় ফাঁসি কার্যকর করা হয়। বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেলসুপার শাহজাহান আহমেদ।
ফাঁসি হওয়া দুই ব্যক্তি- চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার দক্ষিণ আমবাগানের বাসিন্দা প্রয়াত ইউনুছ হাওলাদারের ছেলে শিপন হাওলাদার ও লালখানবাজার ডেবারপাড় এলাকার বাসিন্দা ঈদুন মিয়া সরকারের ছেলে নাইমুল ইসলাম ইমন। ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করার পর শিপন হাওলাদার ও নাইমুল ইসলাম ইমনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দুই আসামিই ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণের অনুসারী।
নিহত শফি উদ্দিন ছিলেন রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী-১ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী। এছাড়া তিনি স্থানীয় রেলওয়ে আমবাগান এলাকার আইনশৃংখলা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিনকে যখন নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, তখন তার স্ত্রী মাহমুদা বেগমের বয়স ছিল ৫১ বছর ৬ মাস। বর্তমানে মাহমুদা বেগম বয়সের ভারে কাবু। এখন তার বয়স ৭০ বছর।
স্বামীর হত্যাকারীদের দণ্ড কার্যকরে সন্তোষ জানিয়ে মাহমুদা বেগম বলেন, "বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষায় ছিলাম স্বামী হত্যার বিচার পাওয়ার আশায়। অবশেষে বিচার পেলাম।"
খুলশী থানা সূত্রে জানা গেছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় ২০০৩ সালের ১৪ জুন নগরীর খুলশীর উত্তর আমবাগান রেলওয়ে কোয়ার্টারের ৩৬/এ বাসায় গুলি করে খুন করা হয় শফি উদ্দিনকে। শিপন, ইমন, হেলাল ওরফে জিএস হেলালসহ সন্ত্রাসীরা নৃশংসভাবে খুন করেন তাকে। ওই সময় রক্তমাখা শার্ট গায়ে অস্ত্রসহ ধরা পড়েন শিপন হাওলাদার।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মাহমুদা বেগম বাদী হয়ে খুলশী থানায় হত্যা মামলা করেন। ২০০৪ সালের ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২৩ জনের সাক্ষ্য নিয়ে এ হত্যা মামলায় শিপন ও ইমনকে ফাঁসি, সাত আসামিকে যাবজ্জীবন এবং চারজনকে খালাস দেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণ এবং তার ছেলেসহ ছয়জনকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফরহাদ, মারুফ শিকদার সাজা ভোগ করে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. আসাদুর রহমান বলেন, "সাজার বিরুদ্ধে আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেছিলেন। পরে তা খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। সুপ্রিম কোর্টে তাদের ফাঁসির সাজা বহাল রাখার চিঠি গত ১৬ ডিসেম্বর কুমিল্লা কারাগারে পৌঁছায়। ৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করা হয় দুইজনের পরিবারের পক্ষ থেকে, সেটিও খারিজ হয়ে যায়। এরপর ধারাবাহিকভাবে তাদের ফাঁসি কার্যকরের দিকে এগিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ।"