চীনের সর্বাধুনিক জে-২০ স্টিলথ ফাইটার কিনতে চায় পাকিস্তান
চীন থেকে অত্যাধুনিক জে-১০সি ফাইটার জেট কিনেছে পাকিস্তান। এখন ইসলামাবাদের নজর আরও সর্বাধুনিক পঞ্চম প্রজন্মের জে-২০ স্টিলথ ফাইটার ক্রয়ে।
আগামী ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের উদযাপন অনুষ্ঠানে নতুন কেনা ছয়টি জে-১০সি ফ্লাইপাস করবে বলে জানাচ্ছে ভূ-রাজনৈতিক ও সামরিক গণমাধ্যম ইউরেশিয়ান টাইমস। গণমাধ্যমটি পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদের বরাতে একথা জানায়।
সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে পাকিস্তানের মিনহাস বিমানঘাঁটিতে ছয়টি জে-১০সি পৌঁছানোর কথা জানানো হয়। এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রশিদ আহমেদ।
এসময় তিনি সকলকে চমকে দিয়ে বলেন, "আমরা জে-১০সি পেয়েছি... এখন ইনশাল্লাহ এমন সময় আসবে, নিশ্চিত বলতে পারি না সেটা কখন, তবে বিশ্বের সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান জে-২০-ও একদিন পাকিস্তানে আসবে।"
সপ্তাহখানেক আগেই পাকিস্তানি ও তুর্কি কর্মকর্তারা জানান, দুই দেশ যৌথভাবে স্টিলথ প্রযুক্তির জেট তৈরির কাজ শুরু করেছে। তারপরেই এমন মন্তব্য করলেন রশিদ। এ থেকে কেউ কেউ ধারণা করছেন, হয়তো এ প্রস্তাব চীনের পক্ষ থেকেই এসেছে। কারণ, গুরুত্বপূর্ণ সমরাস্ত্রে ঘনিষ্ঠ মিত্র পাকিস্তানকে নির্ভরশীল রাখার ওপরই নির্ভর করছে চীনের দীর্ঘমেয়াদি ভূ-রাজনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ।
জে-২০ চীনের তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ প্রযুক্তির ফাইটার। স্টিলথ প্রযুক্তি শত্রুর রাডারকে অনেকখানি ফাঁকি দিতে সক্ষম। রয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির অন্যান্য এভিয়োনিক্স ও অস্ত্রসজ্জা।২০২০ সালে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন শুরু হয়। বর্তমানে শুধু চীনের পিপলস লিবারেশন এয়ারফোর্স-ই বিমানটির একমাত্র পরিচালক।
অতীতে চীনের সর্বাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র পাকিস্তানকে দেওয়ার নজির রয়েছে। বেইজিং সহজ শর্তের প্রতিরক্ষা ঋণের আওতায় ইসলামাবাদের কাছে যুদ্ধ সরঞ্জাম বিক্রি করে থাকে।
জে-২০ কি পাকিস্তান কিনতে পারবে?
পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারক চীন। ভারতের বিরুদ্ধে উপমহাদেশে চীনের কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষার মিত্র পাকিস্তান। সদ্য কেনা জে-১০সি বিমানও ভারতের ফ্রান্স থেকে রাফায়েল ফাইটার জেট কেনার প্রতিক্রিয়ায় করা হয় বলে আগেই জানিয়েছিলেন রশিদ আহমেদ।
জে-২০সি সমরাঙ্গনে 'মাইটি ড্রাগন' নামেও পরিচিত। ভঙ্গুর দশার অর্থনীতি নিয়ে পাকিস্তান এত দামি (১০-১২ কোটি ডলার প্রত্যেকটি) বিমান ঋণের মাধ্যমেও ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে কিনা- তা নিয়ে রয়েছে জোর সন্দেহ। এ বাস্তবতায় দেশটির হয়তো জেটটির মালিকানা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
তাছাড়া, এপর্যন্ত কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে জে-২০ ফাইটার জেট বিক্রির আগ্রহ প্রকাশ করেনি বেইজিং। চীন এই সর্বাধুনিক বিমানের প্রযুক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার ভার কেবল নিজের হাতেই রাখতে চায়। পঞ্চম প্রজন্মের এফ-২২ স্টিলথ ফাইটারের ক্ষেত্রে একই নীতিতে চলে আমেরিকা।
এর আগে ইসরায়েল ও জাপানসহ আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্ররা এফ-২২ কিনতে চাইলেও, তা বিক্রি করেনি আমেরিকা।
এর আগে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে জে-২০ বিমান রপ্তানিতে আইনি নিষেধাজ্ঞার কথা জানান বেইজিংয়ের কৌশলগত মিসাইল ফোর্সের সাবেক কর্মকর্তা সঙ ঝংপিং। তিনি স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসময় বলেন, "শত্রুর হাতে জে-২০ ফাইটারের গুরুত্বপূর্ণ কার্যকারিতার তথ্য চলে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে চীনের সর্বাধুনিক এ প্রযুক্তি রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।"
২০০০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে এই একই যুক্তিতে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ (কংগ্রেস) এফ-২২ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
- সূত্র: ইউরেশিয়ান টাইমস