পাওয়ার প্লে: জ্বালানিতে নিরাপত্তাহীনতা যেকারণে রয়েই যাবে
রাশিয়ার রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য। বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল ও জ্বালানির শীর্ষ উৎস দেশটি। শুধুমাত্র গত দুই দশকে ৪ লাখ কোটি ডলার মূল্যের তেল ও গ্যাস বিক্রি করেছে মস্কো। এই অর্থের একটি বড় অংশ খরচ করেছে সামরিক বাহিনীর পেছনে। কিনেছে ট্যাংক, যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র, যার মোকাবিলা এখন ইউক্রেনীয়দের করতে হচ্ছে।
কেবল সামরিক বাহিনী পেট্রোডলারে সুসজ্জিত হয়েছে, তা নয়। রাশিয়ায় সরকার ঘনিষ্ঠ অভিজাত ব্যবসায়ী, রাজনীতিকরা এই বাণিজ্যের সুবিধাভোগী হয়েছেন। তাদের অনেকে বিপুল সম্পদ পাচার করেছেন বিশ্বের নানান প্রান্তে। ক্যারিবিয় ও ভূমধ্যসাগরের করস্বর্গ দ্বীপরাষ্ট্রে খুলেছেন ফ্রন্ট কোম্পানি, কিনেছেন বিলাসবহুল ইয়ট, নাইটক্লাব, ভিলা ইত্যাদি।
রাশিয়ার এই নয়া-অভিজাতরা পুতিন শাসনামলে ফুলেফেঁপে উঠেছেন এবং তারাই প্রেসিডেন্ট মহাশয়ের সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণের সবচেয়ে বড় সমর্থক।
রাশিয়া বিশ্বের ১০-২৫ শতাংশ তেল, গ্যাস ও কয়লার মতো প্রধান জ্বালানি পণ্য রপ্তানি করে থাকে। বিশ্বের অনেক দেশ যে জন্য মস্কোর ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে, ইউরোপের এ দুর্বলতার কথা উল্লেখযোগ্য।ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপকে তাই হতচকিত করেছে। রাশিয়ার ওপর নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর, তারা এখন নিজেদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে প্রমাদ গুনছে।
জ্বালানি শোধনাগার, তেল-গ্যাস ডিপো ইত্যাদির চেয়ে এখন সৌর, বায়ু ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকে নাটকীয় হারে বৃদ্ধির নতুন তাগিদ অনুভব করছে তারা। তবে চাইলেই তো নবায়নযোগ্য শক্তিতে পুরোপুরি নির্ভর হওয়া যায় না, এজন্য লাগবে প্রচলিত জ্বালানিকে পুরোপুরি প্রতিস্থাপনের সক্ষমতা, তা হওয়ার আগপর্যন্ত জীবাশ্ম জ্বালানিতে নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। ফলে ইউরোপের সামনে একনায়কদের মেজাজ-মর্জি নিয়ন্ত্রিত জ্বালানি সংকট কাটিয়ে ওঠার রাস্তাও বন্ধুর।
শুধু ইউরোপ নয়, জ্বালানির মতো অপরিহার্য ও তীব্র চাহিদার পণ্যের দর বৃদ্ধি পুরো বিশ্বই অনুভব করছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন শীর্ষ তেল ও গ্যাস উৎপাদক হওয়ার পরও, লস এঞ্জেলসে প্রথমবারের মতো প্রতিগ্যালন ৬ ডলার মূল্যে বিকোচ্ছে পেট্রোল। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে জ্বালানি বাজারের ট্রেডারদের শঙ্কা, ইউরোপে দেখা দিবে ডিজেল স্বল্পতা। রাশিয়া সরবরাহ বন্ধ করবে- এই ভীতি থেকে আগামী শীতে গ্যাস রেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জার্মানি। এশিয়ার আমদানিকারক দেশগুলো বাড়তি মূল্যের কারণে তাদের বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতির বিপদ সামলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, বলাইবাহুল্য এই অভিঘাত সামলানো তাদের ক্ষেত্রে কষ্টকরই হবে।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জ্বালানি বাজার এখন এতোটা অস্থিতিশীল যে- যেকোনো ঘটনার রেশ আরো রেকর্ড মাত্রায় ঊর্ধ্বমুখী করছে মূল্য। যেমন গত সপ্তাহে কৃষ্ণসাগর থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত একটি পাইপলাইন ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং সৌদি আরবের জ্বালানি স্থাপনায় হুথি বিদ্রোহীদের আক্রমণের পর অপরিশোধিত তেল ব্যারেলপ্রতি ১২২ ডলারে উন্নীত হয়।
বাজারের এই হেলদোলে সরকারগুলো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আরো জীবাশ্ম জ্বালানির সন্ধানে সকল সরবরাহকের দ্বারে দ্বারে ছুটছে। এই মুহূর্তে তারা জীবাশ্ম উৎসের ব্যাপক দূষণ সম্পর্কে জেনেও নিরুপায়, প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকার নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে তাদেরকে জ্বালানি নিরাপত্তাকেই অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে।
পশ্চিমাদের উৎসাহে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উত্তোলক কোম্পানি সৌদি আরবের- আরামকো তাদের বার্ষিক বিনিয়োগের অঙ্ক বছরে চার থেকে পাঁচ হাজার কোটি ডলার করার উদ্যোগ নিচ্ছে।
খনিজ তেলে সমৃদ্ধ আরেকটি দেশ দক্ষিণ আমেরিকার ভেনেজুয়েলা। দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় সীমিত দেশটির তেল অর্থনীতি। নিষেধাজ্ঞার আগে ২০০৫ সালে কারাকাস বিশ্বের ৪ শতাংশ অপরিশোধিত তেল বা ক্রুডের যোগান দিত। এখন কারাকাসের সাথে সম্পর্কের বরফ গলানোর ইঙ্গিতও দিচ্ছে ওয়াশিংটন। জ্বালানি সরবরাহ পেতে বাইডেন প্রশাসন একনায়ক নিকোলাস মাদুরোকে তেল রপ্তানিতে ছাড় দেওয়ার বিষয়েও ভাবতে পারে।
কবে নাগাদ পশ্চিমারা জীবাশ্ম জ্বালানি পুরোপুরি পরিত্যাগ করতে পারবে?- দীর্ঘমেয়াদি এ প্রশ্নটি এখন অনেকেই করছেন। প্রশ্নটি বেশ জটিল- যেমন চলতি মাসে ইউরোপিয় ইউনিয়ন তার জ্বালানি কৌশল ঘোষণাকালে ২০৩০ সাল নাগাদ রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যমাত্রা জানিয়েছে। এই ঘোষণা প্রমাণ করে, উল্লেখিত সময়ের আগে ইইউ চাইলেও রাশিয়াকে এড়াতে পারবে না।
যদিও ইইউ জানিয়েছে, একইসঙ্গে আরো জোরদার করা হবে নবায়নযোগ্য উৎসের শক্তি ও জ্বালানি উৎপাদন। রাশিয়ার ওপর নির্ভর করার দুর্বলতা স্পষ্ট হওয়ায়, সম্পূর্ণ জ্বালানি স্বনির্ভরতা অর্জনে ফ্রান্স আরো ছয়টি পরমাণু চুল্লি নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। যত সম্ভব দ্রুতগতিতে নতুন প্রজন্মের রিঅ্যাক্টর (চুল্লি) নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটেনও। গত ২১ মার্চ দেশটি জানায়, বিংশ শতকের ব্রিটিশ রিঅ্যাক্টরগুলির চেয়ে এগুলো হবে যুগান্তকারী। কর্তৃপক্ষ যেন পুতিনকে উদ্দেশ্য করেই বলে, অত্যাচারী স্বৈরশাসকদের ওপর জ্বালানির জন্য নির্ভরতাকে দূর করবে নতুন এ প্রযুক্তির ব্যবহার।
জলবায়ু পরিবর্তনের গতি কমাতে জ্বালানি বদলের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, ভূরাজনীতির বাস্তবতা তাকে ত্বরান্বিত করবে, কিন্তু ঝুঁকিমুক্ত করবে না। এই পরিবর্তন কিছু দেশের অর্থনীতির বিকাশ ব্যাহত করবে, আবার নতুন নির্ভরশীলতা তৈরি হবে অন্য দেশের ওপর।
নির্ভরতার সম্পর্ক বিশ্লেষণে, তেল ও গ্যাসসহ শক্তি উৎপাদন, বিদ্যুতায়ন ও পরিবহন শিল্পে ব্যবহৃত ধাতুর পেছনে খরচকে তুলে ধরেছে দ্য ইকোনমিস্ট। প্রভাবশালী গণমাধ্যমটির মতে, কার্বন নিঃসরণকারী জ্বালানি থেকে বিশ্ব যত দূরে সরে যাবে, ততোই কমবে এর পেছনে বৈশ্বিক খরচের পরিমাণ। বর্তমানে বৈশ্বিক জিডিপির ৫.৮ শতাংশ এর পেছনে খরচ হলেও, ২০৪০ সাল নাগাদ তা কমে হবে ৩.৪ শতাংশ। তারপরও এই খরচের অর্ধেকের বেশিই যাবে স্বৈরশাসকদের পকেটে। এরমধ্যে রয়েছে নবায়নযোগ্য উৎসের বৈদ্যুতিক যান, ব্যাটারি ও যন্ত্রাংশ উৎপাদনের ব্যয়। অর্থাৎ, লিথিয়াম ও কপারের মতো ধাতু আমদানির সবচেয়ে বড় অংশ হবে অগণতান্ত্রিক দেশ থেকেই। এসব ধাতু রপ্তানিতে আগামীর অগ্রসর দেশগুলোকে বলা হচ্ছে 'ইলেক্ট্রোস্টেটস'।
ইকোনমিস্টের ভবিষ্যতের আভাস অনুসারে, শীর্ষ ১০টি ইলেক্ট্রোস্টেটস মোট খনিজ সরবরাহের ৭৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করবে। অর্থাৎ এসব দেশেই ধাতুগুলো উত্তোলন ও পরিশোধনের শিল্প কেন্দ্রীভূত হবে, যা আসলে নতুন বিপদের পদধ্বনি।
এক কথায়, কোনো ইলেক্ট্রোস্টেটের একনায়ক চাইলে পুতিনের মতো করেই আন্তর্জাতিক বাজারকে অস্থিতিশীল করতে পারবেন।
এই বাস্তবতায় দুটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। প্রথমত, তেল শিল্পের ক্রমহ্রাসমান ভূরাজনীতি। পরিবেশগত কারণ এবং উচ্চ খরচের কারণে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো জীবাশ্ম জ্বালানিতে বড় পরিসরে নতুন বিনিয়োগকে কমিয়ে আনছে, অনেক সময় প্রত্যাহারও করছে। এতে শিল্পটির উত্তোলন ক্ষমতা নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়ে চলেছে। একইসময়, ২০৪০ সাল নাগাদ তেল রপ্তানিকারকদের জোট ওপেক প্লাসে রাশিয়ার বাজার অংশীদারিত্ব ৪৫-৫৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে, এতে মস্কোর প্রভাব বলয় আরো বিস্তৃত হবে। অন্যদিকে, অ্যাঙ্গোলা ও আজারবাইজানের মতো যেসব দেশে খনি পরিচালনার খরচ বেশি, তাদের রপ্তানি হয়ে পড়বে সীমিত। বিশ্ব মানচিত্রে তখন অধোগামী পেট্রোরাষ্ট্রের ছড়াছড়ি চোখে পড়বে সহজেই।
দ্বিতীয়ত, ইলেক্ট্রোস্টেটগুলো সম্পদের অভিশাপে ভুগবে। বহিঃবিশ্বের সমর্থনে শক্তিশালী হবে একনায়করা। বাড়বে নিপীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘণ। দূষণমুক্ত বিদ্যুতায়নের খনিজগুলোকে বলা হচ্ছে 'সবুজ ধাতু' (গ্রিন মেটাল)- বৈদ্যুতিক অবকাঠামো বিনির্মাণের চাহিদায় আগামী দুই দশকে এসবের মূল্য ও চাহিদা দুই-ই বাড়বে। ২০৪০ সাল নাগাদ এই বাজার ১ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার অনুমান করছে ইকোনমিস্ট। অস্ট্রেলিয়ার মতো কিছু গণতান্ত্রিক দেশ সম্পদের অভিশাপে ভুগবে না। এসব ধাতু আহরণ ও পরিশোধনে প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণও কম রাখতে পারবে। অন্যদিকে, কঙ্গো, গিনি এবং মঙ্গোলিয়ার মতো দুর্বল শাসন কাঠামোর দেশের পক্ষে তা করা সম্ভব হবে না।
মনে রাখা দরকার, উন্নত বিশ্বের জন্য যা আশীর্বাদ, যে সম্পদ স্বৈরশাসকের পকেট ভারী করে- তাই অনেক সময় জনগণের জীবন-জীবিকার জন্য হয়ে ওঠে অভিশাপ। সাম্প্রতিক সময়ে, চিলি ও পেরুর মতো 'সবুজ ধাতু' সমৃদ্ধ দেশে এই খনি শিল্প নিয়েই দেখা দিয়েছে সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা।
দেশে দেশে খনি শিল্পের অশুভ প্রভাব সম্পর্কে জনতা সচেতন হচ্ছে। একারণেই আন্তর্জাতিক খনি কোম্পানিগুলো তাদের স্বত্বাধিকার এই স্রোতের তলে চাপা পড়ার শঙ্কা করছে। উল্লেখ্য, তারা নিজেরা নিষ্পাপ তো নয়ই, বরং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের হাতে রেখে প্রায়ই তারা দুর্বল গণতন্ত্রের দেশে লোভনীয় সব চুক্তি বাগায়। তবে জনরোষের যে শঙ্কায় তারা আছে, সেকারণে 'সবুজ ধাতু' শিল্পে বিনিয়োগ যথেষ্ট কম করছে। গেল বছর জুড়ে একারণেই এসব ধাতুর দাম বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। দর বৃদ্ধির পরিস্থিতিকে আরো জটিল করছে- একই উৎস সন্ধানী চীনের সম্পৃক্ততা। আর বেইজিং সরকারে কে রয়েছে- তা নিয়ে মাথা ঘামায় না। গণতান্ত্রিক হোক বা স্বৈরাচার—সবার সাথে বন্ধুত্বই চীনের নীতি।
সহজ কথায়, পশ্চিমারা চাপ দিলে চীনের সাহায্যেই তা কাটিয়ে উঠতে পারবে যেকোনো গ্রিন মেটালস রপ্তানিকারক দেশের স্বৈরাচারী 'রেজিম'।
সকল কাঁচামাল পণ্যের মতো করেই 'সবুজ ধাতু'র বর্ধিত মূল্য- বাজার প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেবে। সীমিত সরবরাহ মাথায় রেখে, পুনঃব্যবহার (রিসাইকেল) ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বাধ্য হবে অনেক কোম্পানি।
এরমধ্যেই বাজারে আসছে, নতুন ধরনের ছোট আকৃতির পারমাণবিক চুল্লি। বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পে বিশ্বে সুপরিচিত টেসলা ইঙ্ক নতুন ব্যাটারির নকশা করছে। প্রশান্ত মহাসাগরে ফ্রান্স নিয়ন্ত্রিত নিউ ক্যালেডোনিয়া দ্বীপপুঞ্জের সাথে একটি বড় সরবরাহ চুক্তিও করেছে। সেখানেই রয়েছে বিশ্বের এক-দশমাংশ নিকেলের প্রমাণিত মজুদ। চলতি মাসে ব্যারিক নামের একটি কানাডীয় কোম্পানি সব দ্বিধা পেছনে ফেলে পাকিস্তানে একটি কপার খনি উন্নয়নে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে সম্মত হয়েছে।
হাই-ভোল্টেজ সংযোগ স্থাপন:
নবায়নযোগ্য উৎস নির্ভর বিদ্যুতায়নের এই দৌড়ে শুধু বাজারের বেসরকারি কোম্পানিগুলোর এগিয়ে আসা যথেষ্ট নয়, সরকারি পর্যায়েও প্রচেষ্টাকে বহুগুণে বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ, স্বনির্ভরতা একমাত্র উপায় নয়, বরং সরবরাহ পাওয়ার উৎসে বৈচিত্র্য ধরে রাখাই এক্ষেত্রে প্রধান লক্ষ্য। যার অর্থ, অংশীদারিত্বের নয়া সংযোগ। প্রচলিত জ্বালানির ক্ষেত্রেও- তা সমান প্রযোজ্য।
গত ২০ মার্চ থেকে কাতারের সাথে গ্যাস প্রাপ্তি নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু করেছে জার্মানি। ধনী দেশের পরমাণু শিল্পেও নতুন প্রাণস্পন্দন ফেরাতে হবে। নবায়নযোগ্য উৎসের সম্পদ আহরণে জড়িত বহুজাতিক পশ্চিমা কোম্পানিগুলোকে একটি সুষ্ঠু নীতিমালার আওতায় আনতে হবে। বাণিজ্যিক স্বার্থে তাদের পরিবেশ দূষণ বা সম্পূর্ণ একটি বাস্তুসংস্থান বিনষ্টের ছাড়পত্র দিয়ে রাখাও উচিত হবে না।
বৈদ্যুতিক ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে গণতান্ত্রিকভাবে দুর্বল দেশগুলোতে খনি শিল্পের বিকাশ ঘটাতেই হবে। আর তাতে যেন স্থানীয় প্রাণপ্রকৃতি বিপন্ন না হয়, সে দায় এড়াতে পারে না উন্নত বিশ্ব। ধনী দেশের সরকারকে এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই নীতিমালা প্রণয়ন ও তা সকলে যেন মেনে চলে- তা নিশ্চিত করতে হবে। সবশেষে, ইলেকট্রোস্টেট-গুলো যেন খনি কার্যক্রম থেকে ন্যায্য রাজস্ব পায় এবং তা দিয়ে যেন কল্যাণমূলক রাষ্ট্রীয় তহবিল গঠন করতে পারে- তাতে একান্ত সহযোগিতা দিয়ে যেতে হবে।
চ্যালেঞ্জের এই বহুমুখীতা নিশ্চয় এখন আপনার সামনেও স্পষ্ট। এগুলো বাস্তবায়ন যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনই সাহসীকতার বিষয়। কিন্তু, তার বিকল্প কী? সহজ যে রাস্তা, তা বেঁছে নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো কী আবারো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর নির্ভর করতে চাইবে?
- সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট