ফুরিয়ে আসছে অস্ত্র ভান্ডার, আর লড়াই সম্ভব নয়, মারিউপোলে শেষ প্রহর গুনছে ইউক্রেন
একের পর এক রুশ হামলায় শহরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে লাশ। কার্যত মৃতনগরীতে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের দক্ষিণের বন্দর শহর মারিউপোল। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও এত দিন প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলো ইউক্রেনীয় সৈন্যরা। কিন্তু এবার তারা জানিয়েছে, মারিউপোলে সম্ভবত আজই যুদ্ধের শেষ দিন। কারণ যে পরিমাণ অস্ত্র মজুত, তা দিয়ে আর লড়াই করা সম্ভব নয়। যদিও ইউক্রেন সেনাবাহিনীর প্রধান কমান্ডার জানিয়েছেন, মারিউপোলের দখল এখনও তাদের হাতেই রয়েছে।
এর পাশাপাশি ৩৬তম মেরিন ব্রিগেড বিবৃতিতে বলেছে, "৪৭ দিন ধরে বন্দর রক্ষায় সব রকম প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। এবার পিছু হটা ছাড়া আর রাস্তা নেই।'' ইতিমধ্যেই মারিউপোল ঘিরে ফেলেছে রুশ সেনা। তারাও জানিয়েছে, মারিউপোলে এখন আজ়ভস্টাল লৌহ ও ইস্পাত কেন্দ্র এবং বন্দর দখলের লড়াই চলছে। ইউক্রেনের বক্তব্য, শুধু অস্ত্রই যে ফুরিয়ে আসছে তাদের তা নয়, সেই সাথে প্রায় অর্ধেক সেনা আহত। এখনো অঙ্গহানি হয়নি যাদের, তারা এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
এক দিকে ইউক্রেনের মরণপণ লড়াই, অন্য দিকে রাশিয়ার মানবতা লঙ্ঘনের বিষয়টি আজ তুলে ধরেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। তিনি জানিয়েছেন, মারিউপোলে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে রাশিয়া। এত মানুষকে মারার পরেও আক্রমণ থামায়নি। রুশ হামলায় বিপর্যস্ত তিনশোরও বেশি হাসপাতাল। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল দক্ষিণ কোরিয়ার কাছেও অস্ত্র সাহায্য চেয়েছেন জ়েলেনস্কি। দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, অস্ত্র পাওয়া গেলে শুধু সাধারণ মানুষ নন, ইউক্রেনকেও বাঁচানো সম্ভব হবে।
জেলেনস্কির ভাষ্যে, "সামরিক প্রযুক্তিরও প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের সাহায্য করতে পারে।" যদিও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী যুদ্ধবিমান ধ্বংসকারী অস্ত্র চেয়েছিলেন। সেই অনুরোধ খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ জানিয়েছেন, শান্তি আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত হলেও সামরিক অভিযানে ভাঁটা পড়বে না। রুশ টেলিভিশনে লাভরভ জানান, প্রথমবার শান্তি আলোচনার সময়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নির্দেশ দিয়েছিলেন অভিযান স্থগিত রাখার। তাঁর অভিযোগ, ইউক্রেনের কাছ থেকে সাড়া না মেলায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে না পৌঁছলে কোনোভাবেই আক্রমণ থামানো হবে না।
এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে গতকাল বৈঠক করেন অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার। পুতিনকে তিনি অবিলম্বে যুদ্ধ থামানোর আবেদন জানান। তিনি বলেন, "যুদ্ধে দু'পক্ষের কেউ জেতে না।" ইউক্রেনে হামলা শুরুর পরে নেহামারই প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের নেতা, যিনি পুতিনের সঙ্গে কথা বললেন।
ইতিমধ্যেই স্যাটেলাইটে পাওয়া চিত্রে দেখা গেছে, পূর্ব ইউক্রেনে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র জড়ো করছে রাশিয়া। দক্ষিণেও সেই কৌশল বজায় রাখতে চায় পুতিন বাহিনী। মার্কিন এক কর্মকর্তা আজ জানিয়েছেন, দনবাস অঞ্চলে দ্বিগুণ বা তিনগুণ সেনা বাড়াতে চলেছেন পুতিন। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি। গতকাল রাশিয়া দাবি করেছে, সপ্তাহান্তে ইউক্রেনে একাধিক 'এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম' নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ইউক্রেনের নিপ্রোয় চারটি এস-৩০০ অ্যান্টি এয়ারক্র্যাফ্ট মিসাইল ধ্বংস করা হয়েছে।
বুচার ঘটনার পরে একাধিকবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছেন জ়েলেনস্কি। পেন্টাগনও পুতিনকে যুদ্ধপরাধী বলে দাগিয়ে দিয়েছিল। এবার জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বারবকও জানিয়েছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের বহু ইঙ্গিত পেয়েছেন তাঁরা। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিল রাশিয়ার উপরে সাসপেনশন চাপিয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের ওই সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছে উত্তর কোরিয়া।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান