তেলের দাম বাড়ছে লাফিয়ে, বাড়ছে সরকারের রাজস্বও
বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম ক্রমেই বাড়তে থাকায় ভোক্তার উপর চাপ বাড়তে থাকলেও এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আদায়ে ব্যাপক বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত নয় মাসেই এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় বেড়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯১২ কোটি টাকা।
এনবিআর কাস্টমস বিভাগের হিসাব বলছে, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে অপরিশোধিত (ক্রুড) সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানি বেড়েছে পৌনে তিন শতাংশের মত (২.৭৫%)। অথচ একই সময়ে এ খাত থেকে এনবিআরের রাজস্ব আদায় বেড়েছে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৮ শতাংশেরও বেশি।
কাস্টমস বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে অপরিশোধিত সয়াবিন এবং পাম তেল মিলিয়ে ১৫ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন আমদানি হয়েছে যার বিপরীতে সরকার রাজস্ব আদায় করেছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে ১৫ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন আমদানির বিপরীতে ভ্যাট আদায় হয়েছিলো ১,৫৬৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের হেড অফ ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট দিদার মোঃ দবিরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সরকার ভোজ্যতেল থেকে চলতি অর্থবছরের রাজস্বে প্রাক্কলন যখন করে, তখন প্রতি মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেলের দাম ছিলো ৮০০ ডলার। বর্তমানে তা প্রায় ১৯০০ ডলার। ফলে মার্চে এসে কমানো ভ্যাটের কারণে অর্থবছরের বাকি সময়ের যে আদায় কমবে, তা সত্ত্বেও বছরের শুরুতে এ খাত থেকে প্রাক্কলন করা রাজস্বে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। বরং বাড়তে পারে।
সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, যখন ভ্যাট কমানো হয় (গত মার্চের মাঝামাঝি), ওই সময় প্রতি মেট্রিক টন সয়াবিন ও পাম অয়েলের আমদানিতে দাম ছিলো যথাক্রমে ১৮০০ ও ১৭০০ ডলার। এক মাস পর বর্তমানে ওই পণ্যের দাম দাঁড়িয়েছে ১৯৬০ ও ১৮০০ ডলার।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম আরো বাড়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে তিনি ভবিষ্যতে এর কাঁচামালের (অপরিশোধিত সয়াবিন তেল) সংকটে দেশের বাজারে সংকট বাড়ার ইঙ্গিত দেন।
ভোজ্যতেলের আমদানি, উৎপাদন ও ট্রেডিং পর্যায়ে ১৫% করে ভ্যাট আরোপ ছিলো। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়তে থাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে গত মার্চে এসে এনবিআর প্রথমে উৎপাদন ও ট্রেডিং পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার করে। তবে ওই দুই স্টেজে ভ্যালু এডিশন তেমন হয় না, ফলে এই দুই স্টেজের ছাড়ে তেমন ভ্যাট কমবে না বলে ব্যাপক আলোচনার পর এনবিআর পরবর্তীতে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১৫% থেকে ১০% কমায়।
দিদার মোঃ দবিরুল ইসলাম বলেন, প্রতি মেট্রিক টন তেলের দাম ১৮০০ টাকা হিসাব করলে প্রতি লিটারে ভ্যাট আসে প্রায় ২২.৫০ টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট কমানোয় ১৫ টাকা বর্তমানে রিলিফ পাওয়া যাচ্ছে।
গত মার্চের মাঝামাঝি এসে সরকার ভোজ্যতেলের উপর দুই দফায় ভ্যাট কমিয়ে ভোক্তার চাপ কিছুটা সহনীয় করার চেষ্টা করলেও, বিশ্ববাজারে দাম বাড়তে থাকায় তা ভোক্তাকে খুব একটা স্বস্তি দেবে না বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বরং ভ্যাট কমানোয় শুরুতে রাজস্ব আদায় কিছুটা কমলেও তা আবারও বাড়তে থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঈদের পর ভোজ্য তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের সঙ্গে বসতে যাচ্ছে। ওই আলোচনায় দাম বাড়ানোর বিষয়টি থাকবে।