বেড়েই চলেছে খাদ্যপণ্যের দাম
খাদ্যপণ্যের অস্থির বাজার স্থির হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যেই পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কবলে পড়েছেন সাধারণ ভোক্তারা।
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে দাম বেড়েছে গরুর মাংস, ডিম, ডাল, প্যাকেটজাত আটা ও চালের।
শুক্রবার রাজধানীর মগবাজার,কারওয়ান বাজার ও রুপনগর আবাসিক এলাকার সোনার বাংলা মার্কেট ঘুরে দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
গরুর মাংস কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে। আর ডিমের হালিতে বেড়েছে ৩ টাকা। সব ধরনের চাল কেজি প্রতি ২ টাকা বেড়েছে। আর আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা।
ভারত সরকার ১৪ মে গম রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। এরপরই বাংলাদেশে দাম আরেক দফা বেড়ে যায় আটার দাম ।
ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা আলী হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, তার দোকানে এখন দুই দামের প্যাকেট আটা আছে । নতুন যে প্যাকেট আটা আসছে সেগুলো দুই কেজি ১০৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর আগের কেনা আটা বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা।
তিনি আরও জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব চাল বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) ১০০ টাকা বেড়েছে। খোল সাদা চিনি কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে হয়েছে ৮৫ টাকা। ছোট মসুর ডাল ৫ টাকা বেড়ে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আলী হোসেন বলেন, ২৫ কেজির প্যাকেট লবণ পাইকারি কিনেছি ৭০৫ টাকা সেটা এখন হয়েছে ৭৭৫ টাকা।
"সব জিনিসের দাম বাড়ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়াতে আমাদের বিক্রিও কমে গেছে। মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষ এখন ব্যয় সংকোচ করতে কম কম পণ্য কিনছেন," বলেন তিনি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে গত ২০ মে উৎপাদন তারিখ লেখা ২ কেজির আটার প্যাকেটে লেখা ১০৮ টাকা। আর ময়দার প্যাকেটে ১৪২ টাকা।
গরুর মাংস কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা
গত সপ্তাহে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছিল ৬৫০ টাকায়। সেটা এখন ৫০ টাকা বেড়ে ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
রুপনগর আবাসিক এলাকার সোনার বাংলা মার্কেটের গরুর মাংস বিক্রেতা হাফিজুর রহমান বলেন, "গরুর দাম বেড়ে যাওয়ায় মাংসের দাম বেড়েছে। ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি করলেও আমাদের তেমন লাভ থাকছে না।"
তিনি জানান, দাম বাড়ার কারণে তাদের বিক্রি কমে গেছে।
"এক মাস আগেও শুক্রবার ৩টি গরু জবাই করতাম, এখন করি একটি গরু," বলেন তিনি।
সোনার বাংলা মার্কেটে খাসির মাংসের কেজি ১০০০ টাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে কারওয়ান বাজার মার্কেটে ৯৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি হালি ফার্মের ডিম ৩ টাকা বেড়ে ৪৩ টাকা হয়েছে।
সোনার বাংলা মার্কেটের ডিম বিক্রেতা মোহম্মদ হোসেন বলেন, "ডিমের চাহিদা বেশি তার উপর সরবরাহ কম এ জন্য ডিমের দাম বেড়েছে।"
তবে, মুরগির দাম গত সপ্তাহের মতোই রয়েছে।
গতকাল সোনালী মুরগি বিক্রি হয়েছে কেজিতে ৩০০ থেকে ৩১০ টাকায়, দেশি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৬০ টাকা।
চালের দাম বাড়ছে ধাপে ধাপে
চালের ভরা মৌসুমেও চালের বাজার অস্থির। খুচরা পর্যায়ে মিনিকেট চাল কেজিতে ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৭০ টাকা, বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা।
কারওয়ান বাজারের সিরাজ এ্যান্ড সন্স দোকানের বিক্রেতা মোহম্মদ খোকন বলেন, "চালের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে বস্তা প্রতি ১৫০ টাকা।"
"আমরা ব্যবসায়ীরা বেশিদামে কিনে আনি তাই বিক্রিও বেশি দামে করছি। কিন্তু মিলে কেন দাম বাড়ছে সেটা দেখা উচিৎ," বলেন তিনি।
সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা
বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি সবজিতে ৫ থেকে টাকা দাম বেড়েছে। বাজারে প্রতিকেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, সসা ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ১০০ টাকা কেজি।
সবজি বিক্রিতা নুরে আলম দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেশে বন্যা পরিস্থিতির কথা বলেন। জানালেন, গত সপ্তাহে তিনি পাইকারি ৫ কেজি পটল কিনেছেন ১৬০ টাকায় সেটা এখন হয়েছে ২০০ টাকা।
কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মোহম্মদ আক্তার টিবিএসকে বলেন, "কারওয়ান বাজারে দাম একটু কম পাওয়া যায় তাই এসেছি বাজার করতে। কিন্তু দেখি এখানে ডিমের ডজন ১২০ টাকা। সবজি ৪০ টাকার নিচে নেই। আমরা কি খেয়ে বাঁচবো?"
"৫ কেজি তেল কিনতেই প্রায় ১০০০ টাকা চলে যায়। অন্য বাজার কী দিয়ে করবো!"
সোনার বাংলা মার্কেট থেকে এক নারী আধাকেজি এ্যাংকর ডাল কিনেছেন ৪৩ টাকা দিয়ে।
তিনি নাম প্রকাশ না করে বলেন, "কী খাবো আমরা? মুরগি কেনার টাকা নেই। মুরগির পা কিনতে চাইলাম। সেটার কেজিও ৮০ টাকা। আগে ৫০ টাকা কেজি কিনেছিলাম।"