প্লেন স্পটারস বাংলাদেশ: মুরাদ হাসান ও তাঁদের ‘প্লেনধরা’ দল
জেটফটোজ দেখতে দেখতে ইচ্ছা জাগল মুরাদ হাসানের। নাম থেকেও আঁচ করা যায় প্লেনের ছবির হাট ওই জেটফটোজ। পৃথিবীর তাবৎ প্লেন স্পটাররা নিজের তোলা ছবি তুলে আড্ডা জমায় ওখানে। তবে জেটফটোজে ছবি ওঠানো সহজ নয় মোটেই। বেশ ভারী একটা বিশেষজ্ঞ দল আছে ফটোসাইটটির। সপ্তাহখানেক ধরে ছবি যাচাই-বাছাই করে তারা। ছবিটা কতটা পরিষ্কার আর তাতে প্লেনের বৈশিষ্ট্যগুলি ঠিকমতো ফুটে উঠেছে কি না, তারপর নির্দিষ্ট প্লেনটির ছবি আগে কতবার তোলা হয়েছে, সেক্ষেত্রে নতুনটির বিশেষত্ব কী ইত্যাদি অনেক কিছুই তাদের যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়ে থাকে।
এহেন একটি ভ্রু কুঁচকানো বিচারসভাকে তুষ্ট করে এরই মধ্যে এগারোশ'র বেশি প্লেনের ছবি জেটফটোজে তুলে ফেলেছেন মুরাদ হাসান। তার মধ্যে আবার ৩০টি প্লেনের ছবি তাঁর আগে কেউ দেয়নি। আর বিশেষায়িত প্লেনের ছবি আছে ৯১টি। উল্লেখ্য, প্লেন ফটোর আরেকটি সাইট প্লেনস্পটারসডটনেটেও আছে মুরাদের ছবি।
যেসব বিমানসংস্থার ছবি মুরাদ তুলেছেন, তার মধ্যে কয়েকটির নাম—বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স, ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স, মালিন্দ এয়ার, টেরা এভিয়া, ড্র্রুক এয়ার, চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স, ড্রাগনএয়ার, টার্কিশ এয়ারলাইন্স কার্গো, ফ্লাইদুবাই, ক্যাথে প্যাসিফিক, নিউ জেন এয়ারওয়েজ, বাটিক এয়ার মালয়েশিয়া, হিমালয়া এয়ারলাইন্স, স্কুট (সিঙ্গাপুর), ইভা এয়ার ও স্টারলাক্স এয়ারলাইন্স (তাইওয়ান), ভিস্তাজেট, ভিয়েতজেট এয়ার (ভিয়েতনাম), ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, মাহান এয়ার (ইরান), ইউক্রেন এয়ার এলায়েন্স, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স, উজবেকিস্তান এয়ারওয়েজ, ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স, হাই ফ্লাই মাল্টা, মায়ানমার এয়ারওয়েজ ইত্যাদি।
স্বরূপকাঠি থেকে এসেছেন
আগেই বলা হয়েছে ওই জেটফটোজ (www.jetphotos.com) দেখেই তাঁর প্লেনের ছবি তোলার সাধ জাগে আর সেটি ২০১৩ সালে। অবশ্য ক্যামেরার সঙ্গে মুরাদের মিতালি ২৫ বছর ধরে। পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে বাড়ি মুরাদের। ঢাকায় আসেন ১৯৯৪ সালে। কলেজে পড়ার সূত্র ধরে। ইয়াসিকার একটি ফিল্ম ক্যামেরা ছিল তখন। নিজের, বন্ধুবান্ধবের আর আত্মীয়স্বজনের ছবি তুলতেন। সেইসঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ব্যবসা বিষয়ে। পরে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্কিংয়ে আগ্রহী হলেন। পড়াশোনা চলছিল সে বিষয়েও।
তারপর ২০০৮ সালে ভারত বেড়াতে যাবেন বলে মুরাদ কিনে ফেললেন একটি ক্যানন ডিএসএলআর। পোর্ট্রেট আর নেচার ফটো তুলে চলছিল দিন। তারপর এলো ২০১৩ সাল। দৃকের পাঠশালায় একটি বেসিক ও অ্যাডভান্স কোর্স করতে গেলেন। কম্পোজিশন, সাবজেক্ট সিলেকশন ইত্যাদি বিষয়গুলো নতুনভাবে ধরা দিল তাতে। পাশাপাশি জেটফটোজে প্লেনের ছবি দেখতেন আর ভাবতেন কবে তাঁর ক্যামেরা উড়ন্ত প্লেন ধরতে পারবে।
কিন্তু প্লেনের ছবি তোলা পাখির ছবি তোলার মতোই কঠিন ব্যাপার, কখনো কখনো বেশি কঠিন। কারণ প্লেন যেখানে ভিড়ে থাকে—মানে বিমানবন্দরের টারমাক, হ্যাঙ্গার কিংবা টার্মিনালে—সেখানে ঢোকা যায় না সহজে। আর রানওয়েতে ঢোকা তো আরো কঠিন। সেইসঙ্গে আছে ডাহা খরচ। কারণ বিদেশের বিমানবন্দরে যেতে ভিসা পেতে হয়, টিকিট কাটতে হয়, থাকা-খাওয়ার হোটেলও লাগে।
বাকি রইল প্লেন যখন শূন্যে থাকে তখনকার ছবি তোলা। সাধারণত প্যাসেঞ্জার বা কমার্শিয়াল প্লেন ওড়ে ৪৩ হাজার ফুট ওপর দিয়ে আর মিলিটারি ও সার্ভেলেন্স প্লেন ৫০ হাজার ফুট ওপরে ওঠে। অত ওপরে তো আর ক্যামেরা দিয়ে কিছু ধরা যায় না, কারণ মেঘই তো ভাসে সাড়ে ৬ হাজার ফুট ওপর দিয়ে, কখনো কখনো নেমে আসে আরো নিচে।
তাই সব মিলিয়ে প্লেনের ছবি তোলার সুযোগ হয় ওঠা (টেক অফ) আর নামার (ল্যান্ডিং অ্যাপ্রোচ) জায়গায়। ওঠার চেয়েও নামার সময়ের ছবি তোলা ভালো। প্লেন অল্পক্ষণের মধ্যেই হাজার ফুট ওপরে উঠে যায়, কিন্তু নামার সময় প্লেনকে কয়েক শ ফুট ওপরে পাওয়া যায় এবং কিছু বেশি সময় ধরেই। ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্লেন নামে বেশি বাউনিয়া দিয়ে আর ওঠে রেডিসন হোটেলের দিক দিয়ে। বাউনিয়ার প্রান্তটা হলো রানওয়ে ১৪ এবং রেডিসন প্রান্তটা রানওয়ে ৩২। সাড়ে ১০ হাজার ফুট দৈর্ঘ্যের আমাদের রানওয়ে কিন্তু একটাই তাহলে কথাটা দাঁড়াল রানওয়ের এক ধার দিয়ে প্লেন নামে আরেকধার দিয়ে ওঠে। তবে সবসময় ডিরেকশন একই থাকে না। মুরাদ বলছিলেন, বছরে দুইবার ওঠা-নামার ডিরেকশন বদলায়। নভেম্বর -ডিসেম্বর আর এপ্রিল-মেতে।
শীতের সময় বাতাস উত্তর দিক থেকে বয় আর এপ্রিল-মেতে বাতাস বয় ঝড়ো। বিবেচনাটা হলো, বাতাস রাখতে হবে প্লেনের মাথার দিকে, কারণ লেজের দিক দিয়ে বাতাস বেশি বইলে তা সামলানো যায় না।
এবার তাহলে প্রশ্ন, এতসব দুর্বিপাক মাথায় নিয়েও তবে কেন মানুষ প্লেনের ছবি তুলতে ছোটে? সাদা উত্তর—আনন্দে বা শখে। আর কথাটা জানাই আছে সবার: শখের দাম লাখ টাকা। মুরাদও শখ মেটাতে তাই কাউন্টার ফটোতে গেলেন প্লেনের ছবি তোলার কৌশল শিখতে। প্লেন স্পটার ফয়সাল আকরাম ইথার ছিলেন প্রশিক্ষক। ততদিনে কিন্তু মুরাদ মাইক্রোসফট, সিসকো এবং লিনাক্সের সার্টিফিকেটও পেয়ে গেছেন। ভালো একটি চাকরিও করেন। তাই তাঁর শখ মেটানোয় টাকা অন্তত বাধা হয়ে দাঁড়াল না। আর আগে থেকেই তিনি ইথারকে ফলো করতেন, মানে তাঁর ছবি দেখতেন। তাই প্রশিক্ষক হিসাবে তাঁকে পেয়ে ভালো লাগল মুরাদের।
ইথার প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে নিজের ছবি তোলার অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে থাকেন। কিন্তু জানালেন না, বাউনিয়ার যে বাড়ির ছাদ ব্যবহার করে প্লেনের ছবি তোলেন তার ঠিকানা। মুরাদের কাছেও ব্যাপারটি যুক্তিসংগত মনে হলো, কারণ ওই বাড়ির লোকদেরও প্রাইভেসি থাকবে। বেশি লোক ভিড় করলে বরং সকলের প্রবেশাধিকারই নিষিদ্ধ হবে।
তাই মুরাদ নিজেই বাড়ি খুঁজতে বেরুলেন। উত্তরায় তুরাগ থানার একটি মহল্লা যা বিমানবন্দরের দেয়াল ঘেঁষা। তাই বাউনিয়া প্লেন স্পটারদের কাছে এক মহার্ঘ্য জায়গা। ততদিনে মুরাদের সঙ্গে তানভীর মাহমুদ নামের আরেক আলোকচিত্রী যোগ দিয়েছেন। দুজনে মিলে যান বাউনিয়া, উদ্দেশ্য একটা বাড়ির ছাদে ওঠার অনুমতি পাওয়া। এলাকাটা নিরিবিলি বলে ভয় ছিল দামি ক্যামেরা হারানোর। কিন্তু গিয়ে তাদের ভুল ভাঙল, কারণ এলাকাবাসী দারুণ সজ্জন। একটা ছাদ পেতে তাই তাদের খুব বেশি ঘুরতে হলো না।
তারা ফল, চকলেট এবং আরো সব শুকনো খাবার নিয়ে ৭-৮ ঘণ্টার জন্য ছাদে আস্তানা গাড়তেন। বাড়ির লোকেদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাবার খেতেন। তখন কিন্তু প্লেনের আসা-যাওয়ার হদিস জানার সুযোগ খুব বেশি ছিল না। ঢাকায় একজনের কাছেই কেবল প্লেন ট্র্যাকিং ডিভাইস ছিল, ডিভাইসটি তিনি সব সময় খোলাও রাখতেন না। ডিভাইসটি খোলা রাখলে ঢাকার উৎসাহীরা লিংক ধরতে পারতেন এবং মায়ানমার, ভারতের অনেকটা জায়গাজুড়ে প্লেনের চলাচল নজর করতে পারতেন। তাই সমাধান ছিল ওই, খাবার-টাবার নিয়ে ছাদে চড়ে বসা এবং বড় সময়ের জন্য। ততদিনে পরিচয় হলো ইকতিদার, সাজ্জাদ, কাশিফ, শাদমান, তাশদিদ, আশিক, আকিবদের সঙ্গে।
মুরাদ জানালেন ঢাকার প্রথম প্লেন স্পটারের নাম, আশির দশকে তিনি প্লেন স্পটিং শুরু করেন, তিনি আজিজুল ইসলাম, এখন লন্ডনে থাকেন।
এয়ার শোতে গিয়েছিলেন মুরাদ
মালয়েশিয়ার লাংকাউইতে দুই বছরে একবার ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অ্যান্ড এরোস্পেস এক্সিবিশন হয়। বিশ্বের অনেক দেশের বিমান সেখানে প্রদর্শিত হয় এবং এয়ারবাস, বোয়িং, লকহিড মার্টিন বা রুশ সুখোইসহ অনেক বিমাননির্মাতা প্রতিষ্ঠান তাদের বিমান প্রদর্শন করে। আরো হয় বিমান অ্যারোবেটিকস (অ্যারিয়াল+অ্যাক্রোবেটিকস)।
উড়ন্ত বিমানের কসরত দেখার দারুণ সুযোগ হয় লাংকাউই এয়ার শোতে। সেখানেই ইন্দোনেশীয় বিমানবাহিনীর জুপিটার দলের অ্যারোবেটিকস দেখে আনন্দ পেয়েছিলেন মুরাদ। তিনি গিয়েছিলেন ২০১৯ সালের শোতে। তবে যেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে, কারণ পাঁচদিনের শোয়ের কেবল শেষ দুই দিন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। জানা কথাই, ওই দুই দিন ভিড় থাকবে বেশি, আর প্রথম তিন দিন কেবল ফ্রেইট ট্রেডারদের জন্য।
অথচ মুরাদের ভালো ছবি পেতে সব দিনের প্রবেশাধিকার পাওয়া জরুরি ছিল। তিনি চীনের এক বেসরকারি বিমান সংস্থার উর্ধতন একজনকে বললেন সে প্রয়োজনের কথা। ওই চীনাম্যানের সঙ্গে তার সখ্যতা পুরোনো। চীনাম্যান উপলব্ধি করলেন মুরাদের মনোবেদনা। বললেন, তোমার বায়ো আর ফটো আমার কাছে পাঠাও। পরে চীনাম্যান তাদের সংস্থার একটি পরিচয়পত্র দেন মুরাদকে। তাই মুরাদের সুযোগ হয় সব দিন শোতে উপস্থিত থাকার। বলছিলেন, 'এতো রকমের প্লেন দেখেছি এবং এতো কাছ থেকে যে, আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না। দুটি রুশ সামরিক বিমানের একটির আরেকটিকে অতিক্রম করার প্রায় সব মুহূর্তের ছবি তুলতে পেরেছি যা এতো সুন্দর হয়েছে, কম্পিউটার মনিটরের ব্যাকগ্রাউন্ড হিসাবে সেট করা যায়। এছাড়া জুপিটারের বিভিন্ন ফর্মেশনের এবং ব্যারেল রোলের ছবিও ভালো পেয়েছি। তারপর ভারতের সামরিক বিমান তেজাজের ছবি তুলেছি। নেপালের হিমালয়া এয়ারলাইন্সের, কোরিয়ান এয়ার প্রভৃতির ছবি তুলেছি।'
কোনো কোনো বিমানের ককপিটেও চড়ে বসেছিলেন সে দফায়। মুরাদ তখন আকাশে ধোঁয়া ছেড়ে বা ফ্লায়ার পুড়িয়ে লাভ চিহ্ন আঁকতে দেখেছেন অ্যারোবেটিকদের। উল্লেখ্য, হিট সেনসিটিভ মিসাইলকে ধোঁকা দিতে ফ্লায়ার পোড়ানো হয়।
তবে মার্কিন যুদ্ধবিমান এফ-১৮-এর ছবি তুলতে গিয়ে হাস্যকর এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, কারণ সুপারসনিকে বিমানের শব্দ শুনে মনে হচ্ছিল আছে পেছন দিকে অথচ ক্যামেরা তাক করতে করতেই তা চলে গিয়েছিল বহুদূরে।
একটা সংখ্যা উল্লেখ করা যেতে পারে। ২০১৩ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সময়কালে ২৫০ দিন বিমানবন্দর এলাকায় কাটিয়েছেন মুরাদ। তিনি মোট ১৩টি এয়ারপোর্টের ছবি তুলেছেন আর ২১২টি এয়ারলাইনারের। তাছাড়া ফ্লাইটরাডারটুয়েন্টিফোরডটকম নামের যে লাইভ ফ্লাইট ট্র্যাকার ওয়েবসাইট আছে, তাতেও নজর রাখেন। এই সাইটটি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষেরও কাজে লাগে। সাত দিন বিনামূল্যে এই সাইটটি ব্যবহারের সুযোগ আছে যে-কারোরই।
মুরাদের পছন্দের বিমানবন্দর থাইল্যান্ডের ফুকেট। সাগরপাড়ের এ বিমানবন্দরে বিশেষায়িত বিমানের দেখা পেয়েছেন তিনি। একটি যেমন বাঘমুখো রসিয়া। রুশ ফেডারেশনের রসিয়া এয়ারলাইনটির প্রতিষ্ঠা ১৯৩৪ সালে এবং ৫৩টি গন্তব্যে যাত্রী বহন করে। এর আছে এয়ারবাসের দুটি বিমান, বোয়িংয়ের ৪টি এবং সুখোই সুপারজেট ১টি। এর বহরের বোয়িং ৭৪৭ যেটি প্রায় সাড়ে চারশ যাত্রী বহন করতে পারে, সেটির নাকে বাঘ আঁকা হয়েছে। উদ্দেশ্য, সাইবেরিয়ার আমুর বাঘের প্রতি মানুষের মনোযোগ ফেরানো।
এমিরেটসেরও ওয়াইল্ডলাইফ প্রকল্প আছে, যার নাম ইউনাইটেড ফর ওয়াইল্ডলাইফ। ওই প্রকল্পের বিমানগুলোর গায়ে হাতি, গন্ডার, ওরাংওটাং, বাঘ বা সিংহের ছবি লাগানো থাকে। নিপ্পন এয়ারওয়েজেরও সিলাইফ প্রকল্প আছে, তার একটি বিমানের পুরোটার গায়ে টার্টল আঁকা। আরেকটি রুশ বিমান কথাও মনে পড়ল মুরাদের যার নিবন্ধন নম্বর ইআই-এক্সএলকে। এটি একটি বোয়িং ৭৪৭। বিমানটিকে ফ্লাইট অব হোপ নামে ডাকা হয়। কারণ এর গায়ে পৃথিবীর নামী-দামি ব্যক্তির হাতের ছাপ আছে। ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ট্রফি ট্যুরের বিমানটির ছবিও তুলেছেন মুরাদ। তুলেছেন ফর্মুলা ওয়ানের (কার রেসিং কম্পিটিশন) রঙে রাঙানো ইতিহাদ বিমানের এবং হাঙরের ছবি লাগানো ব্রাজিলীয় এমব্রায়ার বিমানের ছবি। এছাড়া পৃথিবীর শেষ যাত্রীবাহী ডিসি-১০-এর বিদায়ী যাত্রায়ও যোগ দিয়েছিলেন মুরাদ ২০১৪ সালে।
প্লেন-প্রতিযোগিতা
দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফলেই আমরা পেয়েছি আজকের আধুনিক প্লেন। পৃথিবীতে দুটি বড় সিভিল বা কমার্শিয়াল বিমাননির্মাতা প্রতিষ্ঠান আছে, একটি ইউরোপের এয়ারবাস অন্যটি মার্কিন বোয়িং কোম্পানি। এয়ারবাসের বিমানগুলোর মডেল নম্বর শুরু হয় ইংরেজি 'এ' অক্ষর দিয়ে, যেমন এ৩২০। এর প্রতিদ্বন্দ্বী মডেলটির নাম ৭৩৭ (বোয়িং)। আবার এ৩৫০- এর প্রতিদ্বন্দ্বী হলো ৭৮৭। ৭৮৭ বা ৭৩৭-এর আবার ৭০০, ৮০০ বা ৯০০ সংস্করণ আছে। ব্যাপারটি এমন—৭৩৭, ৭৪৭ বা ৭৮৭ হলো একেকটি প্রজন্ম যা কয়েক বছর ধরে অনেক চিন্তা ও শ্রমের ফলাফলে তৈরি হয়। আর সংস্করণগুলো হচ্ছে নির্দিষ্ট প্রজন্মের একই কারিগরির বড়-ছোট প্লেন। বড় করা হয় বেশি যাত্রী ধরার স্বার্থে বা বেশিদূর ভ্রমণের সক্ষমতা দিয়ে। তবে সেইসঙ্গে টেক অফ, ল্যান্ডিং, ইঞ্জিন, উইং, চাকা, নোজ, টেইল সবকিছুতেই পরিবর্তন আনতে হয়। তাতে নতুন নতুন কৌশল ও কারিগরি দক্ষতার উদ্ভাবন জরুরি হয়ে পড়ে।
তবে প্রতিযোগিতা সবসময় সুষ্ঠু হয়, তা নয়। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো ৭৩৭ ম্যাক্স দুর্ঘটনা। এয়ারবাসের এ৩২০-এর চেয়ে এগিয়ে যেতে বোয়িং ৭৩৭-কে বড় করে (১৮ জন যাত্রী বেশি ধরতে পারে এবং বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে) নাম দিল ম্যাক্স। অথচ কারিগরি কিন্তু পুরোনোই রইল, পুরোনো প্রজন্মকে ঠেকা দিতে তারা এটাকে আরো বেশি সফটওয়্যার-ড্রিভেন করল।
এই ফাঁকি তারা দিল টাকা ও সময় বাঁচাতে, কারণ নতুন প্রজন্মের বিমান হলে নতুনভাবে নিবন্ধন নিতে হয়। তারা চুপচাপে ব্যাপারটি সেরে ফেলেতে অনেক পাইলটের কাছেও ব্যাপারটি পরিষ্কার করেনি। এসবের মধ্যে তারা ৫ শতাধিক ৭৩৭ ম্যাক্স ডেলিভারি দিয়ে ফেলেছে আর অর্ডার নিয়ে রেখেছে ৪ হাজারের বেশি। শেষে ওই অসুস্থ প্রতিযোগিতার জরিমানা দিতে হলো ৩৮৬ জন মানুষের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে। মার্চ ২০১৯ আর ডিসেম্বর ২০২০-এ দুটি ৭৩৭ ম্যাক্স সোজা নোজ ড্রাইভ দিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ল। বোয়িং কর্তৃপক্ষ দোষ চাপাল পাইলটের ওপর এই বলে যে তার আত্মহত্যার সাধ জেগেছিল।
তবে এটাও স্বীকার করা দরকার, সুস্থ প্রতিযোগিতা বেশিরভাগ সময়ই ভালো ফল বয়ে আনে। পৃথিবীতে বোয়িং আর এয়ারবাসের পাশাপাশি ব্রাজিলেরও আছে প্লেননির্মাতা প্রতিষ্ঠান, নাম এমব্রায়ার। রাশিয়াও বিমান তৈরি করে। মিলিটারি আর কার্গো প্লেনে রাশিয়ার সমকক্ষ বেশি কেউ নেই।
মুরাদ বলছিলেন, 'রাশিয়ার বিমানগুলো ড্যাম স্ট্রং, রাফ সারফেসেও ল্যান্ড করতে পারে, খারাপের দিক বলতে ইঞ্জিন নয়েজ বেশি করে আর ফুয়েল কনজাম্প করে বেশি। রাশিয়ার একটি বিমান সোভিয়েত আমলে ইউক্রেনে তৈরি নাম আন্তনভ মৃয়া। এটা নিহত হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধের তৃতীয় দিনে। অথচ বিমানটা পৃথিবীবাসীকে এতো বেশি সার্ভিস দিয়েছে যে বলে শেষ করা যাবে না। ওই বিমানটাই ষাটের দশকে রুশ শাটল স্পেসশিপকে ৪০ হাজার ফুট ওপরে উঠিয়ে নিয়ে মহাশূন্যে ছেড়ে দিয়ে এসেছে। মৃয়া ঢাকায়ও এসেছে কয়েকবার। ১৮০ টনের মেগা জেনারেটরসহ পাওয়ার প্ল্যান্টের অনেক ভারী ভারী যন্ত্রপাতি বহন করেছে জীবনভর। কোভিডকালে মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট পৌঁছে দিয়েছে দেশে দেশে। আর শেষে কিনা গোলার ঘায়ে জীবন দিতে হলো!'
যাহোক, বিমান নির্মাণে চীনও এখন শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে চাইছে। আধুনিক বিমানের সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য হলো টেক অফে সময় কম নেবে, ল্যান্ডিংয়ে স্বচ্ছন্দ হবে, নয়েজ কম তৈরি করবে, যাত্রীদের কমফোর্ট দেবে, ফুয়েল কম কনজাম্প করবে, টানা দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে পারবে।
মুরাদ বললেন, 'অস্ট্রেলিয়ার কান্টাস বিমানসংস্থা 'প্রজেক্ট সানরাইজ' নামের একটি প্রকল্প পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। এ প্রকল্পে তারা বোয়িংয়ের ৭৮৭ ব্যবহার করছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে ১৭-১৯ ঘণ্টা টানা উড়ে, মানে কোথাও না থেমে সোজা নিউ ইয়র্কে পৌঁছাবে। এটা বিস্ময়কর প্রকল্প।'
একটি প্লেনের বহিরঙ্গ
পাখি আর মাছের ওড়া ও চলায় যেসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সাহায্য করে সেগুলোর অনেকগুলোই আছে প্লেনের, যেমন পাখা ও পাখনা; ভার্টিক্যাল ও হরাইজন্টাল স্ট্যাবিলাইজার। সামনের দিকটা ফ্লাইট ডেক বা ককপিট দিয়ে শুরু হয়, এর ওপরে থাকে পাইলট জানালা। পাখাতেই লাগানো থাকে ইঞ্জিন। পাখার শেষ প্রান্তটাকে বলে উইং টিপ যা বাতাস কাটার কাজে লাগে, মানে লিফট আপে সাহায্য করে। পাখাতে ফ্ল্যাপ বা ভাঁজও থাকে।
ককপিটের পর থেকেই কেবিন শুরু হয়। যাত্রী বসার আর লাগেজ রাখার অংশ মিলিয়ে পুরো প্লেন বডিকে বলা হয় ফিউজিলাজ। উল্লেখ্য, প্লেনের প্রোডাক্টিভ পার্ট হলো সামনের দিকটা, যেখানে ফুয়েল ট্যাংকও থাকে। অ্যাকুরেসি রক্ষার দায়িত্ব মূলত পাখা দিয়ে মাঝখানের অংশটার।
শেষ দিকে যেটা লেজের অংশ, সেখানে থাকে ভার্টিক্যাল ও হরাইজন্টাল স্ট্যাবিলাইজারও, ফিন বা পাখনাও সেখানে আর রাডার বসানো হয় পাখনার ওপরই; এই অংশটা প্লেনকে স্থিত বা স্টেবল রাখার কাজ করে। স্বাভাবিকভাবেই ল্যান্ডিং গিয়ার নীচে থাকে; ককপিটের নিচে একটি ও শেষ দিকে দুপাশে দুটি চাকা থাকে। তবে সব বিমানে একই রকম চাকা থাকে না। কোনোটায় দুই সেট চাকা, কোনোটায় তিন সেট চাকা থাকে।
প্লেনের ইঞ্জিনও কিন্তু সব বিমানে সমান থাকে না। ফারাক দেখা যায় উইং টিপেও। এক অর্থে জেনারেশন ধরে, মডেল ধরে, নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ধরে প্লেনে প্লেনে ফারাক থাকে—কখনো সূক্ষ্ম, কোথাও স্থূল।
যত ওপরে থাকা অবস্থায় যে প্লেনটাকে ঠিক ঠিক চিনতে পারে সে তত ভালো প্লেন স্পটার নিঃসন্দেহে। মুরাদ বলছিলেন, 'আজিজুল ভাই অনেক ওপরে থাকা বিমান দেখেও জেনারেশন তো বলতে পারেনই, ভার্সনও বলতে পারেন। তিনি, সাদা কথায়, একজন বিমানপ্রেমী মানুষ।'
নাক দিয়েও চেনা যায়
নাক দিয়েই চেনা শুরু হতে পারে। কোনোটার নাক বেশি চোখা কোনোটার বা ভোঁতা। তারপর পাইলট উইনডোতেও এয়ারবাস আর বোয়িংয়ের ফারাক আছে। ইঞ্জিন গোলও হয়, আবার চ্যাপ্টাও হয়। বোয়িং ৭৭৭-এর ইঞ্জিন গোল আর দশাসই হয়। ইঞ্জিনসংখ্যাও সব বিমানে সমান থাকে না। বোয়িং ৭৪৭ এর ইঞ্জিন চারটা, কিন্তু ৭৩৭-এর দুইটা। আবার বেশিরভাগ বিমানের পাখাতেই উইং টিপ থাকে, কোনো কোনোটার থাকে না। ৭৮৭-এর (ড্রিমলাইনার) লিফট যে বেটার, তার একটি কারণ এর উইং টিপ বিশেষভাবে নকশা করা হয়েছে। একই কারণে বেশি বড় রানওয়েও লাগে না ৭৮৭-এর।
টেইল (লেজ) ওপর দিকে থাকে যে বিমানগুলোর সেগুলো টেক অফে সুবিধা পায়।
লেজের দিকে থাকা এপিইউ (অক্সিলারি পাওয়ার ইউনিট) দেখেও প্লেন চেনার উপায় আছে, কারণ এটি সব বিমানে একইরকম থাকে না। দূর পাল্লার উড়ানের জন্য প্রস্তুত করা বিমানগুলোর এপিইউ থাকে। লেজেরও আছে বিভিন্ন গড়ন—ছুঁচালো কিংবা চ্যাপ্টা।
প্লেনের পিঠে যে অ্যান্টেনামতো একটা দণ্ড বা চাকতি দেখা যায়, সেটির নাম স্যাটকম। ডাটা মেইনটেন করা এর গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ব্যাকআপ রেডিও হিসাবেও কাজ করে স্যাটকম। প্লেন সাধারণত গতিপথ খুঁজে নেয় যে প্রযুক্তিতে, তাকে বলে এডিএস-বি (অটোমেটিক ডিপেনডেন্ট সার্ভেইলেন্স-ব্রডকাস্ট)।
গতিপথের কোথাও কোথাও এডিএস-বি সক্রিয়তা হারায়। তখন সহায় স্যাটকম, এটি দিয়ে প্লেন স্যাটেলাইট থেকে সিগন্যাল নিয়ে পথ করে নেয়। প্লেনের মধ্যে ইন্টারনেটও যোগান দেয় স্যাটকম।
উল্লেখ্য, বিমান সাধারণত চার রকমের হয়—যাত্রীবাহী, যুদ্ধবিমান, কার্গো এবং সার্ভেইলেন্স বা পর্যবেক্ষণকারী বিমান। সার্ভেইলেন্স বিমান যুদ্ধক্ষেত্র, আকাশপথ বা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত বিমানের গায়ে বড় করে লেখা থাকে বিমান সংস্থার নাম—যেমন এমিরেটস, থাই, কাতার বা ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ কিংবা কান্টাস। এরাই বিমান কেনে বোয়িং বা এয়ারবাস থেকে। তবে বিমানের গায়ে এর রেজিস্ট্রেশন নম্বরও লেখা থাকে, যেমন ফ্লাইট অব হোপের নম্বর হলো ইআই-এক্সএলকে। এ অক্ষরগুলো দিয়ে গুগলে সার্চ করলে এর বিস্তারিত দেখা যায়—যেমন কবে তৈরি হয়েছে, কোন কোম্পানি বানিয়েছে, কতটা উড়েছে, যাত্রীবাহী না কার্গো, কোন এয়ারলাইন অপারেট করে, বেইজ স্টেশন কোথায় ইত্যাদি।
দল হয়ে গেল
তানভীর আর মুরাদের সঙ্গে ২০১৪ সাল নাগাদ যোগ দিয়েছিলেন আকিব রুবাইয়াত আর আশিক রহমান। আশিক গ্রামীণফোনের কমার্শিয়াল ডিভিশনে কাজ করেন আর আকিবদের নিজেদের পারিবারিক ব্যবসা আছে। তাঁরা সহপাঠী, আগে থেকেই নিজেদের মতো প্লেন স্পটিং করতেন। তাদের একটি ফেসবুক পেইজও ছিল।
'আমাদের সঙ্গে তাদের পরিচয় হওয়ার পর দেখা গেল আমাদের মনেরও মিল আছে। তারপর মোহাম্মদ ইকতিদার আলমের সঙ্গেও যোগাযোগ হলো, তিনি হংকংয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল (লেবার)। কাছাকাছি সময়ে একে একে আলোকচিত্রী সাজ্জাদ হোসেন, ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার সাদমান আল সামীর, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার সামাউল হক তাশদিদের সঙ্গেও যোগাযোগ হলো। সম্প্রতি যুক্ত হয়েছেন আইদীন খান। তিনি অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এভিয়েশন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে গ্রাজুয়েট হয়েছেন।
'সংখ্যাটা পাঁচের অধিক হয়ে গেলে আমরা ভাবলাম এবার একটা গ্রুপ তৈরি করা যেতে পারে। সে ভাবনা থেকেই তৈরি হলো প্লেন স্পটার বাংলাদেশ। ফেসবুকে আমাদের এই গ্রুপটায় আমরা কিছু নিয়ম খুব কড়াকড়িভাবে মেনে চলি, যেমন কাউকেই হেয় করা যাবে না। প্রথম যিনি বিমানে উঠেছেন তিনি যেমন, আবার যিনি কখনো ওঠেননি বা যিনি মাসে ১০টা ফ্লাইট নিয়ে থাকেন, সকলেই আমাদের গ্রুপে আলোচনায় অংশ নিতে পারবেন। আমরা বিশ্বাস করি, যেকোনো প্রশ্নই আমাদের শেখার দ্বার উন্মুক্ত করে দিতে পারে,' বলছিলেন মুরাদ।
মুরাদের স্মরণীয় ছবি
ফ্লাইট অব হোপ বা বাঘমুখো রসিয়ার কথা আগেই বলা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, জাপানী প্রেসিডেন্ট ও কোরিয়ান প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের ছবিও তুলেছেন মুরাদ।
তবে একটি ছবির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করলেন তিনি—কারণ ছবিতে থাকা দুটি প্লেনের দুটিরই করুণ পরিণতি হয়েছিল। এর একটি যাত্রীবাহী, অপরটি প্রশিক্ষণ বিমান। ঢাকা বিমানবন্দরে দুটিকেই মুরাদ ভিড়ে থাকতে দেখেছিলেন।
যাত্রীবাহী বিমানটি (বোয়িং ৭৭৭) ছিল মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের, ইউক্রেনে এটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়।
অন্যদিকে প্রশিক্ষণ বিমানটির শিক্ষার্থী ছিলেন একজন নারী যিনি প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মারা যান, আর প্রশিক্ষককে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কিন্তু আর ফিরে আসেননি।
মুরাদ গরু বহনকারী একটি বিশেষ বিমানের ছবি তোলারও সুযোগ পেয়েছিলেন ঢাকা বিমানবন্দরে, ২০১৯ সালে। অ্যাটলাস এয়ারের ৭৪৭-৮০০ বিমানটি মেলবোর্ন থেকে কোনো এক খামারের জন্য ১১৯ টি গরু ঢাকায় নিয়ে এসেছিল।
গত প্রায় এক দশক আছেন মুরাদ হাসান প্লেনের সঙ্গে। কম স্মৃতি জমেনি দেশে বা বিদেশে। খরচও হচ্ছে লাখো টাকা, কিন্তু স্মৃতির দাম কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তাই তো সব মিলিয়ে প্লেনের সঙ্গে থাকাটা লাভজনকই মনে হয় তাঁর কাছে।