পদ্মা সেতু এলাকায় পিকআপ ভ্যানে মোটরসাইকেল পারাপারের রমরমা ব্যবসা
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে ফেরি বন্ধ। এদিকে সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন মোটরসাইকেল আরোহীরা। তবে অনেকে পিকআপ ভ্যানে মোটরসাইকেল তুলে দিয়ে সেতু পার হচ্ছেন।
সেতুতে মোটরসাইকেল বা বাইক পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত চলাচল করতে না পারায় অনেক বাইকার ফিরে গেছেন সেতুর পাড় থেকে। অনেকে আবার পিকআপে একত্রে অনেকগুলো মোটরসাইকেলকে পণ্য হিসেবে বহন করে পদ্মা সেতু পাড়ি দিচ্ছেন। এর জন্য তাদেরকে গুনতে হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা।
কেরানীগঞ্জের মো. নুরুল আলম পদ্মা সেতু দেখবেন বলে মোটরসাইকেলে সন্তানকে নিয়ে এসেছেন সেতুর টোল প্লাজায়। পারাপারে ব্যর্থ হয়ে পরে তিনি পিকআপ ভ্যানের শরণাপন্ন হন। পিকআপে করে সেতুর অপর প্রান্তে মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে চুক্তি হয় ১০০০ টাকায়। তিনি বলেন, 'ইচ্ছা পদ্মা সেতু দেখব, তাই টাকাটা বড় কথা নয়। ওপারে ভালোভাবে যেতে পারি এটাই আশা।'
ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি মোঃ হাফিজ জানান তার বাড়ি মাদারীপুরে। 'বাড়িতে যাব মোটরসাইকেলে করে, কিন্তু যেতে পারিনি। পিকআপে মোটরসাইকেল নেওয়ার জন্য ১০০০ টাকা চাচ্ছে। আমার পক্ষে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়।'
এ সময় তিনি প্রশ্ন তোলেন, 'অন্য বাইকারদের দোষ আমাদের ওপর নেব কেন? যারা অপরাধ করছে তাদেরকে শাস্তি পেতে হবে। সব বাইকারদের যদি পদ্মা সেতুতে উঠতে না দেয় তাহলে এর সার্থকতা কীভাবে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের?'
আব্দুল বাতেন যাবেন সাতক্ষীরায়। গতকাল সোমবার (২৭ জুন) ৮০০ টাকা দিয়ে পিকআপে মোটরসাইকেল নিয়ে মাওয়া প্রান্তে পৌঁছান তিনি। আজকে (২৮ জুন) ১০০০ টাকার বিনিময়ে পিকআপে যেতে হবে, তাও যেতে হবে ত্রিপলের ভেতরে করে।
তিনি বলেন, 'এভাবে কি যাওয়া যায়? মোটরসাইকেল যাচ্ছে, তবে পিকআপে করে। তাহলে কেন আমরা মোটরসাইকেলে করে যেতে পারব না? ১০০ টাকার ভাড়ায় যেতে পারতাম কিন্তু এখনতো আরও ৯০০ টাকা বেশি দিয়ে ১০০০ টাকায় যেতে হচ্ছে।'
নড়াইলগামী মো. রাসেল মিয়া জানান তার বাবা খুবই অসুস্থ। 'মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছিলাম তাড়াতাড়ি যাব। কিন্তু টোল প্লাজায় পার হতে পারলাম না। তাই পিকআপে পার হওয়া ছাড়া উপায় নাই,' বলেন তিনি।
পিকআপ চালক মোহাম্মদ শাজাহান মিয়া জানান, 'দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে পারব। সকাল থেকে তিনটা ট্রিপ দিয়েছি। প্রতিটি মোটরসাইকেল ১০০০ টাকা করে। গতকাল টোলসহ সব খরচ বাদ দিয়ে ৪৭০০ টাকা লাভ থেকেছে।'
আরেক পিকআপ চালক শিবচরের মোহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, 'সব সময়তো ব্যবসায় করা যায় না। গতকাল পিকআপ নিয়ে তিনবার আসা-যাওয়া করেছি। আজ একবার ট্রিপ দিলাম। গতকাল মোটরসাইকেল বেশি ছিল, তাই আয়ও ভালো হয়েছিল।'
ঢাকার একজন মিনি-ট্রাক চালক আরমান মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তার ট্রাকে তিনি আটটা মোটরসাইকেল নিতে পারেন। টোলভাড়ায় খরচ হয় ৩২০০ টাকা। 'লাভ ভালোই,' বলতে বলতে আবারও মোটরসাইকেল ট্রাকে তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি।
আরেক ট্রাকচালক সুলতান আহমেদও তার ট্রাকে মোটরসাইকেল তুলছেন। তিনিও জানান আজকে মোটরসাইকেলের সংখ্যা কম, 'গতকাল দাঁড়াতে হয়নি, দ্রুতই গাড়ি ভরে গেছে।' আজকে তিনি ৮০০০ টাকা দরে মোটরসাইকেল পরিবহন করছেন।
বাংলাদেশ সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন জানান, পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপারে নিষেধাজ্ঞার কারণে টোলপ্লাজা এলাকায় আজ (২৮ জুন) মোটরসাইকেলের সংখ্যা খুবই কম। পিকআপে করে মোটরসাইকেলকে ঢেকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করে পার হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'যেসব পিকআপের ওপরে মোটরসাইকেলে আরোহী বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে, সেগুলোকে নিরাপত্তাজনিত কারণে পার হতে দেওয়া হচ্ছে না।'