যেভাবে তারুণ্যের সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিচ্ছে ইয়াং বাংলা
সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের কাজে তরুণ সমাজকে অনুপ্রাণিত, সম্পৃক্ত ও সংগঠিত করতে ২০১৪ সালের নভেম্বরে যাত্রা শুরু করে ইয়াং বাংলা। সূচনালগ্ন থেকে ইয়াং বাংলা তরুণদের উদ্ভাবনী পরিকল্পনা ও উদ্যোগসমূহকে স্বীকৃতি দানের পাশাপাশি তাদের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজন এবং নীতিনির্ধারকদের সংযোগ ঘটাতে কাজ করছে। 'কানেক্টিং দ্য ডটস' স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করা ইয়াং বাংলা বর্তমানে তারুণ্যের সবচাইতে বড় প্লাটফর্ম। ১৫ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী এবং ৫০০টির বেশি সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে চলা এই সংগঠনটির বর্তমানে সদস্য সংখ্যা প্রায় ১ লাখের বেশি। তারুণ্যের সর্ববৃহৎ এই প্লাটফর্মটির কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে-
জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড
তরুণদের দেশ গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে তারুণ্য নির্ভর সংগঠনগুলোকে নিয়ে ইয়াং বাংলা চলতি বছরে ষষ্ঠবারের মত আয়োজন করছে 'জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড'। যেখানে প্রতিবার ৩০টি করে সেরা সংগঠনকে মনোনয়ন দেয়া হয় জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের জন্য। ষষ্ঠ আয়োজনে ১০ তরুণ সংগঠকের হাতে উঠবে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড। এছাড়াও ৩ জনের হাতে উঠবে আজীবন সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড। ইয়াং বাংলার প্লাটফর্ম ব্যবহার করে এই বিজয়ী সংগঠনের পাশাপাশি মনোনয়ন পাওয়া সংগঠনগুলোও নিজেদের প্রচারণা ও বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে ডেলিগেট হিসেবে বিভিন্ন দেশে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মগুলোতে কাজ করার সুযোগ লাভ করে।
জয় বাংলা কনসার্ট
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের আগুনঝরা ভাষণকে স্মরণ করে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে করোনা মহামারির আগ পর্যন্ত ৬ বছর ধরে আয়োজন করা হচ্ছে জয় বাংলা কনসার্ট। তরুণদের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলা এই কনসার্ট উপভোগ করতে প্রতি বছর ৬০ হাজারেরও বেশি তরুণ-তরুণী আর্মি স্টেডিয়ামে সমবেত হয়। এছাড়াও অনলাইন ও টেলিভিশনে কনসার্টটি উপভোগ করেন আরো ১০ লাখের বেশি মানুষ।
ইয়াং বাংলার সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
দেশের সবচেয়ে বড় তারুণ্যের প্ল্যাটফর্ম ইয়াং বাংলার সদস্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছর মে মাসে তিনি যোগ দেন এই প্লাটফর্মে। সিআরআই ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানান ইয়াং বাংলার নতুন সদস্য শেখ হাসিনার কথা। এ সময় সেখানে ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অপর কন্যা শেখ রেহানা।
ভিশন ২০২১ ইন্টার্নশিপ
তরুণদের কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইয়াং বাংলা শুরু করে 'ভিশন ২০২১ ইন্টার্নশিপ'। বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এলজিইডি মন্ত্রণালয় ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর মত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রথমবারের মত ইন্টার্নের সুযোগ তৈরি করে ইয়াং বাংলা। এছাড়াও মাইক্রোসফট বাংলাদেশ ও আমরা নেটওয়ার্কে ইন্টার্নের সুযোগ তৈরি করে ইয়াং বাংলা। এখন পর্যন্ত ২৮ হাজার ৫০০ জনের বেশি ইন্টার্নের সুযোগ করে দিয়েছে ইয়াং বাংলা।
শিক্ষা ও কর্মক্ষম করে গড়ে তোলা
তরুণদের শিক্ষা প্রদান ও কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বেশ কিছু প্রকল্প চালু করে ইয়াং বাংলা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- কর্ম সোপান পাটাতন ও মাইক্রোসফট ইয়াং বাংলা ইনিশিয়েটিভ। এই দুই কার্যক্রমের মাধ্যমে তরুণদের প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি ক্যারিয়ার বিষয়ে সচেতনতা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে ১২ হাজার ৫৭ জনকে আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে ইয়াং বাংলা প্লাটফর্ম।
ই-ভিলেজ
কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের জন্য কৃষি প্রযুক্তিতে উন্নয়নে বিকল্প নেই। আর সে কারণেই ইয়াং বাংলার উদ্যোগ ই-ভিলেজ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইয়াং বাংলার ৫৪ হাজার পরিবার কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা লাভ করবে, সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ১৫ হাজার তরুণের।
শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব
সারাদেশে স্থাপিত ২ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে প্রশিক্ষণের জন্য ইয়াং বাংলার ৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবী রয়েছে। এই ল্যাবগুলো থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করছে ৬০ হাজারের বেশি স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী। সেই সঙ্গে স্ক্রেচ এবং পাইথন প্রোগ্রামের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে ৩০০ শিক্ষক ও ৫ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীকে।
জাতীয় নীতি নির্ধারণে তরুণদের অংশগ্রহণ
জাতীয় নীতি নির্ধারণে তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে ইয়াং বাংলা। এরই অংশ হিসেবে ইয়াং বাংলা এখন পর্যন্ত দেশের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে তরুণদের 'পলিসি ডায়লগ'-এর আয়োজন করে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বেশ কিছু সম্মেলনে বাংলাদেশের তরুণ হিসেবে মত প্রকাশের জন্য ইয়াং বাংলার পক্ষ থেকে প্রেরণ করা হয় ৭২ জনকে। এ ছাড়াও 'লেটস টক' নামে পৃথক একটি আয়োজনও পরিচালনা করে ইয়াং বাংলা।
তারুণ্যের সর্ববৃহৎ প্লাটফর্ম ইয়াং বাংলা
বর্তমানে ইয়াং বাংলার সদস্য ২ লাখের বেশি। ইয়াং বাংলার সঙ্গে সংযুক্ত আছে প্রায় ১ লাখের বেশি তরুণ এবং ৫০০টির বেশি সংগঠন। ইয়াং বাংলার উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে ২০০টি কার্যক্রম। ১৫ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী রয়েছে ইয়াং বাংলার। বিগত চার বছরে ইয়াং বাংলা মোট ২৮,৫০০ জন শিক্ষার্থীকে ইন্টার্নশিপের সুযোগ প্রদান করে। সব মিলিয়ে সন্দেহাতীত ভাবেই বলা যায়, তারুণ্যের সর্ববৃহৎ প্লাটফর্ম ইয়াং বাংলা এখনো তার কর্মপরিধি বৃদ্ধি করে চলেছে। এছাড়াও দেশের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই প্লাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ।
পাবলিক প্লেসে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে ক্যাম্পেইন ও পলিসি ক্যাফে
'পাবলিক প্লেসে নারীর নিরাপত্তা' বিষয়ক সচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইন করে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই), জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি)। ইয়াং বাংলার সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততায় চলে এই কার্যক্রম। এরই ধারাবাহিকতায় পাবলিক প্লেসে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণা কার্যক্রমও পরিচালনা হয়। যেখানে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে সমাজে তৈরি হওয়া হুমকিগুলো নিয়ে গবেষণা এবং এই হুমকি মোকাবেলায় করণীয় নিয়ে পরবর্তীতে নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা-পর্যালোচনার ব্যবস্থাও করা হয় পলিসি ক্যাফেতে।
বিচ্ছুরণ
বিশ্বের বুকে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ বর্তমানে জ্বালানি সংকট এবং পরিবেশ উপযোগী জ্বালানির সন্ধান। আর এই লক্ষ্যে ইয়াং বাংলার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় নবায়নযোগ্য শক্তি খুঁজতে তরুণদের নিয়ে আয়োজন করে 'বিচ্ছুরণ' নামে প্রতিযোগিতা। দেশের জ্বালানি সাশ্রয় এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির সন্ধানে দুর্দান্ত সব আইডিয়া নিয়ে এই প্রতিযোগিতায় হাজির হয় এক ঝাঁক তরুণ।
ইয়াং বাংলা দেশের উদ্যমী, প্রতিশ্রুতিশীল তরুণসমাজকে ক্ষমতায়নের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে তোলার কাজটি করে যাচ্ছে। দেশ ও সমাজ পরিবর্তনে তরুণদের উদ্যোগগুলোকে টেকসই করে তুলতে এবং তাদের গল্পগুলো তুলে ধরে ইয়াং বাংলা। এছাড়াও তরুণদেরকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূলনীতি এবং মন্ত্রে উজ্জীবিত করে ইয়াং বাংলা। বিগত ৮ বছর ধরে এভাবেই দেশ গঠনে তরুণদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে তারুণ্যের সর্ববৃহৎ প্লাটফর্ম ইয়াং বাংলা।