বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের ঋণ আর চায় না নাগরিক সমাজ, ক্ষতিপূরণের দাবি
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে চলমান বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন সম্মেলনের প্রাক্কালে সারাবিশ্বে নাগরিক সমাজ তাদের ঋণ ব্যবস্থার সমালোচনায় প্রতিবাদ সমাবেশ করছে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল)। তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ দিন এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।
তাদের মূল দাবি, জনগণের ওপর আরোপিত 'অনৈতিক ঋণ' অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। বিশ্বের দরিদ্রদের প্রতি বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের দেনা রয়েছে বলে মনে করে নাগরিক সমাজ।
এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এপিএমডিডি), বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, কোস্ট ফাউন্ডেশন, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও সিপিআরডি'র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারশনের সাধারণ সম্পাদক জায়েদ ইকবাল খান এবং সঞ্চালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের উপ-নির্বাহী পরিচালক সনত কুমার ভৌমিক তার বক্তব্যে বলেন, 'রোহিঙ্গা শরণার্থীর আগমনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ঋণ প্রস্তাব করা হচ্ছে। এ সব সমস্যার জন্য আমরা কোনো অংশে দায়ী নই। তাহলে এর জন্য আমরা কেন ঋণ গ্রহন করব? এর জন্য যারা দায়ী, তাদের উচিত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা।'
দরিদ্র দেশের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঋণের সুদের হার বেশি উল্লেখ করে বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আরা রুমি বলেন, উন্নত দেশগুলো যেখানে গড়ে অল্প সুদ দেয়, সেখানে আফ্রিকা ও এশিয়া দেশগুলোকে যথাক্রমে ১১ দশমিক ৬ ও সাড়ে ৬ শতাংশ গড় সুদ দিতে হয়।
'পাবলিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আর ঋণ না দেওয়ায় এসব দেশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ সুদে ঋণ গ্রহণ করছে,' বলেন তিনি।
সমাবেশে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক জায়েদ ইকবাল খান বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো ঋণ শোধ করে মূলত তাদের রপ্তানি আয় থেকে। গত এক দশকে তাদের সেই সক্ষমতা শেষ হয়ে গিয়েছে।
সভা সঞ্চালনাকালে কোস্ট ফাউন্ডেশনের মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের ঋণের সুদ পরিশোধ করতেই তাদের সম্পদ শেষ করে ফেলছে। বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করা ১৩৯টি দেশ তাদের রাজস্ব বাজেটের ৩৫ শতাংশ ব্যয় করে এই ঋণ পরিশোধ খাতে। নিম্ন আয়ের দেশ ও নিম্ন মধ্য আয়ের দেশের ব্যয় হয় যথাক্রমে সাড়ে ৫৭ শতাংশ এবং সাড়ে ৪৪ শতাংশ।
'আমরা দরিদ্র জনগণের ওপর আরোপিত এ গণঋণ প্রত্যাখ্যান করছি, কারণ দারিদ্র্যের পেছনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের দায় রয়েছে। ঋণ নয়, তাদের উচিত ঐতিহাসিক দেনা পরিশোধ করা,' বলেন তিনি।