হাসিনা সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতিতে শক্তি জুগিয়েছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ-এডিবির প্রশংসা: আনু মুহাম্মদ
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে যে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে, তার জন্য বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রশংসাও দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, এসব সংস্থার প্রশংসা এবং অর্থায়ন শেখ হাসিনার সরকারকে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে আরও শক্তি জুগিয়েছে।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে 'শ্বেতপত্র এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট' শীর্ষক সিম্পোজিয়ামের দ্বিতীয় পর্বে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ২০২৪ আয়োজিত এ সিম্পোজিয়ামে সহযোগিতা করেছে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক কমিটি।
আনু মুহাম্মদ অভিযোগ করেন, "বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবি সাবেক সরকারের উন্নয়নের প্রশংসা করেছে এবং এটিকে 'ডেভেলপমেন্ট মিরাকল' বলে আখ্যায়িত করেছে। তাদেরকে এর দায়িত্ব নিতে হবে। তাদের সমর্থনই সরকারকে অনিয়ম ও লুটপাটে শক্তি জুগিয়েছে।"
এসব ঘটনার পেছনে দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে 'জবাবদিহিতার আওতায় আনা দরকার' বলে মন্তব্য করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, "এদের মধ্যে এক নম্বরে আছে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া এডিবি সব প্রকল্পের মধ্যে আছে।"
আইএমএফ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আইএমএফ বিভিন্ন ধরনের প্রেসক্রিপশন দিচ্ছে—করাপশন বন্ধ করা, রিফর্ম করা; এগুলো ঠিক আছে। কিন্তু এগুলোর চেয়ে তারা বেশি আগ্রহী ভর্তুকি কমানো এবং জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে।"
তিনি আরও বলেন, আইএমএফের সুপারিশে ভর্তুকি কমানো ও মুদ্রাস্ফীতি বাড়ানোর নীতিমালা জনগণের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। অথচ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের তেমন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
"আইএমএফ তিন বছরে যে পরিমাণ ঋণ দেবে, দুই মাসেই তার চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে। অথচ রেমিট্যান্স যারা পাঠায়, তাদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। বরং আইএমএফের পরামর্শে জনগণের ওপর বোঝা চাপানো হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "সাবেক সরকারের সময় অর্থ লুটপাটের চেয়েও বড় ক্ষতি হয়েছে প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হওয়ার কারণে। এখন প্রতিষ্ঠানগুলো এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, এগুলো কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় কাজ করে না। সব কিছু ওপরের নির্দেশে চলে। এসব প্রতিষ্ঠান পুনরুদ্ধারে সরকার যথেষ্ট উদ্যোগী ভূমিকা পালন করছে না।"
অবশ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অস্থায়ী হওয়ায় তাদের কাছ থেকে খুব বেশি আশা করা উচিত নয় বলে মনে করেন তিনি। "তবে কিছু পরিবর্তনের সূচনা আশা করা যেতে পারে," বলেন তিনি।
আনু মুহাম্মদ বলেন, "একজন ব্যক্তি বা একটি সরকার এতটা পরাক্রমশালী হতে পারে না যে, তারা যা খুশি তা-ই করতে পারে। তাদের সমর্থনের পেছনে একটি শক্তিশালী ভিত্তি থাকে। এ ভিত্তির মধ্যে রয়েছে আমলাতন্ত্র, ব্যবসায়ী শ্রেণির একটি অংশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।"
তিনি আরও বলেন, সাবেক সরকারকে সমর্থন দেওয়া আমলাতন্ত্রের গঠনমূলক পরিবর্তন ছাড়া ভবিষ্যতে কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। "আমলাতন্ত্র এমন একটি জটিল কাঠামো, যা পরিবর্তন করা না গেলে উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে থাকবে।"
উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও পরিবেশ ধ্বংসের প্রসঙ্গ টেনে আনু মুহাম্মদ বলেন, "রেলওয়ের উন্নয়নের বদলে সড়ক যোগাযোগে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, যা পরিবেশ দূষণ ও নদী ধ্বংসের কারণ হয়েছে। এ ধরনের প্রকল্পে অর্থায়নকারী সংস্থাগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা জরুরি।"
তিনি বলেন, "এনার্জি ও পাওয়ার, মেগা প্রজেক্টসহ যত দুর্নীতি এবং লুণ্ঠন হয়েছে এবং তার পেছনে যাদের ভূমিকা রয়েছে, তাদের কারণেই পাবলিক এডুকেশন, পাবলিক হেলথ কেয়ার সিস্টেম এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বিপর্যস্ত হয়েছে।"