কুড়িগ্রামে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য প্রয়োজন সার্বিক সহযোগিতা
বন্যাকবলিত কুড়িগ্রামে পানির স্তর কমে আসলেও সেখানে বসবাসরত লাখো মানুষ হারিয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাপনের ন্যূনতম সম্বল। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেও রয়ে গেছে সংকট, তৈরি হচ্ছে নিত্য নানা সমস্যা।
সাম্প্রতিক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ তাই জোর দিচ্ছে কুড়িগ্রামের এই বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে, সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে।
বিভিন্ন মিডিয়া প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শতাব্দীর সবচেয়ে বড় বন্যা ঘটে গেছে কুড়িগ্রামে। এই পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলের মানুষের কাছে সবার আগে জরুরি সহায়তা নিয়ে পৌঁছে গেছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার জোসনার বাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়, তার ও তার পরিবারের জীবন হয়ে পড়ে অনিশ্চিত।
"আমাদের প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবন হঠাৎ-ই উল্টে গেছে এই এক বন্যায়। আমার ঘর পানির নিচে চলে যায়। যেদিকেই তাকাই, শুধু বন্যার পানি ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। আমার পুরা পরিবারই খাবারের সংকটে ভুগছে। কিন্তু আমার যেন বাড়তি সংকট। এইরকম পরিস্থিতিতে মাসিক ব্যবস্থাপনা কীভাবে করব? কাপড় কীভাবে পালটাবো? আমি কিছুই জানিনা!", জানান জোসনা।
জোসনার মত নাগেশ্বরীর কচাকাটা এবং বল্লভেরখাস ইউনিয়নের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে খাদ্য ও অন্যান্য সহযোগিতা নিয়ে জরুরি সাড়াপ্রদানের (ইমার্জেন্সি রেস্পন্সের) কাজ করে চলেছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। আর এই সাড়াপ্রদানের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মেয়ে ও যুব নারীদের মৌলিক চাহিদা।
জরুরি সাড়াপ্রদানের প্রথম ধাপে ৫৫৬০ প্যাকেট শুষ্ক খাবার, ১ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ১৮৪০টি খাদ্য-ভিন্ন অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং ১৮২০ মাসিক ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বন্যাকবলিত মানুষের কাছে।
মর্জিনা, নাগেশ্বরীর আরেকজন নারী জানান, "বন্যার এই ভয়াবহ আঘাতের পর আমাদের আর খাবার রান্না করে খাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এমন সংকটের সময়ে এই শুকনা খাবারের সহায়তা পাওয়াটা আমাদের জন্য তাই এক বিরাট স্বস্তি। তাছাড়া মাসিক ব্যবস্থাপনার জন্য যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম- এটা জরুরি ছিল ভীষণ। কারণ এই সমস্যার কথা তো আমরা কাউকে গিয়ে বলতে পারি না।"
স্বল্পকালীন জরুরি এই সাড়াপ্রদান প্রকল্প বাস্তবায়নে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-কে সহায়তা করছে মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি।
কমিউনিটির কাছে জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেয়ার এই কার্যক্রমের সময় উপস্থিত ছিলেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর সেন্ট্রাল এবং নর্দান রিজিয়নের প্রধান আশিক বিল্লাহ, কচাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন ও বল্লভেরখাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আব্দুর রাজ্জাক।
"গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে এই বন্যায় কুড়িগ্রামের ২ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের বাসস্থান হারিয়েছেন। নাগেশ্বরীতে আমরাই সবার আগে জরুরি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসি। কিন্তু কমিউনিটির প্রত্যেকের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের সবার একসাথে সামনে এগিয়ে আসতে হবে যেন এই মানুষগুলো দ্রুত পুনরায় তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে। কুড়িগ্রামের মানুষের জন্য এটি একটি সংকটময় সময়, এবং আমাদের প্রত্যেকের তাদের পাশে এসে দাঁড়ানো প্রয়োজন", বলেন আশিক বিল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, "বন্যা পরবর্তী এই সময়ে পানিবাহিত রোগের কারণে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গর্ভবতী নারীদের দুর্ভোগের সীমা নেই। স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করা এখানে আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে"।
এই এলাকায় মেয়ে ও যুব নারীদের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিতের পাশাপাশি শিশু সুরক্ষা নিশ্চিতে, শিক্ষায়, এবং জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধেও কাজ করে যাবে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।