কল্পিত স্বর্ণদ্বীপের সন্ধান পেলেন সুমাত্রার জেলেরা?
১৪ শতকের কাছাকাছি সময় থেকেই বিলুপ্ত হতে থাকে সুমাত্রার ঐতিহাসিক শ্রীবিজয়া সাম্রাজ্য। ভিনদেশীদের কাছে শ্রীবিজয়া ছিল স্বর্ণদ্বীপ। স্বর্ণের সন্ধানে বহু অভিযাত্রী এদেশে পাড়ি জমালেও শেষ পর্যন্ত নিরাশ হন। সাম্রাজ্যের সঙ্গেই ধীরে ধীরে মলিন হতে থাকে স্বর্ণদ্বীপের উপাখ্যান।
তবে, কয়েক শতাব্দী পর মাছ ধরতে গিয়ে যেন সেই স্বর্ণদ্বীপেরই সন্ধান পেয়েছেন স্থানীয় জেলেরা। ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় পালেমবাঙের কাছে জলের নিচে সমুদ্র তলদেশে মিলছে পুরাকীর্তির সন্ধান। আর সেগুলো উদ্ধারে রাতের বেলা যথাযথ ব্যবস্থা ছাড়া ঝুঁকি নিয়েই ডুবুরি হিসেবে অভিযানে নামেন জেলেরা।
জেলেদের পাওয়া নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে অষ্টম শতাব্দীর রত্নখচিত বুদ্ধমূর্তি থেকে শুরু করে রাজকীয় মহামূল্যবান সব গহনা।
ব্রিটিশ সামুদ্রিক প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. সিন কিংসলে বলেন, "গত পাঁচবছর ধরে অবিশ্বাস্য সব মূল্যবান জিনিসপত্র উঠে আসছে। বিভিন্ন যুগের মুদ্রা, স্বর্ণ, বুদ্ধমূর্তি, রত্নপাথর সবই আছে। রূপকথা ভেবে সিনবাদের যত কাহিনী পড়েছেন, এসব দেখার পর তা সত্যি মনে হবে।"
শ্রীবিজয়া এক 'জলজ নগরী' ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আধুনিক নৌকাবাসীদের মতোই শ্রীবিজয়ার মানুষ নদীর ওপর বসতি গড়েছিল। প্রাচীন গ্রন্থানুসারে, যখন এই সভ্যতার শেষ হয়, তখন তাদের কাঠের বাড়ি, প্রাসাদ, মন্দির এবং সরঞ্জামাদি সব ডুবে যায়।
সুমাত্রার আধুনিক দ্বীপবাসীরাই শ্রীবিজয়ার রহস্য উন্মোচিত করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সে সময় স্থল ও জলপথে চীন, আরব ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যকার প্রধান বাণিজ্যপথ ছিল সিল্ক রোড। সমুদ্রে সিল্ক রোডের প্রধান জলপথগুলো নিয়ন্ত্রণ করত শ্রীবিজয়া।
কিংসলে বলেন, "অষ্টম শতাব্দীতে যখন পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অন্ধকার যুগ শুরু হয়, তখন দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মানচিত্রে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী একটি সাম্রাজ্যের আবির্ভাব ঘটে। ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে শ্রীবিজয়ার শাসকরা মধ্যপ্রাচ্য ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যপথ নিয়ন্ত্রণ করে। শ্রীবিজয়া আন্তর্জাতিক উৎপাদন ব্যবস্থার প্রধান সংযোগস্থলে পরিণত হয়। এখানকার বিত্তবান সম্রাটরা কিংবদন্তীতে পরিণত হন।"
অর্থবিত্ত ক্ষমতায় সমৃদ্ধ এই সাম্রাজ্যের পতন কীভাবে ঘটল তা আজও পরিষ্কারভাবে জানা যায় না। কিংসলের ধারণা পম্পেইয়ের মতো ইন্দোনেশিয়ার আগ্নেয়গিরিতেই ধ্বংস হয়েছিল এই সাম্রাজ্য। উত্তাল নদীও যে পুরো শহরকে গ্রাস করে থাকতে পারে, সেই সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
তবে, আনুষ্ঠানিক প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান শুরু না হলে এই প্রশ্নগুলোও হারিয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন। জেলেরা এখন যেসব পুরাকীর্তি নিদর্শন উদ্ধার করছে তা প্রত্নতত্ত্ববিদরা কিনে নেন। শেষ পর্যন্ত তা অ্যান্টিক ব্যবসায়ীদের হাতে পৌঁছায়। অন্যদিকে, জেলেরাও ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে সমুদ্রে ডুবুরি অভিযান চা্লায়।
কিংসলে বলেন, "পৃথিবী থেকে তারা হারিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক অ্যান্টিক বাজারে হারিয়ে গেছে তাদের পুরাকীর্তি নিদর্শন। শ্রীবিজয়ার উত্থান ও হারিয়ে যাওয়ার গল্পগুলো নতুন করে বলার আগেই আবারও বিলীন হতে চলেছে।"
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান