ধুলোর কারণে দ্রুত বরফ গলছে হিমালয়ের
পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্তৃত এবং সুউচ্চ পর্বত শৃঙ্খল হিমালয়। পাহাড়ের রুক্ষ পাথুরে ভূ-প্রকৃতি শুধু মনোমুগ্ধকর নয়, তা জীবনদায়ীও বটে।
হিমালয়ের জমাট হিমবাহগুলো গ্রীষ্মে কিছুটা গলে যাওয়ার কারণেই সুপেয় পানির যোগান পান দক্ষিণ এশিয়ার ৭০ কোটির বেশি মানুষ। কৃষি, শিল্প আর যোগাযোগেও গ্লেসিয়ার গলে সৃষ্টি হওয়া নদ-নদীর অবদান অপরিসীম।
জলবায়ু পরিবর্তন পাল্টে দিচ্ছে এ সমীকরণ। গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের কারণে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ায় হিমবাহ দ্রুত গলে যাওয়ার ঘটনা বেশ পুরোনো। তবে সম্প্রতি 'ন্যাচার ক্লাইমেট চেঞ্জ' শীর্ষক গবেষণায় এর পেছনে ধূলি দূষণের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে জানানো হয়।
গবেষণা নিবন্ধ অনুসারে, বরফের উপর উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাবকে শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করছে সুদূর বায়ুমণ্ডলীয় ধূলিকণার ঝরে পড়া। সব মিলিয়ে গত ৩০ বছরে হিমালয়, হিন্দুকুশ ও কারাকোরাম পর্বতমালা হারিয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিমবাহ।
প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে কর্মরত বিজ্ঞানী ইয়ুন কিয়ান এবং তার সহকর্মীরা সাম্প্রতিক গবেষণাটি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি শক্তি গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞান বিভাগের আওতায় সংস্থাটি পরিচালিত হয়।
অত্যাধুনিক রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে বিজ্ঞানীরা বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে আফ্রিকা এবং এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা ধূলি ঝড়ের প্রভাব কম্পিউটার সিম্যুলেশনের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করেন।
সিম্যুলেশনে দেখা গেছে, পাহাড়ি হিমবাহে এসব কণা ঝড়ে পড়ার কারণে তুষার তার স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা অনেকটা হারিয়ে ফেলে, ফলে তার সুর্যের বিকিরণকে প্রতিফলিত করার ক্ষমতাও হ্রাস পায়। ঠিক একারণেই ধূসর বরফ অনেক দ্রুত গলে যায়।
উপরিস্তরের বরফে ধুলার আবরণ সাড়ে চার হাজার মিটার উচ্চতায় অবস্থিত হিমবাহগুলোকে সবচেয়ে বেশি গলে যাওয়ার শিকার করেছে, বলে জানান বিজ্ঞানী দলের সদস্যরা।
গবেষণায় তারা বলছেন, ধুলা সাধারণ প্রাকৃতিক উপাদান হলেও, মানুষের কর্মকাণ্ডের জেরে এখন এটি অনেক বেশি উৎপন্ন হয়ে পৃথিবীর দূরতম প্রান্তে বেশি করে ছড়িয়ে পড়ছে। বন ধবংস, কৃষিকাজে জমির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এবং নানা ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের কারণেই বেড়েছে বায়ু প্রবাহের মাধ্যমে মাটির উপরিস্তর ক্ষয়ে যাওয়ার মাত্রা।
ধুলার তুষার গলানোর ক্ষমতা সম্পর্কে মানুষ বেশ কয়েক দশক ধরেই জানে। কিন্তু, অতি-উচ্চতায় এর প্রভাব সম্পর্কে এই প্রথম সর্বাধুনিক সিম্যুলেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। আর নেতিবাচক ক্ষমতা দেখে খোদ বিজ্ঞানীরা বিস্মিত হয়ে গেছেন।
তারা এখন মনে করছেন, মাঝারি-উচ্চতার পর্বতমালাতেও হিমবাহ ক্ষয়ের পরিমাণ বাড়াবে এই দূষণ।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান