পাঁচ বছরের কমবয়সী ২০ কোটি শিশু পুষ্টিহীনতার শিকার: ইউনিসেফ
পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জন হয় পুষ্টিহীনতার শিকার নয়তো অতিরিক্ত ওজনের শিশু। আর এর কারণ হিসেবে অপর্যাপ্ত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসকে দেখছে ইউনিসেফ। অতিশৈশব থেকেই যার শুরু। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ইউনিসেফের তরফ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
আশংকাজনক সংখ্যক শিশুরা এই অপর্যাপ্ত আহার এবং খাদ্যাভ্যাসের শিকার। এতে স্বাস্থ্যহানিতে ভুগছে তারা। “বিশ্ব শিশু পরিস্থিতি ২০১৯: শিশু, খাদ্য এবং পুষ্টি” শিরোনামে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে।
এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬ মাস থেকে ২ বছর বয়সী শিশুদের দুই-তৃতীয়াংশই পর্যাপ্ত খাবার খেতে পায় না। এতে দৈহিক বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের সুষ্ঠু বিকাশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। এর পাশাপাশি তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, বাড়ছে তাদের দেহে রোগ-সংক্রমণের মাত্রা, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মারাও যাচ্ছে শিশুরা।
“প্রযুক্তি, সংস্কৃতি এবং সামাজিক কাঠামোতে যতই অগ্রগতি আসুক না কেন, খুব মৌলিক একটা বিষয় কিন্তু এড়িয়ে যাচ্ছি আমরা-- যদি আজকের শিশুর পর্যাপ্ত পুষ্টির চাহিদা পুরণ না হয়, তাহলে তারা সঠিকভাবে বেড়ে উঠবে না”-- সতর্ক করলেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর।
তিনি যোগ করলেন, “লাখ লাখ শিশু অস্বাস্থ্যকর খাবার ও অপর্যাপ্ত পরিমাণে খেয়ে বড় হচ্ছে। কারণ এর চেয়ে ভালো খাবার সুযোগ নেই তাদের। শুধু পেট ভরে খাওয়ার বিষয় নয়, সব শিশুর জন্য খাদ্যের অধিকারেরও প্রশ্ন।”
সব শিশুর খাদ্যের চাহিদা পূরণ করাই এখন বিশ্বের চ্যালেঞ্জ বলে মত দিলেন এই ইউনিসেফ কর্মকর্তা।
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, বর্তমান বিশ্বে শিশুদের এই অপর্যাপ্ত খাদ্যাভ্যাস শুরু হয় একেবারে ছোটবেলা থেকেই। যদিও নবজাতকদের ক্ষেত্রে মায়ের দুধ খেলে শিশুদের এই সমস্যা সমাধান হতে পারে, জীবন বাঁচতে পারে অনেক শিশুর। বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মাত্র ৪২ শতাংশ নবজাতককে মায়ের দুধ খাওয়ানো হয়। একটা বড় অংশের শিশুদের বাজারের ফর্মুলা দুধ কিনে খাওয়ানো হয়। ব্রাজিল, চীন এবং তুরস্কের মতো মধ্য আয়ের দেশগুলোতে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত শিশুদের ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর প্রবণতা বেড়েছে ৭২ শতাংশ পর্যন্ত।
আর এই ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর প্রবণতা বেড়ে যাবার কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে- এসমস্ত পণ্যের অনৈতিক মার্কেটিং, দুর্বল নীতিমালা। মায়ের দুধ খাওয়ানোতে উৎসাহিত করতে পর্যাপ্ত উদ্যোগ ও পরিকল্পনার অভাব।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুরা ছয়মাস বয়স থেকেই শক্ত খাবার খেতে শুরু করে অথচ এসময় অনেক শিশুকেই সঠিক খাবার দিয়ে তাদের খাদ্যাভ্যাস শুরু করা হয় না।
এছাড়াও ছয় মাস থেকে দুই বছর বয়সের শিশুদের ৪৫ শতাংশকেই কোনো রকমের ফল বা শাক-সবজি খাওয়ানো হয় না। প্রায় ৬০ শতাংশ শিশুকে ডিম, দুধ, মাছ বা মাংস খেতে দেওয়া হয় না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ৪২ শতাংশ স্কুলগামী শিশুই দিনে অন্তত একবার কার্বোনেটেড কোমল পানীয় পান করে। এছাড়া তাদের ৪৬ শতাংশই সপ্তাহে অন্তত একবার ফাস্ট ফুড খায়।
এর ফলে, বিশ্বব্যাপী শিশুকাল থেকেই অতিরিক্ত ওজন-সংক্রান্ত নানা সমস্যায় এবং মোটা হয়ে যাওয়ার সমস্যায় (ওবেসিটিতে) ভুগছে শিশু-কিশোররা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে খাদ্য-ঘাটতি দেখা দেয়।যেমন, বিশ্বব্যাপী খরার কারণে কৃষিখাতের ৮০ শতাংশের মতো ক্ষতি হয়। এর ফলে খাবারের মান ও দাম বেড়ে যায়। ফলে পরিবারে শিশুর খাদ্যাভ্যাসে আসতে পারে ব্যাপক পরিবর্তন।