মদ ছেড়ে দেওয়ায় ‘ডেলিরিয়ামে’ আক্রান্ত হয়েছিলেন ভ্যান গঘ: গবেষণা
সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, কিংবদন্তি ডাচ চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ 'ডেলিরিয়ামে' আক্রান্ত ছিলেন। অ্যালকোহল উইথড্রয়ালই তার ডেলিরিয়ামে আক্রান্ত হওয়ার প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে বলে গবেষকরা জানান।
ভ্যান গঘ কী ধরনের রোগে আক্রান্ত ছিলেন, সেই ধারণা পেতে তার লেখা ৯০২টি চিঠির ব্যাপারে অভিজ্ঞ শিল্প ইতিহাসবিদদের সঙ্গে কথা বলা হয়। তার চিকিৎসকদের দেওয়া মেডিক্যাল রেকর্ডও যাচাই-বাছাই করা হয়।
দীর্ঘদিন বিভিন্ন মানসিক রোগে ভোগার পর ভ্যান গঘ ১৮৯০ সালে ৩৭ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন। ধারণা করা হয়, তিনি বাইপোলার ডিজঅর্ডার, বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারে (বিপিডি) আক্রান্ত ছিলেন। যদিও তার জীবদ্দশায় কখনোই এসব রোগের পরীক্ষা করা হয়নি।
নেদারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টার গ্রোনিঙ্গেনের গবেষকরা জানান, তারা মনে করছেন ভ্যান গঘ তার জীবদ্দশায় দুটি সাইকোটিক এপিসোডে ভুগেছিলেন। ১৮৮৮ সালে নিজের কান কেটে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার অ্যালকোহল গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। এই অ্যালকোহল উইথড্রয়ালের কারণে ডেলিরিয়ামে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানান তারা।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ভ্যান গঘ তার জীবনের শেষ বছরে বেশ কয়েকটি গুরুতর হতাশা ও অবসাদের এপিসোড পার করেছেন, যার মধ্যে অন্তত একটিতে মানসিক রোগের বৈশিষ্ট্য ছিল।
তবে ভ্যান গঘের সিজোফ্রেনিয়া ও পফিরিয়ার মতো রোগে ভোগার সম্ভাবনা ও প্রচলিত ধারণা বাতিল করে দেন তারা। তার মেডিক্যাল রেকর্ড দেখে জানা যায়, তিনি মৃগী রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব বাইপোলার ডিজঅর্ডারে গত সোমবার গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। গবেষকরা জানান, ফোকাল এপিলেপসিতে (এক ধরণের মৃগী রোগ) আক্রান্ত থাকার কারণে গঘ ধীরে ধীরে দুশ্চিন্তা, ডিলিউশন ও হ্যালুসিনেশনে আক্রান্ত হন।
তবে সে সময় রোগ নির্ণয়ের আধুনিক ব্যবস্থা না থাকায় গঘ আসলেই মৃগী রোগে আক্রান্ত ছিলেন কি না, তারও শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
এ ব্যাপারে গবেষণাটির সঙ্গে যুক্ত এমিরেটাস অধ্যাপক উইলেম নোলেন এক বিবৃতিতে জানান, 'পূর্বের অনুমিত কোনো রোগে ভ্যান গঘ আক্রান্ত ছিলেন, এ ব্যাপারেই আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারি। তিনি আক্রান্ত ছিলেন এমন অনেক রোগের ব্যাপারে আমরা ধারণা করতে পারলেও কখনোই পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'যদিও ভ্যান গঘ তার চিঠিগুলোতে অনেক কিছুই লিখে গেছেন, তবু আমাদের মনে রাখা উচিত, সেগুলো তার চিকিৎসকের কাছে লিখেননি। বরং চিঠিগুলো তার ভাই থিও ও পরিবারের সদস্যদের কাছে লেখা। হয়তো তিনি চিঠিতে কোনো বিষয় নিয়ে কমিয়ে লিখেছেন, কোনো বিষয়ে অত্যুক্তিও করেছেন। এ কারণেই আমাদের গবেষণা ভ্যান গঘের রোগের ব্যাপারে শেষ গবেষণা নয়।'
- সূত্র: সিএনএন