মেরি ক্রিস্টমাস ফ্রম সান্তা ক্লস
সেইন্ট বা সন্ত নিকোলাস ওরফে সান্তা ২৮০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি কোনো সময় পাটারাতে (এখনকার তুরস্কেও অংশ) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন গ্রিক। তিনি দয়ার সাগর। প্রচুর সম্পদ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। তিনি দরিদ্র ও অসুস্থ্যদের মধ্যে সব বন্টন করে দিয়েছেন। একবার এক নিঃস্ব পিতা তার তিন কন্যাকে ক্রীতদাসী হতে কিংবা পতিতাবৃত্তি গ্রহণ করতে বিক্রি করে দিচ্ছিল। সে সময় সন্ত নিকোলাস হাজির হন এবং মেয়েদের বিয়ের আয়োজন করার জন্য পর্যাপ্ত যৌতুকের অর্থ প্রদান করেন। তিনি শিশু ও নাবিকদের রক্ষাকর্তা এটা বহুল প্রচারিত। ৬ ডিসেম্বর তার মৃত্যু দিবসে সেন্ট নিকোলাস ভোজ অনুষ্ঠিত হতো। রেনেসা কাল পর্যন্ত তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় সন্ত হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। প্রোটেস্টেন্ট ধর্ম সংস্কারের সময় সেইন্টদের মান্যকরা নিরুৎসাহিত করা হলেও তার সুনাম অক্ষুন্ন থাকে। নেদারল্যান্ডস-এ তার খ্যাতি প্রথম তুঙ্গে উঠে কারণ স্যালভেশন আর্মির সান্তা পোশাকে সজ্জিত সদস্যরা রাস্তায় নেমে ১৮৯০ শতক থেকে দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য অনুদান তুলে চলেছে। ১৯৪৭ সালের অসাধারণ জনপ্রিয় সিনেমা 'মিরাকল অন ৩৪ স্ট্রিট'-এ কিশোরী নাটালি উড বিশ্বাস করতেন সান্তা আছেন। তার বিশ্বাস এতটুকুও ভাঙ্গেনি। সান্তা- সেই সিনেমায় ক্রিস ক্রিঙ্গল চরিত্রে অভিনয় করে এডমুন্ড গোয়েন অস্কার পুরস্কার পেয়েছেন।
ক্রিসমাস পালন, সান্তা ক্লসকে নিয়ে উৎসব এক সময় আইন করে নিষিদ্ধও করা হয়েছিল। সান্তা হয়ে অনেককে জরিমানা টাকার গুণতে হয়েছে।
সান্তাই হচ্ছেন পৃথিবীর সুন্দরতম সত্য মানুষ, আর। বিশ্বাসীরা বলে সুন্দরতম মিথ্যে মানুষ।
চাঁদ যেমন সত্য, সূর্য যেমন সত্য, ভালোবাসা যেমন সত্য, শিশুরা যেমন সত্য, সান্তা ক্লসও তেমনই সত্য।
২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে শুরু করে, সারা রাত ভালো শিশুদের জন্য উপহার বহন করে নিয়ে আসেন সান্তা। ফলে আনন্দে কাটে শিশুদের বড়দিন। কোথাও কোথাও সান্তার উপহার আসে ৬ ডিসেম্বর সেইন্ট নিকোলাস দিবসে।
সান্তাকে তার বিশেষ গাড়িতে চড়তেই হয়। বলগা হরিণ টানা এই গাড়িটাই পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগামী যানবাহন। তাতে সীমিত সময়ের মধ্যে প্রায় ২.২ বিলিয়ন শিশুর জন্য শুভেচ্ছা উপহার বন্টন করতে হয়। পৃথিবীতে শিশু যত বাড়ছে তাকে তত বেশি উপহার নিয়ে ছুটতে হচ্ছে। তাকে প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন বাড়ির সামনে থেমে সেখানে চিমনি আছে চিমনি বেয়ে নেমে উপহার দিয়ে আসতে হয়। সেখানে নেই, মানে গরমের দেশে তো আর ফায়ার প্লেসের দরকার হয় না, কাজেই সেখানে নেইÑ এমনিতে ঘরে ঢুকে পড়েন। হিসেব করে দেখা গেছে তার সেই গতি হতে হবে প্রতি সেকেন্ডে ১৮০০ মাইল।
সান্তার পোস্টকোড
হো হো হো যুক্তরাষ্ট্রের ডাক বিভাগ ইউ এস পোস্টকে ক্ষমতা দেওয়া হলো, তাদের কর্মকর্তারা সান্তাকে লেখা চিঠি খুলতে পারবেন এবং সেই চিঠির যথাযোগ্য উত্তরও দিতে পারবেন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চিঠিতে ঠিকানা লেখা থাকে : সান্তা ক্লস উত্তর মেরু। যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা রাজ্যের উত্তর প্রান্তবর্তী শহর নর্থ পোলের কেন্দ্রীয় ডাকঘরে প্রতি ক্রিসমাসে ৬০ হাজার চিঠি এসে জমা হয় আর নিউইয়র্কের প্রধান ডাকঘরে তিন লাখ।
ডাক টিকিটসহ ফিরতি খাম দিয়ে দিলে সেখানাকার সান্তাভক্ত স্বেচ্ছাসেবীরা সুন্দর ও উৎসাহ ব্যঞ্জক জবাব লিখে তা প্রেরকের কাছে পাঠিয়ে দেয়। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে নর্থ পোল ডাকঘরে প্রতিদিন সান্তার নামে এসেছে ১২ হাজার চিঠি। কানাডার পোস্টাল সার্ভিস সে দেশের শিশুদের একটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে, সান্তাকে চিঠি লেখার সময় সঠিক পোস্টকোড ব্যবহার করতে হবে। সান্তা ক্লস যেখানেই থাকুন না কেন, তার পোস্টকোড হবে ঐড় ঐড় ঐড় (হো হো হো )
সান্তার কাছে মা বাবার চাওয়া
বার্লিনের সান্তা ক্লস খোলামেলাভাবে বলেছেন, তার কারবার ছোটদের সঙ্গে, তাদের মা-বাবার সঙ্গে নয়। কিন্তু মা-বাবারা তার জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছেন। তাদের চাওয়ার শেষ নেই। তারা চান।
* যেন জনসমক্ষে বুড়ো আঙ্গুল না চোষে।
* যেন ভাই বা বোনের সঙ্গে মারামারি না করে।
* যেন গ্লাসের সবটুকু দুধ খায়।
* যেন ছড়াগুলো ঠিকভাবে মুখস্থ করে।
* যেন নিজের কক্ষটি পরিষ্কার রাখে।
* যেন পরীক্ষায় বেশি নম্বর পায়।
* যেন কালো বিড়ালটাকে লাথি না মারে।
* যেন চকোলেট কম খায়।
* যেন শুতে যাওয়ার আগে দাঁত ব্রাশ করতে ভুলে না যায়।
* যেন রাতে বিছানায় প্রস্রাব না করে।
বার্লিনের সান্তা ক্লস তাই ভীষণ বিরক্ত মা-বাবার ওপর। উপহারের সঙ্গে শর্ত জুড়ে দিলে শিশুদের আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে।
অদ্ভুত সব সান্তা তথ্য
সান্তার বাহন স্লেজ আর বলগা হরিণ। সান্তার বলগা হরিণ আসলে উড়তে পারে না। মঙ্গোলিয়ার বুনো গাধা ঘণ্টায় আট মাইল দৌড়াতে পাওে, এই গাধাও সান্তার বলগা হরিণের চেয়ে দ্রুতগামী। কিন্তু সান্তা যথন গাড়িতে থাকেন তখন এর চেয়ে দ্রুতগামী কোনো কিছুর কথা ভাবাই যায় না।
সান্তা একটু মোটা ধাচের। মিষ্টি একটু বেশি পছন্দ করেন, তাই। সান্তা যে বাড়িতে যান তার জন্য দুটো করে কুকিস তো রাখাই থাকে। হিসেব করে দেখা গেছে ক্রিসমাস ইভ আর ক্রিসমাস ডের মধ্যিখানের সময়টাতে তিনি কমপক্ষে ৩৭৪ বিলিয়ন ক্যালরি শক্তির খাবার খান, তাতে থাকে ৩৩০০০ টন চিনি আর ১৫১০০০ টন ফ্যাট কিংবা চর্বি। আর এই ক্যালরি পোড়াতে সান্তাকে কমপক্ষে ১০৯০০০ বছর দৌড়াতে হয়।
তিনি যে আসলে লাল সাদার স্যুট পছন্দ করেন ১৯৩১ সালের আগে এটা জানাই ছিল না। আগের বছরগুলোতে তাকে বাদামি, নীল, সবুজ এবং এমনকি চোট রঙ-এর পোশাকও পরানো হয়েছে। ১৯৩৯ সালে কোকো কোলা কোম্পানির মডেল হিসেবে কাজ করার সময় তাকে লাল সাদার যে পোশাক পরানো হয় তিনি তাই পছন্দ করেন। এটাই এখন শান্তা ক্লসের আন্তর্জাতিক পোশাক।
সান্তা ব্যাচেলরই ছিলেন, ১৮৪৯ সালে জানা গেল ব্যাপারটা সঠিক নয়। জেমস রিস নামে একজন ধর্মযাজক ফিলাডেলফিয়াতে বাস করতেন, ধর্মকর্মের ফাকে গল্পও লিখতেন। তিনি অ্যা ক্রিশমাস লিজেন্ড নামের একটি গল্পে ফাঁস করে দিলেন সান্তার বাড়িতে মিসেস ক্লসও আছেন। ধর্মযাজক যখন এ কথা বলেন বিশ্ব্স না করে উপায় নেই। আর ৪০ বচর পর ১৮৮৯ সালে গুডি সান্তা ক্লস অন অ্যা স্লেই রাইড নামে একটি কবিতাতে মিসেস ক্লস তার স্বামীকে জিজ্ঞেস করে বললেন : ক্রিসমাসের সব গৌরব কেবল তুমিই কেন উপভোগ করবে?
সান্তা যে চিমনি দিয়ে নেমে আসেন এটাকে প্রথম আবিষ্কার করলেন? ওয়াশিংটন আরভিং।
রিপভ্যান উইঙ্কল এর লেখক আরভিং। তিনি ১৮১২ সালে নিজ কানে রাতের বেলা চিমনিতে খটর খটর শব্দ শুনেছেন, সান্তা নেমে আসছেন। আর এটা লিখেছেন সে বছর প্রকাশিত নিকারবোকার্স হিস্ট্রি অব নিউ ইয়র্ক নামের বইটিতে। তবে সে রাতটা যে ক্রিসমাসের আগের রাত ছিল তা জানা যায আরো ১১ বছর পর যখন ইট ওয়াজ দ্য নাইট বিফোর ক্রিশমা' কবিতাটি সামনে চলে এলো। এটা যে আসলে কে লিখেছেন নাকি সান্তা নিজেই লিখে পাঠিয়ে দিয়েছেন জানা যায়নি। বাইবেল পন্ডিত অধ্যাপক ক্লেমেন্ট ক্লার্ক সুর ১৮৪৪ সালে এটা লিখেছেন বলে দাবি করা হয়। কিন্তু অন্যরা বলেন এর আসল কবি হেনরি লিভিংস্টোন জুনিয়র; তার পান্ডুলিপি থেকে কেউ মেরে দিয়েছেন।
শুরুতে সান্তার গাড়ি টানতে ৮টি বল্গা হরিণ : ড্যাসার, ড্যান্সার, প্র্যান্সার, ভিক্সেন, কমেট, কিউপিড, ডোনার ও ব্লিৎজন। পরে যোগ দেয় রুডলফ। এটা ঠিক, প্রতিবার ৪০০০০০ টা খেলনা নিয়ে ছুটে যাওয়া খুব সহজ ব্যাপার নয়। সেক্ষেত্রে শিশুদের দাবি সান্তাকে আরো কটা বল্পা হরিণ দেওয়া হোকÑ তারা হিসেব করে দেখেছে এতোগুলো বাড়ি পৌছতে তার কমপক্ষে ৩৬০০০০টি জাদুকরী বল্গা হরিণ প্রয়োজন।
যে আমলে বাড়ি বাড়ি ফায়ার প্লেস আর চিমনি ছিল না তখন সান্তা কোন পথে বাড়িতে ঢুকতেন? চিমনির ইতিহাস প্রায় ৯০০ বছরের। আসলে সান্তা আগে এতো উপর বহন করতেন না। জানালা দিয়ে উঁকি মেরে মেরে ক্রিসমাস বলে চেচিয়ে ভেতরে কিছু টাকা ছুড়ে দিতেন।
সান্তা বছরের বাকি সময়টা কোথায় থাকেন এ নিয়ে একটি ঐক্যমত সৃষ্টি হয়েছিল যে উত্তর মেরুর আলাস্কাই তার বাড়ি। কিন্তু ইদানিং ফিনল্যান্ডের রোভানিমি শহর থেকে জোর দাবি উঠেছে, এখানে সান্তার বাড়ি। তারা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে: বিশ^াস না হয় সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘন্টা যে কোনো সময় এসে নিজ চোখে দেখে যান সান্তা এখানে আছেন কি নেই।
১৯৯৯ সালে সান্তা ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ৪,২৪,৬৬,৬৬৬টি বাড়িতে মাত্র ১২ ঘন্টায় তার ঝোলাভর্তি সব উপহার পৌছে দিয়েছেন।
উপহার দেওয়ার কথা ভালো শিশুদের। যে কোনোভাবেই হোক, সান্তা জেনে যান কোন শিশুটি ভালো, কোনটি মন্দ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সান্তা সবাইকে উপহার দেন।
যে ভারী বোঝা নিয়ে যে গতিতে সান্তাকে ছুটতে হয়, তাতে সান্তাকে ১৭ হাজার একক মধ্যাকর্ষণ শক্তির মোকাবেলা করে এগোতে হয়।
২০০৮ ও ২০০৯ এই দুই বছর কার্টুন নেটওয়ার্কে একটি প্রিয় স্লোগান ছিল, ইয়েস ভার্জিনিয়া দেয়ার ইজ এ সান্তা ক্লস।
মিরাকল অন দ্যা থার্ড স্ট্রিট সিনেমায় বলা হয়েছে, মিকি, সান্তা ডাজ শেভ (হ্যাঁ, মিকি, সান্তা দাড়ি কাটেন)।
সান্তা নেই তো চাকরি নেই
এই সংবাদটি দিয়েছে রয়টার ৫ ডিসেম্বর, ২০০২। ক্যানবেরার একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক তার ক্লাসের ছয় বছর বয়সী শিশুদের বলেছেন, আরে ধ্যাৎ বাজে কথা! সান্তা ক্লস বলে কিছু নেই। স্কুলটির নাম করওয়া পাবলিক স্কুল। তখনই শিশুদের মন খারাপ হয়ে গেল। ছুটি হতেই শুরু হলো কান্না। কাদঁতে কাঁদতে অভিভাবকদের বলল তাদের দুঃখের কাহিনি, তাহলে কে দেবে উপহার ?
অভিভাবকেরা নালিশ জানালেন শিক্ষকের বিরুদ্ধে, সবাই মিলে বিক্ষোভ করলেন। পরে স্কুলের হেডমাস্টার আয়ান পিন্টার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে স্কুলে আসতে নিষেধ করে দিলেন।
ঈশ্বরে অবিশ্বাসী হলে অসুবিধে নেই। কিন্তু সান্তায় অবিশ্বাসী হলে ছাড় নেই।
চিমনি বেয়ে নামলেই সান্তা নন
সান্তা ক্লস শীতের দেশের নিয়ম অনুযায়ী ঘরের চিমনি বেয়েই নেমে থাকেন। যে বাড়ির ছাদের ওপর চিমনির দেখা মেলে না, সেই বাড়িতে কি সান্তা যাবেন না? এখানেও ব্যতিক্রম আছে। বাড়িতে শিশু থাকলে শুভেচ্ছার পাহাড় নিয়ে সান্তা যাবেনই, কেমন করে তা তিনিই ভালো জানেন। সিডনির এলিস ¯িপ্রংয়ে গ্যাপভিউ নামের একটি হোটেলের চিমনিপথে নামছিলেন একজন কেউ।
সান্তাই হওয়ার কথা। কিন্তু চিমনির মাঝামাঝি অংশটা একটু চাপা হওয়ায় মাঝপথে এসে আটকে গেল তার নাদুসুদুস শরীর। সব চেষ্টা নামার কিংবা ওপর দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া যখন ব্যর্থ হলো, তখন কেবল, কান্না ও গোঙানির শব্দ বের হতে থাকল। ততক্ষণে ১০ ঘন্টা কেটে গেছে। হোটেল কর্মচারীদের একজন গোঙানির শব্দ শুনে আটকে পড়া সান্তাকে রক্ষা করতে দমকল বাহিনীতে খবর দেয়। দেড় ঘন্টা চেষ্টার পর চিমনির একাংশ কেটে যাকে বের করে আনা হয়, তিনি অন্য কেউ। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, তিনি পেশায় একজন সিধেল চোর। সান্তা চিমনি বেয়ে নামতে পারলে তিনি কেন পারবেন না। এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে চুরির পরিকল্পনা চুড়ান্ত করে ওপর থেকে নেমে আসতে গিয়ে এই বিপত্তি (সংবাদটি দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি, ২৯ ডিসেম্বর, ২০০৭)
সান্তার মেজাজ
সান্তা ক্লজের অসাধারণ সহনশীলতা। খুব সহজে চটেন না। বকাঝকা দেন না, চড় থাপড় দেওয়ার প্রশ্নই তো আসে না। কিন্তু জার্মানির ফুঙ্গস্তাদে ৩ ডিসেম্বর ২০০১ সান্তা ক্লস বিরক্ত হতে হতে এক পর্যায়ে নয় বছর বয়সী
একটি বালকের গালে কষে চড় মারলেন এবং তাকে ঝাড়– রাখার আলমারিতে অনেকক্ষণ আটকে রাখলেন। দুষ্ট ছেলের একটি দল অনেকক্ষণ ধরে তাকে টিটকারি মারছিল এবং একপর্যায়ে তার সান্তার পোশাক খুলে দেখতে চাইছিল আসলে তিনি কে। অধৈর্য হয়ে তিনি একসময় চড়টা মেরেই দিলেন।
অমনি তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। শিশুটির মা-বাবা এসে অভিযোগ দায়ের করলেন। পুলিশও হতভম্ব হয়ে পড়ল। কারণ সান্তার হাতে তখনো অনেক উপহার। ক্রিসমাস শপিং সেন্টারে তিনি শিশুদের উপহার বিলিয়ে যাচ্ছিলেন।
সাও পাওলোর এক রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যালের লালবাতি দেখে থেমে যাওয়া গাড়িগুলোতে সুবেশি সান্তা ক্যান্ডি বিতরণ করছিলেন, কিন্তু পাশের এক কার পার্কের দিকে হেঁটে আসা এক সুন্দরী মহিলাকে দেখে হঠাৎ কালো বেল্টের নিচ থেকে রিভলবার বের করে গুলি চালিয়ে বসেন (রয়টার্সের ২১ ডিসেম্বর, ২০০১)। এই গুলিটা দস্যুতার উদ্দেশ্যে নাকি অন্য কোনো কারণে তা স্পষ্ট নয়। সান্তা দ্রুত পোশাক খুলে ফেলে ক্যান্ডির বস্তা রেখে পালিয়ে যান।
পরের বছর ডিসেম্বরে সান্তা সানদিয়াগো শহরের একটি সুপার মার্কেটে ইউনিয়ন ব্যাংকে ঢুকে গুলি করার হুমকি দিয়ে ব্যাংকের সব টাকা একটি থলেতে ভরে পায়ে হেঁটে ব্যাংক থেকে বের হয়ে যান। তারপর ভো দৌড়। পালানোর পথে নিজের সান্তা পোশাক ঝেড়ে ফেলেন। সেদিন রাতেই পুলিশ টাকা পয়সাসহ তাকে গ্রেপ্তার করে।
সান্তা ক্লস শেভ করতেই পারেন না, এটা পৃথিবীর আর সব শিশুর মতো আমিও বিশ্বাস করি না।
সান্তা ক্লস সারা পৃথিবীতেই আছেন
অবশ্যই আছেন। কখনো নিজবেশে কখনো ছদ্মবেশে। কখনো নিজনামে কখনো সে দেশের শিশুদের প্রিয় নামে।
১. ইংরেজদের দেশে তিনি সান্তা ক্লস বা ফাদার ক্রিসমাস। তিনি ক্রিসমাস পাই খেতে পছন্দ করেন ক্রিসমাস ট্রির কাছে একটি তস্তরিতে পাই আর এক গ্লাস শেরি কিংবা হুইস্কি তার জন্য রাখা হয়। তার বল্গা হরিনের জন্য একটি গাজরও।
২. আমেরিকান শিশুদের কাছে তিনি ক্রিস ক্রিঙ্গল। জার্মান শব্দ খ্রিস্টকাইন্ড বা খ্রিষ্ট সন্তান থেকে ক্রিস ক্রিঙ্গল সৃষ্টি হয়েছে। তিনি পছন্দ করেন এক গ্লাস দুধ আর কুকি।
৩. স্পেনিশ শিশুদের কাছে তিনি পাপা নোয়েল। ভেনেজুয়েলা ও মেক্সিকোতে সান্তা ক্লস উপহার দেন, আরও একজন উপহার দেন এল লিনো দিয়োস বেবি জিসাস।
৪. জার্মানিতে আসেন উইরাখটস্মান মানে ক্রিসমাস ম্যান। তাদের উৎসব শুরু হয়ে আগেভাগে ৬ ডিসেম্বর সেইট নিকোলাস ডে থেকে। সান্তা শিশুদের পরিস্কার জুতোর ভেতর উপহারটা ভরে দেয়। সে জন্য জুতো পরিস্কারের ব্যাপারে শিশুরা খুব সচেতন। জার্মানির কোনো কোনো অ লে খ্রিসমাসের আগের দিন সান্তা উপহার দিয়ে যান। তারা উপহার খোলে সেদিনই, বড় দিনের জন্য অপেক্ষা করে না।
৫. ইতালিয়দের কাছে তিনি ব্যাবো নাতালে বা ফাদার ক্রিসমাস। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই শিশুরা তাদের উপহার সংগ্রহ করতে শুরু করে, খোলে ২৪ বা ২৫ ডিসেম্বর। উপহার যার হাত থেকেই আসুক তারা জানে উপহার পাঠিয়েছেন ব্যাবো নাতালে।
৬. পর্তুগিজ ভাষা যাদের যেমন ব্রাজিলের এক অংশে সান্তার নাম হচ্ছে পাপাই নোয়েল আর পর্তুগালে পাই নাটাল।
৭. রাশিয়াতে সান্তা হলেন ডেড মরোজ বা গ্র্যান্ডফাদার ফ্রস্ট। সেখানকার অর্থোডক্স খ্রিস্টানরা ৭ জানুয়ারি খ্রিসমাস পালন করে থাকেন, অন্যরা ২৫ ডিসেম্বর। তাদের সান্তা তাকে সাহায্য করার জন্য নাতনি ¯েœগুর্কাকে সাথে নিয়ে আসেন।
৮. তুর্কি সান্তা হচ্ছে নোয়েল বাবা। খুব জাকজমকের সাথে শিশুরা দু'দিন উৎসব করে, ২৫ ডিসেম্বর আর নিউ ইয়ার্স ইভে, মানে ৩১ ডিসেম্বর।
৯. পোলিশ সান্তা হচ্ছেন সুয়েটি মিকোলাজ, মানে সেইন্ট নিকোলাস।
১০. পোলিশ ভাষার অন্য অ লে সান্তা হচ্ছেন গুইয়াজদও, দ্য স্টারম্যান। সান্তা সর্বত্রই আছেন, ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রিয়জন হয়ে।
সান্তা কি আদৌ আছেন?
আট বছর বয়সের অনুসন্ধিৎসু বালিকা ভার্জিনিয়া ও' হ্যানলন নিউইয়র্ক সান এর সম্পাদককে সান্তার অস্তিত্বের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন করে একটি চিঠি লিখল। তার প্রশ্নের জবাব সম্পাদকীয় হিসেবে ২১ সেপ্টেম্বর ১৮৯৭ প্রকাশিত হলো। প্রবীণ সাংবাদিক ফ্রান্সিস চার্চের লেখা এই সম্পাদকীয় পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বাধিক পুনর্মুদ্রিত, আংশিক বা সম্পূর্ণ উদ্ধৃত বহু ভাষায় অনূদিত, অসংখ্য গ্রন্থ ও পোস্টারে ব্যবহৃত সম্পাদকীয়।
এটিই ভার্জিনিয়ার চিঠি:
প্রিয় সম্পাদক,
আমার বয়স আট, আমার ছোট বন্ধুদের কেউ কেউ বলে, সান্তা নেই। বাবা বলেছেন, দা সান পত্রিকা যদি বলে, তাহলে আছে। আমাকে সত্য কথাটা বলুন সান্তা কি আছেন? ভার্জিনিয়া ও হ্যানলন। ১১৫, ওয়েস্ট নাইনটি ফিফথ স্ট্রিট।
সেই ঐতিহাসিক সম্পাদকীয় থেকে খারিকটা উদ্ধৃত হচ্ছে:
ভার্জিনিয়া, তোমার ছোট বন্ধুরা ভুল বলেছে, সন্দেহের যুগের সন্দেহপরায়ণতা তাদের পেয়ে বসেছে। তারা যা কিছু দেখতে পায়, তার বাইরে কিছু বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে, তাদের ছোট্ট মনে বোধগম্য নয় এমন কিছুই্ থাকতে পারে না। হ্যাঁ, ভার্জিনিয়া, সান্তা ক্লস আছেন। সান্তা ক্লস যদি না থাকতেন, পৃথিবীটা কেমন নিরানন্দ হয়ে যেত। পৃথিবীতে কোনো ভার্জিনিয়া না থাকলে সবকিছু যেমন বিষণœ ও নিরানন্দ হয়ে পড়ত, সান্তার ব্যাপারেও তাই। কেউ কেউ সান্তা ক্লজে বিশ্বাস করে না ! তুমিও তো পরিদের বিশ্বাস নাও করতে পার। তুমিও তোমার বাবাকে বলতে পার লোক ভাড়া করে তাদের দায়িত্ব দেবে ক্রিসমাস ইভে চিমনির দিকে লক্ষ রেখে সান্তা ক্লসকে ধরে ফেলারÑ যদি তারাও দেখে যে সান্তা চিমনি দিয়ে নেমে আসছেন না, তাহলে কী প্রমাণিত হবে কেউ যেহেতু সান্তাকে দেখেনি অতএব সান্তা নেই, এটা তার কোনো প্রমাণ নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে সত্যিকার জিনিসগুলো শিশু কিংবা বয়স্ক মানুষÑ কেউ দেখে না। তুমি কি তোমাদের বাড়ির লনে পরিদের নাচতে দেখেছ? হ্যাঁ, ভার্জিনিয়া, সান্তা ক্লস আছেন।
ভার্জিনিয়া কে?
ভার্জিনিয়া ও' হ্যানলন ডগলাসের জন্ম ২০ জুলাই, ১৮৮৯ সালে, নিউইয়র্কের ম্যানহাইটানে। ১৯১০ সালে ভার্জিনিয়ার বিয়ে হয়। বিয়েটা তার সুখের হয়নি। লরা নামের একটি কন্যা সন্তান নিয়ে তাকে একাকী জীবন যাপন করতে হয়। ভার্জিনিয়া ১৯১০ সালে স্নাতক ১৯১২ সালে স্নাতকোত্তর, সবশেষে ফোর্ডহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেন। বিখ্যাত এই চিঠির জন্য ১৯৭১ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিদিনই পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্ত থেকে বিভিন্ন বয়সী মানুষের চিঠি পেয়েছেন। ইয়েস, ভার্জিনিয়া দেয়ার ইজ এ সান্তা ক্লস নামে অনেক বইপত্র লিখিত হয়েছে, সিনেমা নাটক ও টিভি সিরিয়াল হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।
ভার্জিনিয়া ও' হ্যানলন
সংযোজন : সবাই জানে সান্তা আছে, তারপরও কবিতার শিরোনাম হয় 'দ্য ডেথ অফ সান্তা ক্লোজ' চার্লস ওয়েবের সেই কবিতা আমেরিকার হাইস্কুলে পড়ানো হয়।
The Death of Santa Claus
He's had the chest pains for weeks,
but doctors din't make house
calls to the North Pole
he's let his Blue Crose lapse,
blood tests make him faint,
hospital gown always flap
open, waiting rooms upset
his stomach, and it's only
indigestion anyway, he thinks,
until, feeding the reindeer,
he feels if a monster fist
has grabbed his heart and won't
stop squeezing. He can't
breathe, and the beautiful while
world he loves goes black,
and he drops on jelly belly
in the snow and Mrs Claus
tears out of the toy factory
waiting, and the elves wring
their little hands, and Rudolph's
nose blinks loke a sad ambulance
light, and in a tract house
in Houston, Texas, I'm 8,
telling my mom that stupid
kids at school say Santa's a big
fake, and she sits with me
on our purple-flowered couch,
and takes my hand, tears
in her throat, the terrible
news rising in her eyes.
যে যাই বলুক, আমরা সান্তাবিশ্বাসী মানুষ। আমরাও তাকে বলি: মেরি ক্রিশমাস।