ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করবে ট্রাম্প প্রশাসন
এবার ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভকারীদের ভিসা বাতিল করবে ট্রাম্প প্রশাসন। স্থানীয় সময় বুধবার (২৯ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত এক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এই আদেশে ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলা এবং ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিদেশি কলেজ শিক্ষার্থী এবং অন্যান্যদের বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
আদেশের একটি ফ্যাক্ট শিটে বলা হয়েছে, 'তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে' ট্রাম্প বিচার বিভাগকে 'মার্কিন ইহুদিদের ওপর সন্ত্রাসী হুমকি, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিকভাবে বিচার করার' নির্দেশ দেবেন।
আরও বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে আক্রমণের পর থেকে 'আমাদের ক্যাম্পাস এবং সড়কে ইহুদিবিদ্বেষ বিস্ফোরণ' মোকাবিলায় সব ফেডারেল সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প ফ্যাক্ট শিটে বলেছেন, 'জিহাদিদের পক্ষে বিক্ষোভে যোগ দেওয়া সব আবাসিক বিদেশিদের জানিয়ে দিচ্ছি: ২০২৫ সালে আমরা আপনাদের খুঁজে বের করব এবং আমরা আপনাদের ফেরত পাঠাবো।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি দ্রুতই কলেজ ক্যাম্পাসে হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল সব ছাত্রের ভিসা বাতিল করব।'
তবে দেশটির মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং আইন বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছেন, 'নতুন পদক্ষেপটি সংবিধানের বাক স্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘন করবে এবং সম্ভবত আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।'
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাইট ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট ইনস্টিটিউটের সিনিয়র স্টাফ অ্যাটর্নি ক্যারি ডিসেল বলেন, 'দ্য ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা প্রত্যেকের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে, এমনকি আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত বিদেশি নাগরিকদেরও। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে অনাগরিকদের বহিষ্কার করাটা হবে একটি অসাংবিধানিক কাজ।'
মুসলিম অ্যাডভোকেসি গ্রুপ দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস বলেছে, 'ট্রাম্প যদি এই আদেশ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন, তাহলে তারা আদালতে চ্যালেঞ্জ করার বিষয়টি বিবেচনা করবে।'
হামাসের হামলা এবং পরবর্তী সময়ে গাজার ফিলিস্তিনি অবরুদ্ধ উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলার জেরে, টানা কয়েক মাস মার্কিন কলেজ ক্যাম্পাসগুলো ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল।
নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, দেশটিতে ইহুদি, মুসলিম, আরব এবং মধ্য প্রাচ্যের অন্যান্য অধিবাসীদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক অপরাধ এবং হামলার ঘটনা বেড়েছে।
ফ্যাক্ট শিট অনুসারে, এই আদেশে সব এজেন্সি এবং বিভাগের নেতাদের ৬০ দিনের মধ্যে হোয়াইট হাউসকে ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলায় ব্যবহার করা যেতে পারে এমন সমস্ত অপরাধের নথি এবং বেসামরিক কর্তৃপক্ষের সুপারিশ সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।
এতে কে-১২ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত সব আদালতের মামলা এবং ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের একটি তালিকা করা এবং এসব ঘটনা বিশ্লেষণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এগুলো সম্ভবত 'বিদেশি শিক্ষার্থী এবং কর্মীদের' অপসারণের কাজে ব্যবহার করা হতে পারে।
এদিকে, ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করা অনেকেই হামাসকে সমর্থন করা বা ইহুদিবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
তারা বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় দেশটির ৪৭ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
আরব আমেরিকান ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মায়া বেরি বলেন, 'কথিত ইহুদিবিদ্বেষের সঙ্গে ইসরায়েলের সমালোচনাকে এক পাল্লায় বিচার করতে দেখে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।'
বেরি বলেন, 'এই আদেশ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বাকস্বাধীনতার ওপর ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলবে।'