শাসকের হাতে 'নিহত' ভাই ফিরে এলো ৪০ বছর পর!
৪০ বছর আগে খুন হয়ে যাওয়া শিশু ভাই আহমেদের ছবি গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে সময়টাকে চিহ্নিত করেছিলেন হায়দার আল মুসায়ি। ঘূর্ণাক্ষরে ভাবতে পারেননি, সেই ভাই এর কিছুদিন পরই সশরীরে হাজির হবেন তার সামনে। ঘটনাটি ইরাকের বাগদাদের।
ফেসবুকে পোস্ট করা ছবিটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে, ইরাকি বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছিল। আর এভাবেই এক নারী খেয়াল করেন, এটি তার দত্তক ভাইয়ের ছোটবেলার ছবি।
১৯৮০ সালে এই দুই ভাইয়ের বাবাকে দেশটির তৎকালীন একনায়ক সাদ্দাম হোসেনের প্রশাসন নিষিদ্ধ ঘোষিত শিয়া দাওয়া পার্টির সদস্য সন্দেহে কারাবন্দি করে।
দুই ভাই তখন শিশু। তাদেরকেও ধরে নিয়ে, তাদের বাবা-মায়ের পাশে আলাদা গরাদে বন্দি রাখা হয়।
'৪০ বছর আগের এই দিনে আমি কারাবন্দি ছিলাম,' ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন হায়দার। "কেউ চাইলে জিজ্ঞেস করতে পারেন, 'বয়স কত হলো তোমার?' এখন আমার ৪৪ বছর বয়স। ১৯৮০ সালে ছিলাম ৪ বছরের শিশু; তবু সেইসব ঘটনা স্পষ্ট মনে করতে পারি।"
'আপনার বাবা যদি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার কী দোষ?', ওই পোস্টে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
আরও লিখেন, 'সময় সুন্দর এখন; কেননা, বাথবাদীদের (সাদ্দামের রাজনৈতিক সংগঠন) দিন নেই আর। কিন্তু আমার পুরো পরিবারকে ওরা মেরে ফেলেছিল; শুধু আমি কোনোমতে কারাগার থেকে পালিয়ে বাঁচতে পেরেছি।'
নিজের বোরখার নিচে লুকিয়ে হায়দারকে কারাগার থেকে বের করে এনেছিলেন তার নানী; কিন্তু আরেক ভাই আহমেদ রয়ে গিয়েছিলেন ওখানেই।
এতদিন ধরে পরিবারটি বিশ্বাস করে আসছিল, শাসকগোষ্ঠীর হাতে বাবা-মায়ের পাশাপাশি আহমেদেরও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
তবে সত্য হলো, এর বছর কয়েক পর একটা পুলিশ স্টেশনের পাশে খুঁজে পেয়ে তাকে লালন-পালন করেন স্থানীয় পুলিশের এক বড়কর্তা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'আহমেদের শিশুকালের ছবিটির লাখ-লাখ শেয়ার হয়। আমি কোনোদিনও ভাবতেই পারিনি, ওর দেখা পাব আবার,' স্থানীয় এক পত্রিকায় বলেন হায়দার।
অবশেষে গত শনিবার এক আবেগঘন পুনর্মিলনী ঘটে ওই দুই ভাইয়ের।
এর পরপরই হায়দার বলেন, 'এই কাহিনি শুধু দুটি মানুষের সম্পর্কেরই নয়, একটি জাতির বেদনারও সারাংশ। আমার ভাই একজন জীবন্ত শহিদ।'
'স্রষ্টা আমাদের চেয়েছিলেন। শহিদদের রক্ত বৃথা যাবে না। আহমেদের ঘটনাটি একটি পাবলিক ইস্যুতে পরিণত হবে। এ দেশে হাজারও আহমেদ রয়েছে!' বলেন তিনি।
এদিকে, ইরাকি হিউম্যান রাইটস কমিশনের সদস্য আলী আল বয়াতি জানান, 'বিচারের অপেক্ষায়' থাকলেও গণমাধ্যম ও বিশ্ব অন্ধ সেজে রয়েছে- এমন হাজারও ঘটনার একটি উদাহরণ এই দুই ভাইয়ের কাহিনি।
'এ এক বেদনাবিধুর কাহিনি, যেটি বিশেষত নির্দিষ্ট সমাজের টার্গেটকৃত ইরাকিদের ওপর প্রাক্তন বাথ শাসকগোষ্ঠীর চালানো ভয়ানক ও ঘৃণ্য অপরাধগুলোর সাক্ষ্য দেয়,' বলেন বয়াতি।
আরও বলেন, ওদের 'সব অপরাধই মানবাধিকার বিরোধী। আর এই (দুই ভাইয়ের ঘটনা) অপরাধের মহাসমুদ্রে এক ফোঁটা পানির মতো।'
- সূত্র: দ্য ন্যাশনাল