স্নো লেপার্ডের ছবি তুলতে হিমালয়ের পথে ১৬৫ কিলোমিটার পাড়ি দিলেন মার্কিন আলোকচিত্রী!
স্নো লেপার্ড বিশ্বের সবচেয়ে বিরল প্রাণীগুলোর মধ্যে অন্যতম। মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চলে এদের আদি নিবাস। তুষারঢাকা পর্বতমালার শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্য্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে এই প্রাণীটির দেখা পাওয়া যেকোনো ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফারদের জন্য অত্যন্ত সৌভাগ্যের ব্যাপার। খানিকটা ক্যামোফ্লেজের বেশে থাকায় এবং আড়ালে বসবাস করায় সচরাচর স্নো লেপার্ডের দেখা পাওয়া যায় না।
এছাড়া, সারা বিশ্বে স্নো লেপার্ডের সংখ্যা ১০ হাজারেরও কম থাকায় আইইউসিএন এই প্রাণীটিকে 'ঝুকির মুখে রয়েছে' উল্লেখ করে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৪০ সালের মধ্যে স্নো লেপার্ডের সংখ্যা আরও ১০ শতাংশ হ্রাস পাবে। সুতরাং, বোঝাই যাচ্ছে বরফে ঢাকা পর্বতের কোলে এই প্রাণীটির দেখা পাওয়া কতটা মুশকিল! আর সে কারণেই এটিকে প্রায়ই 'পাহাড়ের ভূত' বলে আখ্যা দেওয়া হয়!
যদিও তিব্বতীয় মালভূমি এবং ভারত, নেপাল ও ভুটানের হিমালয় পর্বতের সুউচ্চ স্থানগুলোতে স্নো লেপার্ডরা বসবাস করে; কিন্তু হিমালয়ে গিয়েই তাদের দেখা পাওয়াটা দুর্লভ, আর ক্যামেরার লেন্সে তাদের ছবি ধারণ করা আরও কঠিন।
কিন্তু বণ্যপ্রাণীর ছবি তোলা যাদের নেশা, তেমনই গুটিকয়েক ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার ও ট্রেকার বিগত বছরগুলোতে এই প্রাণীটির ছবি তুলতে পেরেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আলোকচিত্রী কিটিয়া পাওলোস্কিও তেমনই একজন দুঃসাহসী আলোকচিত্রী। নেপালের হিমালয় পর্বতে স্নো লেপার্ডের ছবি তোলার জন্য এই নারী ট্রেকিং করেছেন ১৬৫ কিলোমিটার পথ!
সাদা বরফে ঢাকা পর্বতের কোলে অনেকটা রাজার মতো আসন নিয়ে থাকা স্নো লেপার্ডের ছবি তোলার পর কয়েকটি ছবি নিজের ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছেন কিটিয়া। ইনস্টাগ্রামে পাঁচটি পোস্ট করেছেন তিনি, এর মধ্যে প্রথম পোস্টে তিনি জানিয়েছেন কিভাবে স্নো লেপার্ডের দেখা পেতে ১৬৫ কিলোমিটার পথ ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে।
উত্তর-মধ্য নেপালের অন্নপূর্ণা সংরক্ষিত এলাকার প্রায় ৭,৬২৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় তারা এই বিরল প্রাণীটির খোঁজ শুরু করেন। ইনস্টাগ্রামে ওই দীর্ঘ পোস্টে কিটিয়া পাওলোস্কি তার পুরো যাত্রার বর্ণনা দিয়েছেন। সাগরমাতা জাতীয় উদ্যান থেকে বেশ কয়েকটি গ্রাম পেরিয়ে কালী গন্ডকী নদী, তামাকোশী নদী উপত্যকা পার হয়ে তবেই লক্ষ্যে পৌঁছেছিলেন পাওলোস্কি এবং তাঁর সঙ্গীরা। পাওলোস্কি জানান, যাত্রাপথে তারা ব্যবহার করেছিলেন একটি ছোট্ট বিমান, যা প্রায় একটি স্কুল বাসের সমান।
ইনস্টাগ্রাম পোস্টে কিটিয়া লিখেছেন, 'গোরখ শেপের বাইরে এক হিমশীতল সকালে, আমি আমার নিক্কর ৫০০ মিমি এফ/৪ লেন্সটিতে চোখ রেখে বসে ছিলাম। একটা বিশাল খাদের পরেই দেখা গেল খুম্বু উপত্যকাটি। ক্যামেরার টেলিফটো লেন্সের মধ্যে দিয়ে আমি পুমোরি পাহাড়ের ছায়ায় কিছু একটা লক্ষ্য করলাম। প্রথমে, ভেবেছিলাম ওটি একটি পাথর, কিন্তু না, ওটা আমি যা খুঁজছিলাম ঠিক তাই।'
পাওলোস্কির পোস্ট করা প্রথম ছবিতে বহুদূর থেকে দেখা যাচ্ছে সাদা চিতাবাঘটিকে। দুটি তুষারাবৃত পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সে হেঁটে চলেছে। পাওলোস্কির দ্বিতীয় পোস্টে দেখা যায় একটি খাদের ধারে পাথরের উপর বসে রয়েছে স্নো লেপার্ডটি।
কিটিয়া পাওলোস্কি আরও লিখেছেন, "স্নো লেপার্ডরা ভোর এবং সন্ধ্যার দিকে সবচেয়ে সক্রিয় থাকে৷ ভোর ৪টার দিকে আমি বুট পরে রওনা দিলাম। রাতের দিকে একটা শীতল ভুতুড়ে সৌন্দর্য ছিল। ২৫ পাউন্ড ক্যামেরা গিয়ার নিয়ে, আমি গোরাক শেপের উত্তর-পূর্ব দিকে চলে গেলাম এবং একটি জমে যাওয়া হ্রদ পেরিয়ে গেলাম। তুষারময় পাহাড়ের ঢালগুলো এমনভাবে চিকচিক করছিল যেন কেউ হীরা বসিয়ে দিয়েছে ওখানে।"
তার দ্বিতীয় শেষ পোস্টটিতে দেখা গেছে স্নো লেপার্ডের আরেকটি দুর্দান্ত ছবি। বেশ দূর থেকে তোলা এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যপট পেছনে রেখে হাঁটছে স্নো লেপার্ডটি।
কিটিয়া পাওলোস্কির ভাষ্যে, "এই ছবিগুলো তার জীবনে তোলা সবচেয়ে কঠিন ছবি। আর এই স্নো লেপার্ডের ছবিগুলোই তার জীবনের সেরা পুরস্কার।"
সূত্র: টাইমস নাও নিউজ