মানসিক চাপ ঘ্রাণ শুঁকে বুঝতে পারে কুকুর, জানালো নতুন গবেষণা
পোষা প্রাণীদের মধ্যে কুকুরের বুদ্ধিমত্তা ও প্রভুভক্তির কাহিনি প্রচুর। সারমেয়দের রয়েছে মানুষের ইশারা, আকারইঙ্গিত বোঝার বিস্ময়কর ক্ষমতা। তাদের ঘাণশক্তিও প্রবল, যা দিয়ে মানবদেহের কোভিড-১৯ থেকে শুরু করে ফুসফুসের ক্যান্সারের মতোন বিভিন্ন রোগ শনাক্ত করতে পারে। তবে গন্ধের মাধ্যমে প্রাণীটি মানুষের মানসিক পরিস্থিতি বুঝতে পারে কিনা– সে সম্পর্কে খুব কমই গবেষণা হয়েছে। এ নিয়ে নতুন এক গবেষণা প্রমাণ করেছে যে মানুষের মানসিক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠাও ঘ্রাণশক্তি দিয়ে বুঝতে পারে কুকুর। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে প্লস ওয়ান জার্নালে। বিগ থিঙ্ক অবলম্বনে।
উৎকণ্ঠায় ভুগলে মানবদেহে হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্রে কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। এতে আমাদের শরীরের গন্ধেও কিছুটা পরিবর্তন আসে। কুকুর সেটি শনাক্ত করতে পারে কিনা তা পরীক্ষা করেন বিজ্ঞানী ক্লারা জনসন ও তার সহকর্মীরা।
এজন্য প্রথমেই একই ব্যক্তির উদ্বিগ্ন হওয়ার আগে ও পরের গন্ধের নমুনা সংগ্রহ করেন তারা। আর গবেষণায় ব্যবহৃত কুকুরগুলোকে বায়োমেডিকেল ডিটেকশনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
যেসব মানব স্বেচ্ছাসেবী এ গবেষণায় অংশ নেন, তাদের মানসিক চাপ সার্বক্ষণিক মনিটর করতে হৃদযন্ত্রের গতি এবং রক্তচাপ মাপতে তাদের দেহে কিছু সেন্সর বসানো হয়। এরপর তাদের মানসিক চাপ সৃষ্টি করবে এমন কিছু গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে দেওয়া হয়। কাজটি করার আগে ও শেষে তারা কেমন বোধ করেছিলেন– সেটাও তাদের জানাতে হয় গবেষকদের।
কাজ শুরুর আগে নিজেদের ঘাড়ের পিছনের অংশ একটি মেডিকেল গজ কাপড়ে মুছে দেন অংশগ্রহণকারীরা। গন্ধের এই নমুনা একটি জীবাণুমুক্ত কাঁচের পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়। এরপর তারা পাত্রটিতে নিজেদের শ্বাসের নমুনাও দেন।
কাজ শেষে আরো দুবার তাদের ঘাম ও শ্বাসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এসময় তারা কতোটা উদ্বেগে ছিলেন, সেটারও রেটিং করেন।
গাণিতিক সমস্যা সমাধানের আগে (উদ্বেগমুক্ত) ও পরের (উৎকণ্ঠিত অবস্থায়) নমুনা সংগহের ব্যবধান ছিল মাত্র ৪ মিনিট। সময়টা যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত রাখা হয়– যাতে এই সময়টা মানসিক চাপ ছাড়া অংশগ্রহণকারীরা অন্য কোনো ধরনের মানসিক অবস্থার শিকার না হন।
শুধুমাত্র যেসব ব্যক্তি গাণিতিক সমস্যা সমাধানটি জটিল মনে করেছেন বলে জানান, এবং এটি করার সময় যাদের হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ বেড়ে যায়, শুধুমাত্র তাদের গন্ধের নমুনাই কুকুরগুলোকে শুঁকতে দেওয়া হয়। এভাবে ৩৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
কোনো পার্থক্য শনাক্ত করতে পারলে সেটির সামনে কয়েক সেকেন্ড নিশ্চল দাঁড়িয়ে সংকেত দেবে এভাবেই দেওয়া হয় প্রশিক্ষণ। এই আচরণকে গবেষকরা 'এলার্ট বিহেভিয়ার' নাম দেন।
এরপর গাণিতিক সমস্যা সমাধানের আগে ও পরে নেওয়া নমুনাগুলো কুকুরগুলোকে শুঁকোতে দেওয়া হয়। প্রথমে কোনো ব্যক্তির উৎকণ্ঠিত অবস্থার ঘাম ও শ্বাসের নমুনা ১০ বার শোঁকানোর পর- হঠাৎ করেই সেখানে যুক্ত করা হয় উদ্বেগমুক্ত অবস্থার নমুনা। দুটির মধ্যে পার্থক্য এলার্ট বিহেভিয়ারের মাধ্যমে জানায় কুকুরগুলো। একইভাবে গন্ধের কোন নমুনা উদ্বিগ্ন অবস্থার কুকুরগুলো তা সফলভাবে শনাক্তও করে।
প্রায় ৭২০ বার পরীক্ষায় ৭২ শতাংশ ক্ষেত্রে তারা সফলভাবে উদ্বিগ্ন অবস্থার গন্ধ আলাদাভাবে শনাক্ত করেছে।
এতে প্রমাণিত হয়, মানুষের সংস্পর্শে থাকার দীর্ঘদিনের জেনেটিক অভিজ্ঞতা থেকে কুকুরেরা ঘ্রাণ শুঁকে মানুষের মানসিক অবস্থা সম্পর্কেও আন্দাজ করতে পারে।