ব্যবহারকারীদের মধ্যে আসল বই শেয়ারে জেড-পয়েন্টের পরিকল্পনা জেড-লাইব্রেরির
জেড-লাইব্রেরি এমনভাবে তাদের বিরুদ্ধে অপরাধের তদন্ত এড়িয়ে যাচ্ছে যেন কিছুই ঘটেনি। ওয়েবসাইটটি সফলভাবে ফান্ডরেইজিং করার পর তাদের শ্যাডো লাইব্রেরিতে বই বাড়ানোর সংখ্যা অব্যাহত রেখেছে। এবং এখন, তাদের সেবা বাড়ানোর পরিকল্পনা হিসেবে আসল বই শেয়ার করার পদ্ধতি প্রয়োগ করার পরিকল্পনা করছে। জেড-লাইব্রেরি এমন একটি বই 'শেয়ারিং' পদ্ধতি প্রণয়নের পরিকল্পনা করছে, যেখান থেকে এর লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারীরা নির্ধারিত 'জেড-পয়েন্ট' থেকে পেপারব্যাক বই সংগ্রহ করতে পারবে।
জেড-লাইব্রেরির আর্কাইভে এখন ১২ মিলিয়নেরও বেশি বই রয়েছে, যেটি এই ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মকে পরিণত করেছে ইন্টারনেটে পাইরেটেড বইয়ের অন্যতম বৃহত্তম ভাণ্ডার হিসাবে। ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ নিয়মিত পাঠক বিনামূল্যে তাদের প্রয়োজনীয় বই খুঁজে নেন।
ওয়েবসাইটটির এই অগ্রগতি গত বছরের শেষের দিকে সংক্ষিপ্তভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। মার্কিন সরকার সাইটটির প্রধান ডোমেইন নামগুলো বাজেয়াপ্ত করে। একইসাথে এই সাইটের সাথে জড়িত দুই অভিযুক্ত রুশ অপারেটরকেও গ্রেপ্তার করা হয়। জেড-লাইব্রেরি সম্পর্কিত অপরাধ তদন্তের মূল কেন্দ্রে এখন এই দুইজন।
সাধারণত এই মাত্রার একটি ক্র্যাকডাউনে কোনো পাইরেট ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যায়। তবে জেড-লাইব্রেরি হাঁটছে অন্য দিকে। সাইটটিতে আরও 'সেন্সরশিপ-প্রতিরোধী' সেটআপ যুক্ত করা হয়েছে এবং সম্প্রতি হাজার হাজার ডলার অনুদান সংগ্রহ করেছে।
পরবর্তী লক্ষ্য কাগজের বই
এই সপ্তাহে পোস্ট করা এক বার্তায় জেড-লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ ব্যবহারকারীদেকে তাদের উদার অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানায়। তারা উল্লেখ করে যে ওয়েবসাইটটির অব্যাহত উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করেছে তারা। স্পষ্টতই, এই উন্নয়নের পরিকল্পনার মধ্যে অফলাইন শেয়ারিংও রয়েছে।
লক্ষ লক্ষ ফ্রি ই-বুক অফার করার পাশাপাশি জেড-লাইব্রেরি এবার এমন এক সেবা নিয়ে কাজ করছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা একে অপরের সাথে আসল বই শেয়ার করতে পারবে।
তারা পোস্টে লেখেন, "আপনার কাছে যে বইগুলি রয়েছে, সেগুলোর ওপর ধুলো জমতে দেওয়া উচিৎ নয়। এর পরিবর্তে, তারা নতুন পাঠকদের হাতে দ্বিতীয় জীবন পেতে পারে। সাহিত্যের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য এবং বইয়ে থাকা জ্ঞান ও ধারণাগুলোকে আরও বেশি মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করতে বইগুলো শেয়ার করুন।"
জেড-পয়েন্ট
একটি লাইব্রেরির মাধ্যমে বই ধার দেওয়ার ধারণা কয়েকশ বছর পুরানো। কিন্তু জেড-লাইব্রেরির লক্ষ্য এর পরিমাণ ও পদ্ধতি উভয়ই আরও উন্নত করা। তাদের ধারণার মূলে রয়েছে, এমন কিছু ডেডিকেটেড পিক-আপ পয়েন্ট তৈরি করা, যা সারাবিশ্বজুড়েই থাকবে।
"আমরা বিশ্বজুড়ে 'জেড-পয়েন্ট' তৈরি করতে চাই, যেগুলো বই সংগ্রহ করার এবং সংরক্ষণ করার একটি পয়েন্ট হবে। যারা তাদের বই শেয়ার করবে এবং বইগুলো যাদের প্রয়োজন, তাদের মধ্যে সংযোগ করবে এই পয়েন্টগুলো।
"যেসব বইয়ের মালিক অন্য ব্যবহারকারীদের সাথে তাদের বই শেয়ার করতে ইচ্ছুক, তারা তাদের অঞ্চলের নিকটতম জেড-লাইব্রেরিতে বই পাঠাতে পারেন। এবং যাদের এই পয়েন্টগুলোতে সংরক্ষিত বই দরকার তারা এই জেড-পয়েন্ট থেকে বই সংরক্ষণ করতে পারবেন।"
ঐতিহ্যগত লাইব্রেরির প্রতিযোগী হিসেবে পার্সন-টু-পার্সন লাইব্রেরির মতো শোনাচ্ছে একে। তবে মজার বিষয় হলো, জেড-লাইব্রেরি বিশ্বাস করে যে বিদ্যমান লাইব্রেরিগুলোরও জেড-পয়েন্ট হওয়ার জন্য উপযুক্ত। লোকেরা তাদের নিজের বাড়িকেও একটি জেড-পয়েন্ট হিসেবে চালাতে পারে, যদি তারা স্বেচ্ছাসেবী হতে চায়।
একটি বই ধারের জায়গা চালানোর জন্য বেশ কিছু জায়গা এবং সাংগঠনিক প্রচেষ্টার প্রয়োজন, তাই তৃতীয় পক্ষের লজেডস্টিক সার্ভিসকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত জেড-লাইব্রেরি।
ব্যবহারকারীদের জন্য ব্যবহারকারীদের সেবা
জেড-পয়েন্ট ধারণাটি এখনও পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে। জেড-লাইব্রেরি অনুসারে, ব্যবহারকারীরা ডাকের মাধ্যমে বই পাঠাতে পারবেন। এরপর বইটির কাজ শেষ হলে ঐ বইটিই অন্যদের কাছে পাঠানো হবে ডাক ডাকযোগে।
এই প্রস্তাব প্রথাগত পাইরেটেড ইবুক লাইব্রেরির ধারণা থেকে বেশ ভিন্ন। এভাবে বই ধার দেওয়াকে কপিরাইট লঙ্ঘন হিসাবে দেখা হয় না, যদি না বইটিকে অনুলিপি করা হয়।
এই পরিকল্পনাটি আদৌ ফলপ্রসূ হবে কিনা তা এখনও পরীক্কাহ করে দেখা হয়নি। তবে এখনো পর্যন্ত ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীদের যে সাড়া পাওয়া গিয়েছে, তা ইতিবাচক বলেই মনে হচ্ছে। ঘোষণাটি প্রকাশের পরপরই অনেকেই এ কাজে উৎসাহ প্রকাশ করেছেন।
এবং এই প্রতিক্রিয়াগুলো থেকেই দেখা যায়, জেড-লাইব্রেরির বৈশ্বিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কত বিশাল। ভিয়েতনাম, ব্রাজেডল, পর্তুগাল, কলম্বিয়া, ইরান, উজবেকিস্তান, নাইজেরিয়া, স্পেন, ভারত, আর্জেন্টিনা, মিশর, ফ্রান্স, ইথিওপিয়া, চীন এবং ঘানাসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে পাওয়া প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয় এই দেশগুলো জেড-পয়েন্ট স্থাপনের জন্য আদর্শ।
প্রশ্ন এবং পরামর্শ
জেড-লাইব্রেরির এই ঘোষণার পরপরই আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, এর আইনগত সমস্যা কী কী এবং এগুলো পরিচালনার খরচ বহন করবে কে?
একজন মন্তব্যকারী লিখেছেন, "ধারণাটি ভালোই কিন্তু আপনি কীভাবে এর খরচ পরিচালনা করবেন? তাছাড়া করে ওয়েবসাইটটির বিরুদ্ধে যখন আইনি তদন্ত চলমান, তখন আপনি কীভাবে জেড-পয়েন্ট ব্যবহার করে আপনার পরিচয় লুকিয়ে রাখবেন?
অন্যান্য মন্তব্যকারী উল্লেখ করেছেন, অনেক দেশের লোকেরা ইতিমধ্যে স্থানীয়দের কাছে বই দান করার জন্য ফ্রি লাইব্রেরি তৈরি করেছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটিকে 'লিটল ফ্রি লাইব্রেরি' নামের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সংগঠিত এবং প্রচার করা হচ্ছে।
তবে জেড-লাইব্রেরি দল জানায়, তারা যে কোন মন্তব্য এবং পরামর্শকে স্বাগত জানায়। আপাতত এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই, তবে এর মাধ্যমে এই পরিকল্পনার একটি শুরু হয়েছে।
সূত্র: টরেন্টফ্রিক