২৭ বার কলেজের প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশ নিয়েও ফেল করলেন এই মিলিয়নিয়ার!
লিয়াং শি চীনের একজন স্বপ্রতিষ্ঠিত মিলিয়নিয়ার। ৫৬ বছর বয়সী শি'র কাছে টাকাপয়সার খুব একটা কমতি না থাকলেও, তিনি কখনও কলেজের গণ্ডিতে পা রাখতে পারেননি। কলেজের শিক্ষা গ্রহণ করতে না পারার আক্ষেপ থেকেই গুণে গুণে ২৭ বার কলেজের প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন শি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, ২৭তম বারেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
সোমবার এএফপি সূত্রে জানা যায়, এবছর ২৭তম বারের মতো চীনের কলেজ প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন শি। চীনে এ পরীক্ষাটি তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ এবং কঠিনও বটে। বিষয়টা এমন না যে লিয়াং শির কলেজে যাওয়া অত্যাবশ্যক। এই সাবেক কারখানা কর্মীর এখন নিজেরই নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসা রয়েছে। কিন্তু কলেজে পড়াশোনা করা এই মিলিয়নিয়ারের একটি বড় স্বপ্ন ছিল।
"এটা খুবই পীড়াদায়ক যে আমি কলেজের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারিনি। আমি সত্যিই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাই এবং একজন বুদ্ধিজীবী হয়ে উঠতে চাই", এএফপিকে বলেন লিয়াং।
আর নিজের স্বপ্ন পূরণ করতেই কখনো হাল ছাড়েননি লিয়াং। চীনে প্রতিবছরই কলেজের প্রবেশিকা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, যেটি 'গাও কাও' নামে পরিচিত। এই পরীক্ষার প্রক্রিয়া এতটাই কঠিন এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ যে প্রায়ই পরীক্ষার সময়ে স্কুলগুলোতে এবং রাস্তাঘাটে পুলিশ মোতায়েন করতে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য।
লিয়াং ১৯৮৩ সাল থেকে এই পরীক্ষা দেওয়া শুরু করেছেন। তখন তার বয়স ছিল ১৬ বছর। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি এই পরীক্ষা দিয়েছেন। এএফপি বলছে, ওই সময় চীনা সরকারের নিয়ম ছিল ২৫ বছর বয়সের উর্ধ্বে কেউ এই পরীক্ষা দিতে পারবে না। তাই প্রায় এক দশক এই পরীক্ষা দেওয়া স্থগিত রেখেছিলেন লিয়াং। ২০০১ সালে এই নিয়ম তুলে দেওয়ার পর তিনি আবারও পরীক্ষা দেওয়া শুরু করেন।
প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা ১৩ মিলিয়ন হাইস্কুল সিনিয়রদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য পরীক্ষার আগের কয়েক মাস লিয়াং প্রায় 'সাধু-সন্ন্যাসীর জীবন' গ্রহণ করেছিলেন বলে এএফপিকে জানান। এসময় তিনি দৈনিক ১২ ঘণ্টা করে পড়াশোনা করেছেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এবারেও নিজের স্বপ্নপূরণ করতে পারেননি লিয়াং। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য সিচুয়ান প্রদেশের নীতিমালা অনুযায়ী যে স্কোর করতে হয়, তার থেকে লিয়াং এর ৩৪ পয়েন্ট কম ছিল বলে জানিয়েছে এএফপি।
"ফলাফল পাওয়ার আগে আমার এক রকম অনুভূতি হচ্ছিল যে এবারও হয়তো আমি ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পর্যাপ্ত স্কোর করতে পারব না। কিন্তু আমি যে সাধারণ কোনোটায়ও ভর্তি হতে পারবো না, তা ভাবতে পারিনি", বলেন লিয়াং শি।
গত ৪০ বছর ধরে চেষ্টা এবং বারবার ব্যর্থতার পর লিয়াং নিজেই এখন নিশ্চিত নন যে তিনি আগামীতে আবারও এই পরীক্ষা দেবেন কিনা। "আমি ঠিক বলতে পারছি না আমি আবারও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবো কিনা", এএফপিকে বলেন তিনি।