১৫০ বছরে সমাধান হল দাবার রানির প্যাঁচ
১৫০ বছর পর অবশেষে অঙ্কের খাতায় দাবার রানির প্যাঁচ সমাধান হল। এমনটাই দাবি করেছেন হার্ভার্ডের এক গণিতজ্ঞ।
সাধারণত দাবা খেলা শুরুর অন্যতম জনপ্রিয় পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত 'কুইনস গ্যাম্বিট'। এই পদ্ধতিতে সাদা গুটির রানির ঠিক সামনের বোর্ডে সৈন্যকে (পন) দুই ঘর (ডি-৪) এগিয়ে দেওয়া হয়। কালো গুটির ক্ষেত্রেও একইভাবে তার রানির সামনের সৈন্যকে দুই ঘর (ডি-৫) এগিয়ে দেয়। দ্বিতীয় চালে সাদা গজ (বিশপ)-এর সামনের সৈন্যকে দুই ঘর (সি-৪) এগিয়ে দেয়। স্বভাবতই কালোর সৈন্য বা পন সি-৪-কে খেয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু এতে দাবা বোর্ডের কেন্দ্র বা মধ্যবর্তী অংশ কালোর কাছে সম্পূর্ণ অরক্ষিত হয়ে পড়ে। ডি-৪, ডি-৫, সি-৪— এই পদ্ধতি দাবার ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন এবং জনপ্রিয়। বিশ্বে এটিই পরিচিত 'কুইনস গ্যাম্বিট' নামে।
একই নামে রয়েছে একটি উপন্যাসও। তা সম্প্রতি 'ওয়েব সিরিজ' হিসেবে পেয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
প্রশ্ন ছিল, ৬৪ খোপের দাবার বোর্ডে ৮টি পরস্পর বিরোধী রানি (কুইন) একে অপরকে আক্রমণ না করেও কত ঘর এগোতে পারবে। ১৮৪৮ সালে জার্মানির একটি দাবা সংক্রান্ত পত্রিকায় এ প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। এর উত্তর মিলেছিল দুই বছর পর। জানা যায়, মোট ৯২টি চাল এমনভাবে দেওয়া সম্ভব, যেখানে ৮টি রানির একটিও অপরকে আক্রমণ করবে না। তবে, ১৮৬৯ সালে এই সমস্যারই আরও জটিলতম রূপ আবির্ভূত হয়। সমস্যাটি হল, ধরে নেওয়া যাক, ১ হাজার সারির একটি দাবার বোর্ডে প্রত্যেক সারিতে ১ হাজার খোপ আছে এবং রানির সংখ্যাও ১ হাজার। তাহলে সেখানে এমন কতগুলো চাল দেওয়া যাবে, যেখানে একটি রানিও অপরকে আক্রমণ করবে না? ১ হাজারের জায়গায় ১০ হাজার, কিংবা ১০ লাখ হলেই বা কী হবে?
দেড়শো বছরেও মিলছিল না এ প্রশ্নের উত্তর। কিন্তু সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সেন্টার অব ম্যাথেমেটিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন'-এর গণিতজ্ঞ মাইকেল সিমকিন এর 'প্রায় সঠিক' একটি সমাধান নিয়ে হাজির হয়েছেন।
তিনি বলছেন, একটি অসীম দাবা বোর্ডে (যেখানে ৬৪-এর বদলে খোপের সংখ্যা অসীম) প্রায় (০.১৪৩এন)^এন (এন অর্থাৎ রানির সংখ্যা) উপায় রয়েছে, যেখানে কোনো রানিই একে অপরকে আক্রমণ করবে না। এই সূত্রের আলোকে খোপ এবং রানির সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বাড়লেও সমাধান করা সম্ভব। জানা গেছে, গণিতজ্ঞ সিমকিনের এই ধাঁধার সমাধান করতে সময় লেগেছে প্রায় পাঁচ বছর।
- সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা