আদমশুমারির প্রস্তাবিত বাজেট থেকে কমানো হলো ১৭৩৮ কোটি টাকা
পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে ২০২১ সালের আদমশুমারির জন্য প্রস্তাবিত বাজেট দুই দফায় ১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা কমিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
শুমারির জন্য পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রথমে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বাজেটের প্রস্তাব দেয়। তবে প্রস্তাবিত এই বাজেট পর্যালোচনা করতে গিয়ে পরিকল্পনা কমিশন কিছু জায়গায় ‘অযৌক্তিক ব্যয়ের’ বিষয়টি ‘খুঁজে পায়’।
পরিকল্পনা কমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী পরিসংখ্যান ব্যুরো এই বাজেট কমিয়ে ২ হাজার ২২৫ কোটি টাকায় নির্ধারণ করে। তবে এতেও কমিশন সন্তুষ্ট না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় বাজেট কমিয়ে এই অংক ১ হাজার ৭৬২ কোটি টাকায় এসে ঠেকে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলেন, ২০১১ সালের আদমশুমারিতে ব্যয় হয়েছিল ২৩৭ কোটি টাকা। আর দশ বছরের ব্যবধানে ২০২১ সালের আদমশুমারির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে এর প্রায় ১৫ গুণ।
এরপর প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিকের বরাদ্দের পরিমাণ যাচাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করে পরিকল্পনা কমিশন। কমিটির দেয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আরও একবার উন্নয়ন প্রস্তাবনাটি নতুন করে সাজায় পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রকল্প প্রস্তাবনাটি অনুমোদনের জন্য আগামী মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরে একনেক ভবনে অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংশোধিত প্রস্তাবনা নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর আদমশুমারি বিভাগের পরিচালক জাহিদুল হক সরদারকে জিজ্ঞেস করা হলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, “দুইটি ধাপে প্রকল্প প্রস্তাবনার কয়েকটি ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে জরিপ পরিচালনার মাঠকর্মী ও সুপারভাইজারের সম্মানী আগে ১১ হাজার করে ধরা হয়েছিল, সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ কমিয়ে ৮ হাজার করা হয়েছে।”
তবে তিনি বলছেন, এখনও বেশ কয়েকটি খাতে খরচ বেড়ে যাবার সম্ভাবনা আছে।
এর আগে গত ১১ জুলাই জাহিদুল প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলেছিলেন, দশ বছর পর আদমশুমারি হচ্ছে, আর এজন্য সুপারভাইজার এবং মাঠকর্মীর সংখ্যাও বাড়ানোর দরকার।
সূত্র বলছে, বাজেট প্রস্তাবনায় বিভিন্ন জেলায় প্রাথমিক ট্রেনিং এর জন্য ৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। নতুন প্রস্তাবনায় এ খাতে বরাদ্দ ১৮ কোটিতে কমিয়ে আনা হয়। বিজ্ঞাপনের জন্য বরাদ্দ ৭৩ কোটি থেকে কমিয়ে ২৬ কোটিতে আনা দেয়।
কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৮৮ কোটি টাকা। এই বরাদ্দ কমিয়ে আনা হয় ১৪৭ কোটিতে। প্রকাশনা ও বাঁধাইয়ের জন্য প্রস্তাবিত ৩৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব কমিয়ে আনা হয় ১৩৯ কোটিতে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান বেশ কয়েকটি খাতে ‘অযৌক্তিক ব্যয়’ সংশোধন করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
সংশোধিত প্রস্তাবনায় ১১৪ কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠাতে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নতুন প্রস্তাবনায় জরিপের জন্য মোট ৯৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কমিশনের কর্মকর্তারা জানালেন, প্রস্তাবিত বাজেটের ১ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় খাত থেকে এবং বাকি ১৮৩ কোটি টাকা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করার প্রস্তাব করেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো।
জানা গেছে, এজন্য বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহের কাজটির সমন্বয় করছে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর প্রথম আদমশুমারি হয় ১৯৭৪ সালে।
এরপর দ্বিতীয় আদমশুমারী গননা হয় ১৯৮১ সালে। তারপর একে একে ১৯৯১, ২০০১ এবং ২০১১ সালে যথাক্রমে তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম আদমশুমারী হয়।