আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও চট্টগ্রামের শীর্ষ ঋণ খেলাপীদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থ পুলিশ
চলতি বছরের ঋণ খেলাপির দায়ে ১ হাজার ৪০০টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত। তবে এই আসামিদের অধিকাংশকেই গ্রেপ্তার করতে 'পারেনি' পুলিশ। ফলে আদালতে তৈরি হয়েছে মামলাজট, ব্যাহত হয়েছে বিশেষ এ আদালত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যও।
পুলিশ অবশ্য দাবি করছে, আসামিদের খোঁজাখুঁজি করেও আসামিদের সন্ধান মিলছে না।
চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের এক পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে এ বিষয়গুলো। গতকাল সোমবার (১ নভেম্বর) আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান জেলার শীর্ষ ঋণ খেলাপিদের গ্রেপ্তারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে আবারও বিশেষ নির্দেশনা দেন।
নির্দেশনায় বলা হয়, 'ঋণ খেলাপি বা আদায় কার্যকর করার লক্ষ্যে ২০০৩ সালে বিশেষ আদালত হিসেবে অর্থঋণ আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু আদালতের পর্যবেক্ষণে এসেছে, শীর্ষ ঋণখেলাপীদের বিরুদ্ধে এই আদালত থেকে ইস্যুকৃত গ্রেপ্তারি পরোয়ানাগুলো যথাসময়ে তামিল হচ্ছে না। এ কারণে দায়েরকৃত মামলা যথা সময়ে নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। একই সঙ্গে আদালতের গুরুত্বপূর্ণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।'
'ঋণ খেলাপিদের গ্রেফতার না করায় বিশেষ আদালত প্রতিষ্ঠার উদ্দ্যেশ্য পূরণ হচ্ছে না। তাই এই আদালত থেকে ইস্যুকৃত চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন থানাগুলোতে পেন্ডিং থাকা ওয়ারেন্টসমূহ তামিল নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ প্রদান করা গেল। অর্থঋণ আদালত আইনের ৩৫ ধারার কর্তৃত্ব বলে এই আদেশ প্রদান করছে।'
চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ মাসে আদালত এক হাজার ৩৭৩টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এসব পরোনার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশকে ঋণ খেলাপিদের গ্রেপ্তার করতে বলা হয়। কিন্তু এসব পরোয়ানার প্রায় ৮০ শতাংশের ক্ষেত্রেই পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করেনি।
এই ব্যর্থতার কারণ ব্যাখ্যা করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'অর্থঋণ আদালতের আসামিরা তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি আগেই জেনে যায়। ফলে পুলিশ অভিযান পরিচালনার আগেই তারা পালিয়ে যান। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে আসামিদের যেসব ঠিকানা সরবরাহ করা হয়, তাতে ভুল থাকে।'
'সিআর (কোর্ট রেজিস্টার্ড) মামলায় আসামি গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পুলিশ বিভিন্ন ধরনের চাপের মুখোমুখি হয়'- বলেও অভিযোগ করেন পুলিশ কমিশনার।
ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনায় ব্যাংকও উদাসীন:
২০০৮ সালে পূবালী ব্যাংকের সিডিএ শাখা চট্টগ্রাম ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সাজিল স্টিল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ২৩ লাখ ১৫ হাজার ২৮৭ টাকা ঋণ খেলাপির অভিযোগে মামলা দায়ের করে। ২০০৯ সালের ১২ মে আদালত ৬০ দিনের মধ্যে এ অর্থ পরিশোধে আসামিদের নির্দেশ দেয়। অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে চলতি বছরের ৩ মে এই মামলার সর্বশেষ শুনানীতে কোম্পানিটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেন আদালত।
অথচ ১৫ সেপ্টেম্বর পূবালী ব্যাংক লিমিডেটের এর বোর্ড অব ডিরেক্টরস তাদের ১৩০তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাজিল স্টিল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের সুদ মওকুফ করে ৭ শতাংশ সরল সুদে ৭ বছরে ২৩টি ত্রৈমাসিক কিস্তিতে ৮ কোটি ৭২ লাখ ১ হাজার ৯২ টাকা পরিশোধের সুযোগ দেয়।
যদিও, অর্থঋণ আদালত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছেন, আসামির বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি অবস্থায় সুদ মওকুফের কোনো সুযোগ ব্যাংকের নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংককে নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে আদালত বলেন, 'খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোর এরকম নমনীয়তা এবং উদাসীনতা ব্যাংকিং খাতকে নাজুক অবস্হায় নিয়ে গেছে। জাতীয় অর্থনীতির ভিত্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি আরো বাড়ানো প্রয়োজন।'