জুলাই আন্দোলনে ‘চিকিৎসা না দেওয়ায়’ গুলিবিদ্ধ রিকশাচালকের মৃত্যুর ঘটনায় পাঁচজন কারাগারে
জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর রামপুরায় ডেলটা হেলথ কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা না দেওয়ায় গুলিবিদ্ধ এক রিকশাচালকের মৃত্যুর অভিযোগে পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গতকাল (১৮ জানুয়ারি) তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—ডেলটা হেলথ কেয়ারের মেডিকেল অফিসার ডা. সাদী বিন শামস, হাসপাতালের মার্কেটিং অফিসার হাসান মিয়া, মেইনটেন্যান্স কর্মী বোরহান উদ্দিন এবং নিরাপত্তা প্রহরী ইসমাইল ও নজিম উদ্দিন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রামপুরায় পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে ডেলটা হেলথ কেয়ারের সিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছান রিকশাচালক ইসমাইল। কিন্তু হাসপাতালের ভেতর থেকে তাকে সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি।
এ ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে শুক্রবার রাতে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। তবে সেদিন তাদের আদালতে হাজির না করে কারাগারে পাঠানো হয় বলে জানান আইনজীবী।
মৃত ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই গ্রেপ্তারের ঘটনায় চিকিৎসক কমিউনিটির মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ডেলটা হেলথ কেয়ারের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এক বিবৃতিতে হাসপাতালের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন।
শনিবার এক প্রেস রিলিজে ১৯ জুলাইয়ের ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনা করে তিনি বলেন, 'বিকাল আনুমানিক ৪টা ৩০-এর সময়ে হঠাৎ করে আমাদের হাসপাতালের সামনে গোলাগুলি শুরু হলে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাথার খুলি উড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ডেলটা হেলথ কেয়ারের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ ঝুঁকি নিয়ে উক্ত গুলিবিদ্ধ লোককে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসতে চেষ্টা করেন, যার ভিডিও আমাদের রয়েছে।'
ডা. সাইফুল আরও বলেন, 'তখন রাস্তায় গুলিবর্ষণকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ডেলটা হেলথ কেয়ার, রামপুরা লিমিটেড-এর উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করলে তৎক্ষণাৎ ডিউটিরত চিকিৎসকের পাঞ্জাবি ভেদ করে গুলি হাসপাতালের দেওয়ালে লেগে যায়, যার চিহ্ন এখনও বিদ্যমান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের অস্ত্র তাক করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মরদেহটি সরিয়ে নেয়।'
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা হাতিরঝিল থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকৃতি জানায়। 'পরবর্তীতে আন্দোলনকারীরা মৃতদেহটি নিয়ে যায়। আমরা থানায় এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ জানালে থানা সেটি গ্রহণ করে নাই।'
ডা. সাইফুল আরও বলেন, গত জুলাই-আগষ্ট আন্দোলনের সময় রামপুরা এলাকা আন্দোলনকারীদের অন্যতম উত্তপ্ত স্থান হিসেবে চিহ্নিত ছিল। 'এখানে যত আন্দোলন হয়েছে, সকল আন্দোলনের আহতদের ডেলটা হেলথ কেয়ার অবিরত ফ্রি চিকিৎসাসেবা দিয়ে গেছে। আমরা যারা সেবা দিয়েছি, মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে রাজপথে থেকে আন্দোলনকে সফল করেছি, তাদেরকেই আজকে হয়রানি ও মামলা হামলার শিকার হতে হচ্ছে। আসল খুনিদের না ধরে এবং হত্যাকারীদের অনুসন্ধানে ব্যর্থ হয়ে ঘটনার ৫ মাস পর নিরীহ মানুষকে আসামি করে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও হাতাশাজনক।'
চিকিৎসক নেতারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন।
বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের প্রশাসক ডা. নিরুপম দাস টিবিএসকে বলেন, 'যেকোনো মৃত্যু দুঃখজনক। একজন রিকশাচালক এই ঘটনায় শহীদ হয়েছেন বলে আমরা বিভিন্ন খবরে পড়েছি। তবে ঘটনাক্রমে কোনোভাবেই চিকিৎসক বা নার্সকে দোষী মনে হচ্ছে না। চিকিৎসক বা নার্স গ্রেপ্তারের ঘটনায় আমরা সুষ্ঠু তদন্ত চাই। আমরা আশা করব, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল ঘটনা প্রকাশ পাবে, দোষী ব্যক্তিদের বিচার হবে।'