ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ সংক্রান্ত বিশেষ সুবিধা হাইকোর্টে বহাল
ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া সিদ্ধান্তের ওপর হস্তক্ষেপ করেনি আদালত।
হাইকোর্ট বলেছেন, বিশেষ সুবিধা সংক্রান্ত ওই সার্কুলারের মেয়াদ আরো ৯০ দিন বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বলা হয়েছে। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ দীর্ঘ শুনানি নিয়ে রবিবার এ রায় দেন।
রায়ে ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম ও দুরাবস্থা নিরসনে নয় সদস্যের কমিটি গঠন করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা হয়েছে। ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে বিশেষজ্ঞদের এই কমিটিতে রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকের এমডি থেকে সর্বনিম্ন পাচ পদে নিয়োগের বিষয়টিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
আদালত বলেছে, আমরা মনে করি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুদের হার ডাবল ডিজিট থেকে সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা উচিত।
এদিকে এই মামলার শুনানিতে ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ-সংক্রান্ত বিশেষ সুবিধা বহাল রাখার পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি হলফনামা হাইকোর্টে দাখিল করে। ঐ হলফনামায় বলা হয়, খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করা না হলে ঋণগ্রহীতাদের শিল্প, কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। কর্মচারীরা বেকার হয়ে পড়বে। হ্রাস পাবে দেশের উত্পাদন এবং অচল হবে অর্থনীতির চাকা। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতেই বাংলাদেশ ব্যাংক জনস্বার্থে বিশেষ সুবিধা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
এছাড়া অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দেশের বাণিজ্য খাতে, বিশেষ করে জাহাজভাঙা শিল্পে যারা বিনিয়োগ করেছেন, তাদের অধিকাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছেন। যার ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ঋণখেলাপির সংখ্যা বেড়ে গেছে। এতে আরো বলা হয়, অনিচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি বা অনিবার্য কারণে যারা ঋণ খেলাপি হয়েছেন তাদেরকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। স্বেচ্ছা ঋণখেলাপিরা কোনো সুবিধা পাবে না দাবি করে হলফনামায় বলা হয়, ‘ভুল’ ব্যক্তিকে সুবিধা দিয়ে ঐ বিজ্ঞপ্তির অপব্যবহারের কোনো সুযোগ এখানে নেই।
এছাড়া ঋণখেলাপি এবং নিয়মিতভাবে ঋণ পরিশোধকারীদের মধ্যে এ প্রজ্ঞাপন কোনো বৈষম্য সৃষ্টি করবে না। এসব বিচেনায় অর্থ মন্ত্রণালয় গত বছরের ২০ জুন ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করে। ঐ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে এ প্রজ্ঞাপন জারি করে। ফলে জনস্বার্থ বিবেচনায় এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করার কোনো এখতিয়ার রিটকারী পক্ষের নেই।
ব্যাংক খাতে অর্থ আত্মসাত, ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম, সুদ মওকুফ সংক্রান্ত বিষয় তদন্ত ও সুপারিশ প্রণয়নে কমিশন গঠনের দাবি করে গত বছরের ২৩ জুন অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ৫ জনকে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের জবাব না পেয়ে হাইকোর্টে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে রিট করেন আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট তিন দফা নির্দেশনা দিয়ে রুল জারি করে। ঐ রুলের শুনানিকালে গত ১৬ মে ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতে বলা হয়, ঋণ খেলাপিরা মাত্র দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়েই ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন। পুনঃতফসিল হওয়া ঋণ পরিশোধে তারা সময় পাবেন টানা দশ বছর। এক্ষেত্রে প্রথম এক বছর কোনো কিস্তি দিতে হবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই প্রজ্ঞাপনের কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে সম্পূরক আবেদন করেন রিটকারী। গত ২১ মে হাইকোর্ট ঐ প্রজ্ঞাপনের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করে। এই স্থিতাবস্থার আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ৮ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ দুই মাসের জন্য স্থগিত করে রুল শুনানির জন্য পক্ষগণকে নির্দেশ দেয়। ঐ নির্দেশের পরই হাইকোর্ট মামলাটির শুনানি নিয়ে এ রায় দেয়।