এক ব্যক্তির কোম্পানির জন্য কর কমিয়ে ২৫% হবে
এক ব্যক্তির কোম্পানির (ওপিসি) ক্ষেত্রে বিশেষ কর ছাড়ের সুবিধা দিতে যাচ্ছে সরকার। ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য আসন্ন জাতীয় বাজেটে এ কর কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হবে।
কোম্পানি আইন অনুযায়ী অতালিকাভুক্ত প্রাইভেট কোম্পানিগুলো গড়ে ওঠায় বর্তমানে এ ধরনের কোম্পানির জন্য করের হার ৩২.৫ শতাংশ।
এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা, পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও নতুন স্টার্টআপের আরও বেশি সংখ্যক উদ্যোক্তা আকর্ষণে পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম পরিমাণ ২৫ লাখ টাকার আবশ্যিক শর্ত শিথিল করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
অন্যথায়, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আনুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতে অঙ্গীভূতকরণে এই কর ছাড়ের সুবিধা প্রভাব রাখতে পারবে না বলে জানিয়েছেন তারা।
পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ এব্যাপারে বলেন, "বাংলাদেশে করপোরেট করের হার অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। ওপিসি'র ক্ষেত্রে কর কমানোর জন্য সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসাজনক,"
"আমাদের অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির আকার বিশাল, কিন্তু এই খাতকে আনুষ্ঠানিক খাতে রূপান্তর করতে না পারায় আমরা এর সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কর কমানোর এ উদ্যোগ ছোট কোম্পানিগুলোর আনুষ্ঠানিক খাতে প্রবেশের পথ সহজ করবে।"
তবে পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম পরিমাণের বিধান ওপিসি'র উদ্দীপনা ও উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের সাবেক এই অর্থনীতিবিদ।
২০২০ সালে কোম্পানি আইন সংশোধনের মাধ্যমে দেশে এক ব্যক্তির কোম্পানি (ওপিসি) খোলার সুযোগ তৈরি হয়, এ প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি এব্যাপারে বলেন, উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ানো, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ট্রেড লাইসেন্স ভিত্তিক অনানুষ্ঠানিক বা আধা-আনুষ্ঠানিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধিই ২০২০ সালে কোম্পানি আইন সংশোধনের মূল লক্ষ্য ছিল।
তবে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ২৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া মৌলিক ভুল ছিল, কারণ ছোট ব্যবসা বা স্টার্টআপের ক্ষেত্রে এ পরিমাণ অর্থ যোগাড় সহজ কাজ নয়।
অন্যদিকে, বড় কোম্পানিগুলোর ওপিসি খোলার ক্ষেত্রে কোনও বাধ্যবাধকতা নেই বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, এর ফলে এই আইনের মর্ম একেবারে উল্টে গেছে। বড় কোম্পানিরগুলোর জন্য নয়, বরং ছোট কোম্পানির জন্য আইনের বিধান সহজ হওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উদাহরণস্বরূপ, ইউনিলিভারের মতো বড় কোম্পানিগুলো ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়েই নতুন কোম্পানি খুলতে পারবে। কিন্তু নতুন স্টার্টআপের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী প্রয়োজন হবে ন্যূনতম ২৫ লাখ টাকা। এ ব্যাপারটিই ছোট কোম্পানি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ওপিসি উদ্যোক্তাদেরই ন্যূনতম মূলধনের পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিৎ, তারা নিজেদের ব্যবসার প্রকৃতি ও কৌশল বিবেচনায় রেখে এ পরিমাণ নির্ধারণ করবেন।
ব্যাংকিং এর মতো কিছু খাতে নতুন উদ্যোগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিধান রয়েছে, তবে তা জরুরি বলে জানান মাশরুর রিয়াজ।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, "আমি মনে করি, একজন ব্যক্তির জন্য এ করের হার সর্বোচ্চ হওয়ার কারণেই ওপিসি'র ক্ষেত্রে করপোরেট করের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
অন্যান্য করের হারও শিথিল করা উচিৎ এবং তালিকাভুক্ত বা অতালিকাভুক্ত যে কোনো কোম্পানির করের হারই ২৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিৎ নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর এক ব্যক্তির মালিকানাধীন কোম্পানি খোলার সুযোগ রেখে সংসদে 'কোম্পানি (দ্বিতীয় সংশোধন) বিল- ২০২০' পাস হয়।
বিনিয়োগ আকর্ষণে, ইজ-অব-ডুয়িং-বিজনেস সূচকে উন্নতির লক্ষ্যে ও অনানুষ্ঠানিক ব্যবসা খাতকে আনুষ্ঠানিক খাতে অঙ্গীভূতকরণের লক্ষ্যে এ সংশোধনী আনা হয়।
বর্তমানে অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমেই একজন ব্যক্তি ওপিসি খুলতে পারবেন।
বিল অনুযায়ী, এক ব্যক্তি কোম্পানির পরিশোধিত শেয়ার মূলধন হবে অন্যূন ২৫ লাখ টাকা এবং অনধিক ৫ কোটি টাকা।
এ ধরনের কোম্পানির ক্ষেত্রে অব্যবহিত পূর্ববর্তী অর্থবছরের বার্ষিক টার্নওভার ১ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা হতে হবে।
পরিশোধিত শেয়ার মূলধন এবং বার্ষিক টার্নওভার এর বেশি হলে শর্তপূরণ সাপেক্ষে এক ব্যক্তির কোম্পানিকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বা ক্ষেত্র বিশেষে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা যাবে।
এক ব্যক্তির কোম্পানিকে বছরে কমপক্ষে একটি পরিচালক সভার আয়োজন করতে হবে।
কোম্পানির পরিচালক এবং প্রধান ব্যক্তি একজন হলে এ ধরনের কোম্পানি পর্ষদ সভা করা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার নিয়মের ক্ষেত্রে ছাড় পাবে।
একমাত্র সদস্য মারা গেলে তার মনোনীত ব্যক্তি সকল শেয়ারের অধিকারী হবে বলে আইনে বলা হয়েছে।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় বহু বছর ধরেই ওপিসি'র ধারণা আইনিভাবে স্বীকৃত।
বেশিরভাগ দেশেই এক্ষেত্রে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের কোনো বিধান নেই। ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে এ পরিমাণ এক লাখ রূপি।
যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয় (আরজেএসসি) গত মার্চে ওপিসির অনলাইন নিবন্ধনের শুরু করতে সফটওয়্যার তৈরির কাজ শুরু করে, তবে মহামারির কারণে এ প্রক্রিয়া থমকে আছে।