এক সময়ের লাভজনক রাজশাহী টেক্সটাইল মিল এখন চলছে ভাড়ায়
উত্তরাঞ্চলের তাঁতীদের সুতার চাহিদা মেটানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে চালু হওয়া রাজশাহী টেক্সটাইল মিলের নিজস্ব উৎপাদন নেই। টেক্সটাইল মিলের কারখানা, গোডাউন, আবাসিক কোয়ার্টার, পুকুর ও ভবন ভাড়া দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে।
এভাবে প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা আয় করছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, অনেক দিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় কারখানা ও গোডাউন, অফিস ভবন সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কারখানায় স্থাপিত মেশিনের বেশিরভাগই এখন বিকল।
প্রতি মাসে ১১টি গোডাউন থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার ও বাসাবাড়ি থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ভাড়া পায় বলে জানায় টেক্সটাইল মিল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া কারখানা ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে আয় ৭৭ হাজার টাকা।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), স্বপ্ন কনফেকশনারী, অ্যাগ্রোলিংক বিডি, রাইট অ্যাগ্রো, বন্ধু ডিস্ট্রিবিউটরসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দেওয়া রয়েছে টেক্সটাইল মিলের গোডাউন ও ভবন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীর নওদাপাড়ায় ২৫.৯৮ একর জায়গার ওপর ১৯৭৪ সালে স্থাপিত মিলটি উৎপাদনে যায় ১৯৭৯ সালে। ১৯৭৮ সালে ভারত থেকে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে যন্ত্রপাতি কিনে কারখানা স্থাপন করা হয়েছিল।বর্তমানে এসব যন্ত্রপাতির বাজারমূল্য ৩ কোটি ৬২ লাখ ৩১ হাজার টাকা।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত চলার পর গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে ১৫০০ জন শ্রমিককে বিদায় করে দিয়ে ২০০৩ সালের ৩০ জুন মিলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ২০০৪ সালের আগস্ট থেকে এটি সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে দৈনিক মজুরিতে সার্ভিস চার্জ পদ্ধতিতে চালু করা হয়।
২০০৮ সালের নভেম্বরে মিলটি আবার বন্ধ হয়ে যায়। এক বছর পর পুনরায় চালু হয়ে ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবরে আবারও বন্ধ হয়ে যায় রাজশাহী টেক্সটাইল মিল। সেবারও কারখানা সচল ছিল ওই সার্ভিস চার্জ পদ্ধতিতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, ২০১৭ সালের পর থেকে কারখানা পুরোপুরি ভাড়া দিয়ে চলছে। টেন্ডারের মাধ্যমে তিন বছরের জন্য কারখানাটি ভাড়া দেওয়া হয়। প্রথম দফার মেয়াদ ছিল চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত। বর্তমানে ভাড়া দেওয়ার দ্বিতীয় দফার টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে আগামি বছরের শুরু থেকে কারখানাটি পুনরায় ভাড়ার ভিত্তিতে চালু হবে।
প্রথম দফায় মাসিক ৭৭ হাজার টাকায় নারায়ণগঞ্জের মোবারক ট্রেডার্স কারাখানাটি ভাড়া নিয়েছিল। কারখানা থেকে সুতা উৎপাদন করে নারায়ণগঞ্জে সুতা বিক্রি করা হতো।
ভাড়া দেওয়া হলেও কারখানাটি যারা ব্যবহার করছেন, তারা ৪৭টি মেশিনারিজের মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ ব্যবহার করেন। বাকি ৬০ শতাংশ মেশিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
টেক্সটাইল মিল কর্তৃপক্ষ জানায়, নিম্নমানের ভারতীয় মেশিন হওয়ায় চালুর ৪২ বছরের মধ্যে মাত্র দুই বছর, শুধু ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালেই মিলটি মুনাফা অর্জন করেছে।
ভাড়া দিয়ে সাড়ে চার লাখ টাকা আয় করলেও এখন পর্যন্ত মিলটির ঋণ রয়েছে ১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের সারচার্জ ২৯ লাখ টাকা, সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, স্বেচ্ছাবসর গ্রহণকারী স্থায়ী শ্রমিকদের মেডিকেল ভাতা বাবদ বকেয়া সাড়ে ১২ লাখ টাকা, দীর্ঘমেয়াদী ঋণের পরিমাণ ৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, বকেয়া ওয়ার হাউস লাইসেন্স ফি বাবদ সোয়া লাখ টাকার টার্নওভার ট্যাক্স দুই লাখ টাকা।
রাজশাহী টেক্সটাইল মিলের ব্যবস্থাপক (কারিগরি) ও মিল ইনচার্জ রবিউল করিম জানান, বর্তমানে মিলটির দেখাশোনার জন্য ৫ জন স্থায়ী ও ১৫ জন অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।
'সেদিক থেকে বন্ধ মিলে মাসে সাড়ে চার লাখ টাকা আয় লাভজনকই বলব। কারণ ভবনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। তবে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে মিলটি দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কারণ সরকারি অর্থায়নে বা যৌথ মালিকানায় নতুন আধুনিক মেশিনারিজ স্থাপন করা গেলে অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের মানুষদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব এবং মিলটিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানেও পরিণত করা সম্ভব হবে,' বলেন তিনি।