এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশ থেকে ২৬শ’ কোটি ডলার প্রত্যাহার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের
করোনাভাইরাস সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মাঝে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আনুমানিক ২৬শ কোটি ডলারের তহবিল প্রত্যাহার করেছে। কোভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক প্রভাব নিরূপণে, মার্কিন কংগ্রেসের সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রত্যাহার করা বিনিয়োগের সিংহভাগ হয়েছে ভারতে। প্রতিবেশী দেশটি থেকে ১৬শ কোটি ডলার সরিয়ে নিয়েছে বিদেশিরা। এর ফলে এশিয়ার এসব দেশে বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দা আশঙ্কা করছে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্বতন্ত্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান-সিআরএস।
বিনিয়োগ সরে যাওয়ার আরেক বড় কারণ, ধনী দেশগুলোর নিজস্ব সঙ্কট। খবর এনডিটিভির।
সংস্থাটি জানায়, ইউরোপের নানা ধনী দেশ; জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, স্পেন এবং ইতালিতে এখন ৩ কোটির বেশি নাগরিক রাষ্ট্রীয় সহায়তার জন্য আবেদন করেছেন। কর্মসংস্থান হারানোর কারণেই তারা এখন বেকারভাতা চাইছেন।
ইউরো জোনের প্রথম প্রান্তিকের অর্থনৈতিক উপাত্তেও দেখা যাচ্ছে তীব্র নেতিবাচক চিত্র। আলোচিত সময়ে ইউরো জোনের অর্থনীতি ৩ দশমিক ৮ শতাংশের বড় রকমের সংকোচনে পড়েছে। ১৯৯৫ সালে ইউরো জোনের প্রান্তিক হিসাব শুরু হওয়ার পর থেকে, এটাই সর্ববৃহৎ মন্দার রেকর্ড।
আটলান্টিকের অপর পারে বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থাও স্থিতিশীল নয়। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি ৪ দশমিক ৮ শতাংশের বড় সংকোচনের মুখে পড়ে। ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দাকালীন সময়ের চতুর্থ প্রান্তিকের পর, কোনো একক প্রান্তিকে জিডিপিতে সবচেয়ে বড় পতনের ঘটনা এটাই।
সার্বিক চ্যালেঞ্জ যে বহুমুখী, সেটাই উঠে আসে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে।
সিআরএস প্রতিবেদনে বলা হয়, চলমান বৈশ্বিক মহামারিজনিত সঙ্কটের মাঝে বিশ্বের প্রায় সকল দেশের সরকার মুদ্রানীতি এবং বার্ষিক বরাদ্দের নানা নীতি নিয়ে এখন তীব্র চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে ঋণ বাজারকে সমর্থন দেওয়াসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বাড়তি প্রণোদনা দিতে চাইছে তারা। একইসঙ্গে, করোনার টিকা আবিষ্কার এবং জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেও বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।
তবে এসব চেষ্টার মধ্যেই বিপরীতমুখী জাতীয় স্বার্থের দ্বন্দ্বে নানা দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমন উত্তেজনা ঘি ঢালছে ক্রমবর্ধমান উগ্র জাতীয়তাবাদি চেতনায়।
জাতীয়তাবাদের বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকছেনা করোনা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তার পক্ষের নানা ব্যক্তিত্ব এবং সংস্থাও। তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা এবং অপপ্রচারের মাধ্যমে আক্রমণ চলছে।
এছাড়াও, অর্থনৈতিক নীতি এবং জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া নিয়ে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের সম্পর্কেও প্রভাব পড়ছে। ইউরো জোনে এই প্রভাব খুবই স্পষ্ট। অভিন্ন মুদ্রা ও অর্থনীতির ওই অঞ্চলের উত্তর এবং দক্ষিণ অংশের দেশগুলোর এই বিভেদ, আগামীদিনে জোটটির বিশ্ব নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।